ঢাকায় মাদকস্পটে অভিযান: আয়োজন বড়, ফল ছোট

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ধলপুর সিটি পল্লীতে সোমবার সকাল থেকেই পুলিশের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। ডগ স্কোয়াড হাজির হওয়ার পর পুরো এলাকায় মুহূর্তেই ছড়িয়ে গেল যুদ্ধের আমেজ।

স্থানীয় বাসিন্দারা এমন ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন দিনের শুরুতেই। ওই পরিস্থিতিতে পুরো এলাকা ঘেরাও করে শুরু হয় মাদকবিরোধী অভিযান।

দেশব্যাপী চলমান বিশেষ অভিযানের অংশ হিসেবে ধলপুরের সিটি পল্লীতে সোমবার হানা দেয় পুলিশ। যদিও ঢাকার চিহ্নিত এই স্পটে অভিযান চালিয়ে শীর্ষ কোনো মাদক ব্যবসায়ীর নাগাল মেলেনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশের সঙ্গে গোয়েন্দা, স্পেশাল আর্মড ফোর্সের সদস্যরা ডগ স্কোয়াড নিয়ে সম্মিলিতভাবে এ অভিযান চালায়।  সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ৫৬ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে ব্যবসায়ীর পাশাপাশি মাদকসেবীও রয়েছে। তবে এদের মধ্যে শীর্ষ বা তালিকাভুক্ত কোনো মাদক ব্যবসায়ী নেই।

একই দিনে মিরপুরের শাহআলী ঝিলপাড় বস্তি এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত ১৯ জন মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীকে।

সিটি পল্লীর অভিযান নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা শাফিন আহমেদ বলেন, এই অভিযানের খবর আগেই এখানে পৌঁছে গেছে। চিহ্নিত ব্যবসায়ীরা খবর পেয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে। এখন এভাবে অভিযান চালিয়ে সুফল মিলবে না।

একই মন্তব্য করলেন ঘটনাস্থলের পাশের একটি দোকানের মালিক। তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বাড়ে রাতে। এখান থেকেই পুরো যাত্রাবাড়ী এলাকায় মাদক সরবরাহ করা হয়। দিনে অভিযান চালিয়ে কাউকে পাওয়া যাবে না।

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার ফরিদ উদ্দিন বলেন, অভিযানের পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেও কাজ করছেন তারা।

সোমবারের অভিযান নিয়ে ডেমরা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতেখাইরুল ইসলাম  বলেন, গ্রেফতারকৃত ৫৬ জনের মধ্যে তিনজন নারী মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। তাদের সবার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হচ্ছে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে আগের মাদকের মামলা রয়েছে। অভিযানে সাড়ে ৬ হাজার পিস ইয়াবা, ৪৫ বোতল ফেনসিডিল, ১০ কেজি গাঁজা ও এক হাজার ৪৫০ পুরিয়া হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ধলপুর সিটি পল্লীর কাগুজে নাম- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্মচারি স্টাফ কোয়ার্টার। এখানে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা থাকেন। এটি ঢাকার চিহ্নিত মাদকের স্পট।

অভিযানে আটককৃতদের মধ্যে কয়েকজনকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন তাদের স্বজনরা। ফুলমতি নামের এক নারী অভিযোগ করেছেন, তার ছেলে হারুন নির্দোষ। তবু তাকে পুলিশ নিয়ে গেছে। হেনা বেগম নামে এক নারী তার ছেলে সোহেলকেও নির্দোষ দাবি করেন। মরজিনা নামের এক নারী অভিযোগ করেন, তার কর্মজীবী স্বামীকেও পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।

দুপুরে শাহআলী ঝিলপাড় বস্তি ঘেরাও করে ঘুপরি ঘরে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। দুই ঘণ্টার অভিযানে গ্রেফতার করা হয় ১৯ জনকে।

মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কামাল হোসেন জানান, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী শেফালি। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। বাকিদের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। অভিযানে চার কেজি গাঁজা, কিছু ইয়াবা ও হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছে।

এ ছাড়া রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযানকালে ৭১৪৩ পিস ইয়াবা, ৯০০ গ্রাম হেরোইন, প্রায় ৩ কেজি গাঁজা, ৬৩ বোতল ফেনসিডিল, ১৫০০ লিটার দেশি মদ ও ৯০টি নেশাজাতীয় ইনজেকশন উদ্ধার করা হয়।