ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত শিশুর উপসর্গ

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

অনেকেই মনে করেন, শিশুরা করোনাভাইরাস থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ। কিন্তু বাস্তব তথ্য হলো, শিশুরাও উল্লেখযোগ্য হারে করোনায় সংক্রমিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান স্পষ্ট একটি প্রমাণ। দেশটিতে চলতি বছরের ১২ আগস্ট পর্যন্ত ৪.৪১ মিলিয়ন শিশুর কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে।

জুলাই থেকে শিশুদের মধ্যে সংক্রমণটি শনাক্তের হার বেড়ে গেছে। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পিডিয়াট্রিক্সের প্রতিবেদন অনুসারে, কেবলমাত্র আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ৯৪,০০০ শিশুর করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে- বেশিরভাগ সংক্রমণই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, আরো অনেক দেশেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের রাজত্ব চলছে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যাকসিন এডুকেশন সেন্টারের ডিরেক্টর ও চিলড্রেন’স হসপিটাল অব ফিলাডেলফিয়ার ডিভিশন অব ইনফেকশাস ডিজিজেসের অ্যাটেন্ডিং ফিজিশিয়ান পল অফিট বলেন, ‘করোনার মূল সংক্রমণ ও অন্যান্য ধরনের চেয়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বেশি সংক্রামক। একারণে শিশুদের মধ্যে বেশি হারে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে।’

সিডিসি বলেছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পূর্বের ধরনগুলোর তুলনায় দুইগুণেরও বেশি সংক্রামক এবং এটা টিকা নেননি এমন লোকদেরকে গুরুতর অসুস্থ করতে পারে। যেহেতু শিশুদেরকে করোনার টিকা দেয়া হচ্ছে না, তাই তারা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উচ্চ ঝুঁকিতে আছে।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত শিশুদের উপসর্গ

 

ইয়েল মেডিসিনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে কাশি ও ঘ্রাণশক্তি হারানোর ঘটনা কম। এই দুটি উপসর্গ ছিল করোনার মূল সংক্রমণের প্রচলিত উপসর্গ। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক লোকদের প্রধান উপসর্গ হলো- মাথাব্যথা, গলা ব্যথা, নাক থেকে পানি পড়া ও জ্বর। এগুলো শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রধান উপসর্গ।

চিকিৎসকেরা জানান, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অধিকাংশ উপসর্গই মস্তিষ্ক ও নাক কেন্দ্রিক। সংক্রমণটিতে পেট ও ত্বকের সমস্যা কম দেখা গেছে- শিশু, কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্ক সকলের ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কাশির অস্তিত্ব কম থাকলেও, উপসর্গটি একই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এর আগে করোনার মূল সংক্রমণে শিশুদের মধ্যে তেমন উপসর্গ দেখা যায়নি, কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট উপসর্গের প্রকাশ ঘটাচ্ছে।

এছাড়া চিকিৎসকেরা করোনায় আক্রান্ত কিছু শিশুর মধ্যে একটি মারাত্মক রোগ শনাক্ত করেছেন- মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লামেটরি সিন্ড্রোম ইন চিলড্রেন (এমআইএস-সি)। সিডিসির তথ্যমতে, এমআইএস-সি হলো এমন একটি সমস্যা যেখানে শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রদাহ হয়, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহে। এমআইএস-সিতে হার্ট, কিডনি, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, ত্বক, চোখ ও পরিপাকতান্ত্রিক অঙ্গে প্রদাহ হতে দেখা গেছে।বিনা চিকিৎসায় এমআইএস-সি প্রাণনাশের কারণ হতে পারে। তাই করোনার আক্রান্ত শিশুর মধ্যে এমআইএস-সি’র উপসর্গ আছে কিনাও খেয়াল করতে হবে।

 

সাধারণত করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কিছু সপ্তাহ পর উপসর্গ প্রকাশ পেয়ে থাকে। এমআইএস-সির উল্লেখযোগ্য উপসর্গ হলো-

* পেট ব্যথা

* চোখ লাল হওয়া

* বুকে ব্যথা

* দুর্বলতা

* পাতলা পায়খানা

* মাথাব্যথা

* রক্তচাপ কমে যাওয়া

* ঘাড় ব্যথা

* র‍্যাশ

* বমি

* খেতে অনীহা।

শিশু করোনায় আক্রান্ত হলে যা করবেন

ডা. অফিট শিশুর উপরিস্থ শ্বাসতন্ত্রের উপসর্গ থাকলে করোনা টেস্ট করাতে পরামর্শ দিয়েছেন। শিশুর মধ্যে উপরে উল্লেখিত উপসর্গসমূহ লক্ষ্য করলে প্রয়োজনীয় টেস্ট করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ শুনতে হবে। ডা. অফিট বলেন, ‘আপনার শিশুর করোনা টেস্টে পজিটিভ আসলে তাকে আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টাইনে রাখুন উপসর্গ দূর না হওয়া পর্যন্ত।’

নর্থওয়েল হেলথ’স হান্টিংটন হসপিটালের পিডিয়াট্রিক্স বিভাগের প্রধান মাইকেল গ্রসো বলেন, ‘করোনা টেস্টে পজিটিভ শিশুকে হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই মনে হলে তাকে কোয়ারেন্টাইনে রেখে পর্যাপ্ত পানি পান করাতে হবে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে।’

চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ মোতাবেক পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। তাকে এমন কক্ষে আইসোলেশন রাখতে হবে যেখানে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা আছে, জানালা খোলা রাখতে হবে। জ্বর না থাকলে বা শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলে কিছুক্ষণ রোদ পোহালে ভালো।এতে শরীরে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হবে, যা কোভিড-১৯ থেকে দ্রুত সেরে ওঠতে সাহায্য করতে পারে।য দি মনে হয় যে শিশুর উপসর্গ ভয়াবহ খারাপের দিকে যাচ্ছে, তাহলে দেরি না করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।