ডিসি নিয়োগে বৈষম্য- যুগ্মসচিবকে দুই ঘণ্টা বাথরুমে আটকে রাখেন বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা

লেখক:
প্রকাশ: ২ মাস আগে

জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে নিয়োগ না পেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন অধিশাখার যুগ্মসচিব কেএম আলী আজমের ওপর চড়াও হন বঞ্চিত কর্মকর্তারা। তাদের অভিযোগ, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে তাদের ডিসি হিসাবে নিয়োগ না পাওয়া নিশ্চিত করেছেন। ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা কেএম আলী আজমকে বাথরুমে আটকে রাখেন।

এছাড়া কেএম আলী আজমের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক দাবিদার তানভীর নামে এক ব্যক্তির পরামর্শক্রমে ডিসির তালিকা চূড়ান্ত করার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক দাবিদার তানভীর এবং কেএম আলী আজম একাধিক দিন সচিবালয়ে তার কক্ষে রাত ২টা পর্যন্ত একান্তে বৈঠক করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুসারে কেএম আলী আজম ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তানভীরকে স্যার সম্বোধন করেন। তার বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং জামায়তপন্থি আমলা। জানতে চাইলে কেএম আলী আজম বলেন, আমি কোনো সমন্বয়কের সঙ্গে মিটিং করিনি। তিনি আমার কাছে আসেন। আমি তো ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডাকিনি। কেউ এলে তাকে কি নিষেধ করা যায়। জানতে চাইলে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক দাবিদার তানভীর বলেন, বিগত আন্দোলনে আমাদের ভূমিকা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। প্রশাসনের কোথায় কাকে নিয়োগ দেওয়া হয়, তা দেখার কিংবা জানার অধিকার আমাদের আছে। এ কারণেই এখানে আসতে হয়।

আপনার তো সচিবালয়ে ঢোকার কোনো পাশ নেই, তাহলে সচিবালয়ে ঢুকলেন কী করে-এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান। প্রশাসনের এ ধরনের কাজ কি ছাত্রদের কি না-এমন প্রশ্নের জবাবও তিনি এড়িয়ে যান। তিনি দাবি করেন, সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সারজিস আলমের পরামর্শে তিনি সচিবালয়ে এসেছেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ) অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, একজন সমন্বয়ক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এসে মাতব্বরি করে এমন খবর আমরা পেয়েছি। তিনি আরও জানান, গত সপ্তাহের বুধবার বিকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আসেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। তখন তানভীরের বিষয়ে আমরা নাহিদ ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। তখন নাহিদ ইসলাম সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তানভীরকে পাত্তা দেওয়া যাবে না। যদি কোনো কর্মকর্তার বিষয়ে অভিযোগ থাকে কিংবা কোনো কর্মকর্তাকে তার যোগ্যতা অনুসারে মর্যাদা দেওয়া না হয়, সে বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে থাকা দুই সমন্বয়ক প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টিতে নেবেন। প্রশাসনে কাউকে মাতব্বরি করতে বলা হয়নি।

অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, কেএম আলী আজম পাত্তা না দিলেই তো হয়। সে তানভীরকে তার রুমে ঢুকতে দেয় কেন। সুতরাং বিষয়টি আলী আজমই ভালো বলতে পারবেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনামতে মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে একসঙ্গে ৩৫ জেলার ডিসি প্রত্যাহার ও নিয়োগ আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ সময় বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম, ২৫তম এবং ২৭তম ব্যাচের ২০/২৫ কর্মকর্তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় তলায় একত্রিত হতে দেখা যায়। প্রথমে তারা মাঠ প্রশাসন-২ শাখার উপসচিব হোসনা আফরোজের কক্ষে ঢুকে হইচই শুরু করেন। এরপর তারা সবাই মাঠ প্রশাসন অধিশাখার যুগ্মসচিব কেএম আলী আজমের রুমে গিয়ে তাকে না পেয়ে বারান্দায় অবস্থান করেন। এ সময় বঞ্চিত কর্মকর্তারা জানতে পারেন, তিনি প্রেষণ অধিশাখার যুগ্মসচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদের রুমে অবস্থান করছেন। বঞ্চিত কর্মকর্তারা ঢুকে পড়েন ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদের রুমে।

শুরুতেই বঞ্চিত কর্মকর্তারা তাদের ডিসি হিসাবে নিয়োগ না দেওয়ার কারণ জানতে চান। একপর্যায়ে কথাকাটাকাটি থেকে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু হয়। একপর্যায়ে বিষয়টি হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়। বঞ্চিতদের তোপের মুখে কেএম আলী আজম বাথরুমে গিয়ে আশ্রয় নেন। এ সময় অন্য কর্মকর্তারা এসে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। ডিসি হিসাবে নিয়োগ না পাওয়া কর্মকর্তাদের তোপের মুখে যুগ্মসচিব কেএম আলী আজম-এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তারা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য কোনো ধরনের তৎপরতা দেখাননি। তারা শুধু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মাত্র।

বিকালে বঞ্চিত কর্মকর্তারা বৈঠক করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সঙ্গে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বঞ্চিত কর্মকর্তাদের সবার বক্তব্য শুনেন এবং ভুলভ্রান্তি হলে তা সংশোধনের আশ্বাস দেন। বঞ্চিত কর্মকর্তারা  জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব তাদের বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি ডিসির ফিটলিস্ট প্রণয়নের জন্য যেসব কর্মকর্তা সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এরপর তিনি বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করবেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব তাদের এমন আশ্বাস দিয়ে সচিবালয় ত্যাগ করেন।

এদিকে ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা  জানান, তারা বিগত সরকারের সময় তিনবার পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ, মামলা, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কোনা তদন্ত বা অনুসন্ধান নেই। শুধু রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে বিগত সরকার তাদের পদোন্নতিবঞ্চিত করে জুনিয়রদের অধীনে চাকরি করতে বাধ্য করেছে। অথচ এখন আবার ডিসি পদে ঘুরেফিরে সেই ছাত্রলীগ করা দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেসব ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, এর বেশির ভাগ বিগত আওয়ামী রেজিমের সুবিধাভোগী।