আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে বহুল প্রত্যাশিত মোবাইল নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদল (মোবাইল নম্বর পোর্টটিবিলিটি-এমএনপি) কার্যক্রম শুরু করবে সরকার। ইতোমধ্যে এই সেবার লাইসেন্স পেতে ‘ইনফোজিলিয়ান বিডি টেলিটেক কনসোর্টিয়াম’ নামে একটি কোম্পানিকে লাইসেন্স দিতে সুপারিশ করেছে বিটিআরসি।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে টেলিকম বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক নিয়ে দুঃচিন্তায় আছেন বলেও জানান।
টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে ৬১০ কোটি টাকার প্রকল্পে অর্থ ছাড় না দেয়ায় তার এই দুঃচিন্তা বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী নিজে। বলেছেন, তার টার্গেট ছিল আগামী নির্বাচনের আগে দেশের তৃণমুল পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সেবা পৌঁছে দেয়া। এই লক্ষ্যে টেলিটককে অবৈধ ভিওআইপি মুক্ত করা, টেলিটকের কাস্টমার সার্ভিস সেন্টার বাড়ানোসহ বেশ কিছু কাজ শেষ করেছেন। কিন্তু নেটওয়ার্ক উন্নয়নের জন্য অর্থমন্ত্রণালয় টাকা ছাড় না করায় সব কিছু ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।
মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি সার্ভিস বা এমএনপি সেবার কার্যক্রম প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই সেবার কার্যক্রম শুরু করা হবে। একই সঙ্গে চালু করা হবে ফোর জি সেবাও।
জানা গেছে, এমএনপি লাইসেন্স সংক্রান্ত ফাইলটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। সব ধরনের যাচাই বাছাই ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়ার পরই গত ১২ সেপ্টেম্বর বিটিআরসি এমএনপি লাইসেন্স এই প্রতিষ্ঠানটিকে দেয়ার জন্য চূড়ান্ত করে।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, মোট পাঁচটি কোম্পানি এই লাইসেন্স পেতে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত হয়েছিল। এর মধ্যে ইনফোজিলিয়ান বিডি টেলিটেক কনসোর্টিয়াম ৯২ নম্বর পেয়ে প্রথম হযেছে। এছাড়া অপর কোম্পানিগুলোর মধ্যে গ্রিনটেক মিডিয়াফোন লিমিটেড পেয়েছে ৮৭ নম্বর, ব্রাজিল-বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম ৮৪ নম্বর, রিভ নম্বার লিমিটেড ৮২ নম্বর, রয়্যাল গ্রিন লিমিটেড ৫৩ নম্বর পেয়েছে।
জানা গেছে, বিটিআরসির কমিশনার (লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্স) মো. জহুরুল হকের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের মূল্যায়ন কমিটি ইনফোজিলিয়ান বিডি টেলিটেক কনসোর্টিয়ামকেই সবচেয়ে যোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে মূল্যায়ন করে কোম্পানিকে লাইসেন্স প্রদানের জন্য সুপারিশ করে। এরপর গত ১২ সেপ্টেম্বর বিটিআরসির লাইসেন্সিং বিভাগের পরিচালক এম এ তালেব হোসেনের স্বাক্ষর করা এক পত্রে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত ইনফোজিলিয়ান বিডি টেলিটেক কনসোর্টিয়ামকে এমএনপিএস লাইসেন্স দেয়ার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, দেশের মোবাইল ফোন গ্রাহকদের বহু প্রতিক্ষিত এই সেবা প্রদানের বিষয়টি বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার একটি বিষয় ছিল। এটি চূড়ান্ত করায় বিটিআরসিকে তিনি ধন্যবাদ জানান। তার মতে এই সেবা চালু হলে মোবাইল ফোন গ্রাহকরা যখন ইচ্ছা তাদের পছন্দের অপারেটর বেছে নিতে পারবেন। এতে একদিকে গ্রাহকরা ভাল সেবা পাবেন অপর দিকে অপারেটরদের মধ্যেও প্রতিযোগিতামূলক সেবা প্রদানের চিন্তা কাজ করবে। এটি চালু হলে গ্রাহক তার বর্তমান নম্বরটি অপররিবর্তিত রেখে অপারেটর পরিবর্তন করতে পারবেন। অর্থাৎ ০১৭, ০১৯, ০১৮ কিংবা ০১৫ বলে কোনো অপারেটরের নির্দিষ্ট নম্বর থাকবে না। গ্রামীণফোনের কোন গ্রাহক যদি বাংলালিংকে যেতে চান তাহলে তার নম্বরটি ০১৭সহ হুবহু রেখে বাংলালিংকে যেতে পারবেন। একইভাবে বাংলালিংকের কোন গ্রাহক ০১৯সহ হুবহু নম্বর রেখে গ্রামীণফোনে যেতে পারবেন।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, ইনফোজিলিয়ান বিডি টেলিটেক কনসোর্টিয়ামে ৪৯ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে বাংলাদেশের ইনফোজিলিয়ান বিডি লিমিটেডের আর বাকি ৫১ শতাংশ অংশীদারি স্লোভেনিয়ার টেলিটেক ডিওওর নিামে। তবে লাইসেন্স ইস্যু হওয়ার পর গাইডলাইন অনুযায়ী বিদেশি শেয়ার ৫১ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনবে বলে কোম্পানিটি অঙ্গীকার নামা জমা দিয়েছে বিটিআরসিকে।
বিটিআরসি গত ২৪ জুলাই এমএনপিএসের সংশোধিত নীতিমালা প্রকাশ করে ২৩ আগস্টের মধ্যে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ বিষয়ে আবেদন আহ্বান করে। এতে সাড়া দেয় পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। ইনফোজিলিয়ান বিডি টেলিটেক কনসোর্টিয়াম ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে লিথুয়ানিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত গ্রিনটেক মিডিয়াফোন লিমিটেড, পোল্যান্ডের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত রিভ নাম্বার লিমিটেড, ব্রাজিলের একটি প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে ব্রাজিল-বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম এবং মিসরের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে রয়্যাল গ্রিন লিমিটেড। ওই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চারটি গত বছরও বাতিল হয়ে যাওয়া নিলাম প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ছিল।