মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটের কাছে পণ্যবোঝাই ছোট-বড় ৯টি ট্রাক নিয়ে ডুবে যাওয়া ফেরি ‘রজনীগন্ধা’ দুই দিনেও উদ্ধার হয়নি। তবে, ফেরিডুবির দ্বিতীয় দিনে একটি ট্রাক উদ্ধার করে কর্তৃপক্ষ। এখন পর্যন্ত ফেরির ইঞ্জিনচালক হুমায়ুন নিখোঁজ রয়েছেন। এদিন বেলা ১২টার দিকে পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছে যানবাহন উদ্ধারে যোগ দেয় জাহাজ ‘রুস্তম’। পরে বেলা ২টার দিকে জাহাজ হামজাও যুক্ত হয়। জানা গেছে, পদ্মায় তলিয়ে যাওয়া ফেরি উদ্ধারের সক্ষমতা নেই উদ্ধারকারী হামজা ও রুস্তমের। কারণ, এ দুটি জাহাজের সক্ষমতা ১০০ টন। আর রজনীগন্ধার ওজন ২৫০ টন। পানির নিচে দীর্ঘ সময় ডুবে থাকার কারণে ফেরিতে পলিমাটি আর ট্রাকের ভরে ওজন বেড়ে প্রায় ৪০০ টন হয়েছে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক শাহ জাহান।
এ ছাড়া, আরেক উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’র সক্ষমতা ২৫০ টন। বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক শাহ জাহান জানান, প্রত্যয়ের সঙ্গে হামজা ও রুস্তম সহযোগী হিসেবে কাজ করলে হয়তো ডুবে যাওয়া রজনীগন্ধা উদ্ধার সম্ভব। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) রাত সোয়া ৮টার দিকে উদ্ধার অভিযান আজকের মতো সমাপ্ত করা হয় বলেও জানান তিনি।
এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটের ৫ নং ঘাট পন্টুন এলাকায় ফেরিতে থাকা ডুবে যাওয়া দুই ট্রাকের মালিক মিজানুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, রজনীগন্ধা ফেরিডুবির পর থেকে ডুবে যাওয়া যানবাহনগুলো উদ্ধারের অভিযান চলছে ধীরগতিতে। বেশি সময় ধরে পানিতে ডুবে থাকলে ট্রাকবোঝাই পুরো মালামালই নষ্ট হয়ে যাবে। তাতে কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে আর ততক্ষণে উদ্ধার হওয়া মালামালগুলো কোনও কাজেই ব্যবহার করা যাবে না।
তিনি বলেন, আমি খুব অসহায় অবস্থায় পড়ে গেছি। দুটি ট্রাকে ৮০ লাখ থেকে এক কোটি টাকার মালামাল (আঁশ তুলা) ছিল। আর দুটি ট্রাকের মূল্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা। মজার বিষয় হচ্ছে, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ’র কর্তৃপক্ষের কেউই আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন না। উদ্ধারের বিষয়েও কিছুই বলছেন না।
ট্রাকচালকের উদ্ধৃতি দিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, ডুবে যাওয়া ফেরিটির চালক ও স্টাফরা অদক্ষ ছিল। কোনও বাল্কহেডের সঙ্গে ফেরিটির ধাক্কা লাগেনি। ফেরির তলা ফুটো হয়ে পানি ঢুকেই পদ্মা নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে আজ আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেলো।
সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ব্যাংক লোন করে ব্যবসা করছি। ফেরিডুবির ঘটনায় ট্রাকে থাকা সব মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে, এ বিষয়টি তো ব্যাংক বুঝবে না। সরকার যদি আমাদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখে তাহলে হয়তো এই ক্ষতির কিছুটা লাঘব করতে পারবো।
কুষ্টিয়া জেলা শহরেই বসবাস করেন মিজানুর রহমান। পারিবারিকভাবেই ৩৪ বছর ধরে ব্যবসা করছেন তিনি। আঁশ তুলার ব্যবসা ছাড়াও তার অটোরাইস মিল ও ফ্লাওয়ার মিলের ব্যবসা রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ট্রাকচালক আশিক বলেন, ডুবে যাওয়া ট্রাকে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মালামাল (আঁশ তুলা) ছিল। ট্রাকটি উদ্ধার হলেও সব মালামালই নষ্ট হয়ে গেছে, আর ট্রাকের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমার মালিকও এখানে আসছে। ফেরি স্টাফদের দায়িত্বহীনতার কারণে আজকে আমাদের এমন ক্ষতি হয়ে গেলো। কর্তৃপক্ষ তো আমাদের ক্ষতিপূরণ দেবে না। বুধবার সকালে ফেরি ডুবছে, আর আজ বিকেল চারটার দিকে আমার ট্রাকটি উদ্ধার করা হলো। ধীরগতিতে উদ্ধার অভিযান চলার কারণে ট্রাকের লাখ লাখ টাকা মাল নষ্ট হলো।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ট্রাকচালক মজনু মিয়া বলেন, ফেরি ডুবার সময় জীবন বাঁচাতে প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও নদীর পানিতে ঝাঁপ দিয়েছি। গাড়িতে থাকা সব কাগজপত্র পানিতে ভেসে গেছে। আমার ২১ হাজার টাকার মধ্যে মাত্র ১৬ হাজার টাকা তারা (কর্তৃপক্ষ) উদ্ধার করে দিয়েছে। তলা ফেটে পানি ঢুকে নদীতে তলিয়ে যায় ফেরিটি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যদি আগে থেকেই চেষ্টা করতো, তাহলে আমাদের এমন ক্ষতি হত না।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চেয়ারম্যান এ কে এম মতিউর রহমান বলেন, রজনীগন্ধা ফেরিটি কোনও বাল্কহেড বা অন্য কোন নৌ-যানের ধাক্কায় ডুবেনি। ঘটনার পর আমি ফেরি মাস্টারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, ফেরিটিতে হয়তো-বা কোনও ক্রটি থাকতে পারে। ফেরির নিচের অংশ দিয়ে পানি প্রবেশও করতে পারে। তবে তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত মূল কারণ বলতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, ফেরিডুবির দুই দিনে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ও রুস্তমের মাধ্যমে তিনটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়েছে। আর উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় আজ রাতে ১০টার দিকে পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছাবে। এরপর আবহাওয়া ভালো থাকলে রাতেই ফেরি উদ্ধার অভিযান আমরা শুরু করবো। না হলে শুক্রবার সকালে দিকে প্রত্যয়, হামজা ও রুস্তমের সমন্বয়ে ফেরি উদ্ধার অভিযান শুরু করা হবে। তবে, এখন পর্যন্ত ফেরির ইঞ্জিনচালক হুমায়ুন নিখোঁজ রয়েছেন। তার সন্ধানে আজ সকাল থেকেই ফায়ার সার্ভিস ও নৌ-বাহিনীর ডুবুরিদল কাজ করছে।