নগরবাসীর কাছে এর আগে কখনো বৃষ্টি এতটা প্রার্থিত ছিল কি না কারও জানা নেই। টানা তীব্র গরমে নাকাল নগরবাসীর বৃষ্টি ছুঁয়ে প্রশান্তির খোঁজার আকুতি যেন শেষ হচ্ছিল না। অবশেষে নগরে ধরা দিল বহু আকাঙ্ক্ষিত সেই বৃষ্টি।
বৃহস্পতিবার (২ মে) রাত ৯টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় বৃষ্টি। গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকায় বৃষ্টির পূর্বাভাস আগেই দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। রাত ৮টা থেকেই মেঘ ডাকতে শুরু করে। বজ্রের ঝলকানিতে আলোকিত হয়ে ওঠে আকাশ। বৃষ্টি যে খুবই কাছে, তা আর বুঝতে বাকি থাকে না গরমক্লিষ্ট এ নগরের মানুষের কাছে। তাই মেঘের ডাক শুনে অনেকের মন আনন্দ নেচে ওঠে। বৃষ্টিতে ভেজার প্রস্তুতি নিতে থাকেন কেউ কেউ।
রাত ৯টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয় হালকা বৃষ্টি। ক্রমেই বাড়তে থাকে বৃষ্টির তীব্রতা। অবশ্য ১৫ মিনিট পর বৃষ্টি অনেকটা থেমেও যায়। কোথাও কোথাও বৃষ্টির সঙ্গে ছিল ঝোড়ো হাওয়া। স্বস্তির বৃষ্টি দেখে অনেকেই উচ্ছ্বাসে ভিজতে নেমে যান।
তবে বৃষ্টি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। রাত সাড়ে ৯টার আগেই থেমে যায় বৃষ্টি। যদিও রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত রাজধানীর অনেক এলাকায় কোনো বৃষ্টি হয়নি বলে জানা গেছে।
পুরো এপ্রিল মাস জুড়ে ছিল তাপপ্রবাহ। ঢাকায় তাপপ্রবাহ শুরু হয় ১১ এপ্রিল। এরপর টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে কেটেছে নগরবাসীর জীবন। এরমধ্যে কয়েক দফা দিনের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে। তীব্র গরমে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের মতো বিপর্যস্ত ছিল রাজধানীবাসীরও।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টি হচ্ছে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেটেও। তবে বৃষ্টির প্রবণতা চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেশি। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কুতুবদিয়ায় সবচেয়ে বেশি ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
রাজশাহী, পাবনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চাঁদপুর জেলাসহ ঢাকা, রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগ এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা দেশের কিছু জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে।
এ সময়ে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমেছে। গত কিছুদিন ধরে বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া অতি তীব্র তাপপ্রবাহ দূর হয়েছে। অর্থাৎ দেশের কোথাও আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি নেই।
বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল চুয়াডাঙ্গায়। এছাড়া রাজশাহী ও ঈশ্বরদীতে ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ তিন জেলায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর বেশি।
ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে কমে হয়েছে ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আগামী কয়েকদিন ঝড়-বৃষ্টি বেড়ে তাপমাত্রা কমতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।