ডিআইজির হস্তক্ষেপে সেই অসহায় মায়ের দ্বায়িত্ব নিতে রাজি হলেন তার সন্তানরা; ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অসহায় সেই ভিক্ষুক মায়ের সন্তানদের তলব করলেন বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম পিপিএম।

২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টায় বরিশালের কাশিপুর এলাকায় জিআইজি রেঞ্জের কার্যালয়ে মনোয়ারা বেগমের সন্তাদের সাথে কথা বলেন তিনি। এ সময় মনোয়ারা বেগমের সন্তান তিন পুলিশ কর্মকর্তা তাদের মায়ের দায়িত্ব নেয়ার আশ্বাস দিয়ে অঙ্গিকার নামা প্রদান করে।

বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা আজাদ হোসেন বাংলারবনেকে জানান, মনোয়ারা বেগমের সন্তানদের আজ বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজ অফিসে ডেকে পাছানো হয়। তারা প্রত্যেকে অঙ্গিকার করেছেন সর্বপ্রথম তাদের মায়ের সুস্থতার জন্য চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাবেন। এর মধ্যে পর্যায়ক্রমে ১৫ দিন করে দায়িত্ব পালন করবেন। যতদিন না পর্যন্ত মনোয়ারা বেগম সুস্থ না হবেন তত দিন পর্যন্ত তারা এই দায়িত্ব পালন করবে। আর এর মধ্যে কোন গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরপর মনোয়ারা বেগম সুস্থ হয়ে উঠলে তিনি যার কাছে থাকতে চাইবেন তার কাছেই তাকে হস্থান্তর করা হবে। একই সঙ্গে সকল সন্তান তাকে সহায়তা করবেন।

কেন মাকে ভিক্ষা করতে হলো এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা জানান, তাদের বাড়িতে জমি জমা নিয়ে ভাইদের মধ্যে বিরোধ চলছে। যে কারণে সকলেই যে যার মতো করে থাকেন। ফলশ্রুতিতে বাড়ির কোন খোঁজ খবর তাদের কাছে নেই। সংগত কারণেই মনোয়ারা বেগমের করুন অবস্থা। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।উক্ত কমিটিতে বরিশাল জিআইজি রেঞ্জের পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান প্রান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোল্লা আজাদ হোসেন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাকেরগঞ্জ সার্কেল মো. মোফিজুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মনোয়ারা বেগমের বড় ছেলে মো. ফারুক আহম্মেদ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি এএসআই হিসেবে ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। আর এক ভাই মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে কনেষ্টবল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে এবং মো. নেছার উদ্দিন এএসআই পদে ঢাকা ডিএসবিতে কর্মরত রয়েছে। এ ছাড়াও শাহাবউদ্দিন খুলনায় ব্যবসা করেন ও ছোট ভাই বাবুগঞ্জে অটো চালান।

এ বিষয়ে মনোয়ারা বেগমের ছেলে অটো চালক গিয়াস উদ্দিন জানান, আমার ভাইয়েরা তার মায়ের কোন খোঁজ নেয় না। কোন অর্থ সহায়তাও করে না। তবে মা অসুস্থ ছিল। ছোট ভাইয়ের করা অভিযোগ অস্বীকার করেন পুলিশ সদস্য তিন ভাই। তারা বলেন মাকে গ্রামের বাড়ি রেখে নিয়মিত টাকা পাঠাতাম।

এদিকে মেয়ে স্কুল শিক্ষিকা মরিয়ম সুলতানাকে উপজেলা শিক্ষা অফিসার তোফাজ্জেল হোসেন শোকজ করেছেন বলে জানা গেছে। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গিয়ে কারণ দর্শান এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন।

উল্লেখ বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামের মৃত্যু আইয়ুব আলী সরদারের সত্তরোর্ধ স্ত্রী ও ৬ সন্তানের জননী মনোয়ারা বেগম রাস্তায় ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছে। ঘটনাটি বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ আকারে প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। আর অসহায় সেই মাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করান জেলা পরিষদ সদস্য ফারজানা ওহাব।পরবর্তীতে  খবর পেয়ে বরিশালের এসপি মো. সাইফুল ইসলাম  এ অসহায় মায়ের পাশে দাড়ান এবং একই সঙ্গে তিনি মনোয়ারা বেগমের চিকিৎসাসহ যাবতীয় দায়িত্বভার গ্রহন করেন।পরে বরিশালের জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা তার পাশে দাড়ান।