দ্বি-পক্ষীয় আর্থ-সামাজিক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদো। আজ (শনিবার) বিকেলে দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ইন্দোনেশিয়া থেকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন জোকো।
বিমানবন্দরে ইন্দোনেশিয়ান রাষ্ট্রপতিকে অভ্যর্থনা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও তার স্ত্রী রাশিদা খানম। বিমান থেকে নেমে আসার সময় ২১ বার তোপধ্বনিতে তাদেরকে স্বাগত জানানো হয়। দুটি শিশু ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয় ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান ও ফার্স্ট লেডিকে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ইউন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে মঞ্চে আসার পর দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে সফররত রাষ্ট্রপ্রধান গার্ড পরিদর্শন করেন। গার্ড পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সবার সঙ্গে পরিচিত হন সফররত রাষ্ট্রপতি।
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতির ঢাকা সফরে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুটিও প্রাধান্য পাবে।
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরমানাথা নাছির এক বার্তায় জানান, দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও শক্তিশালী করতে চায় ইন্দোনেশিয়া। এ জন্য দেশটির রাষ্ট্রপতি জানুয়ারির ২৪ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার ৫টি দেশ সফর করছেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বছরের মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাকার্তা সফর করেন। ওই সফরে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দ্বি-পক্ষীয় বৈঠক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এরই ধারাবাহিকতায় ফিরতি সফরে শনিবার ঢাকা এলেন রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদো।
বিমানবন্দর থেকে রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদো চলে যান হোটেল সোনারগাঁওয়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদোর সম্মানে শনিবার রাতে নৈশভোজ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন। সেখানে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের রূপকার বীর সেনাদের প্রতি সম্মান জানাবেন। সাভার থেকে সকাল সাড়ে ৯টায় জোকো উইদোদো যাবেন ধানমন্ডিতে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি যাদুঘরে।
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি ধানমন্ডি থেকে যাবেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদোর সকাল ১০টায় দ্বি-পক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদা রোববার দুপুরে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাবেন। সেখানে তিনি একাধিক শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সরাসরি আলাপ করবেন। ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সফর শেষে সোমবার সকাল ৯টায় আফগানিস্তানের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যাবেন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমর্থনের জন্য সার্বক্ষণিকভাবে জাকার্তার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে ঢাকা। এরই মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের থার্ড কমিটি এবং মানবাধিকার কাউন্সিলে ঢাকার পক্ষে ভোট দিয়েছে জাতার্কা। সামনের দিনগুলোকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশটির আরও সমর্থন পেতে চায় ঢাকা।
বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, সুশাসন, সন্ত্রাস নির্মূল, গবেষণা, প্রযুক্তি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জ্বলানিখাতে দুই দেশের মধ্যে দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে।
ঢাকার ইন্দোনেশীয় দূতাবাস থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি এবং ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির প্রতি দেশটির আগ্রহ রয়েছে। এই বিষয়ে বাংলাদেশের জ্ঞান কাজে লাগাতে চায় দেশটি।