ডা. শামারুখ মৃত্যুর রহস্য নিয়ে বাবার অভিযোগ

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

ডাক্তার শামারুখ মেহজাবিন সুমির রহস্যজনক মৃত্যুর জট খোলেনি চার বছরেও। পরিবার পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড দাবি করছে বরাবরই। আর শ্বশুর বাড়ির লোকজনের দাবি, এটি আত্মহত্যা। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের ভিত্তিতে ময়নাতদন্ত, পুনঃময়নাতদন্ত করেও রহস্যের জট খোলেনি। মামলাটি বর্তমানে হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।

ডা. শামারুখকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে দাবি যশোর সম্মিলিত নাগরিক সমাজের। পরিবারের সদস্যদের মত তারাও মামলার পুনঃতদন্ত ও বিচারের দাবি করছে। সংগঠনটির ব্যানারে সোমবার প্রেসক্লাব যশোর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়েছে।

জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডিতে যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা খান টিপু সুলতানের বাসা থেকে তার পুত্রবধূ ডা. শামারুখের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পরের দিন ১৪ নভেম্বর ধানমন্ডি থানায় শামারুখের বাবা নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন।

মামলার আসামিরা হলেন, ডা. শামারুখের শ্বশুর সাবেক এমপি খান টিপু সুলতান, শাশুড়ি জেসমিন আরা বেগম, স্বামী হুমায়ুন সুলতান সাদাব। মামলা নম্বর ১৩। এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, সেটি নিয়ে ধুম্রজাল ছিল। ফলে বাদীর আপত্তিতে দাফনের ১৭ দিন পর ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর মরদেহ উত্তোলন করে দুই দফায় ময়নাতদন্ত করা হয়। তারপরও সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি দাবি মামলার বাদীর।

নানা টানাপোড়েনে গত চার বছরেও ডা. শামারুখের মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন হয়নি। সম্প্রতি মামলার অন্যতম আসামি খান টিপু সুলতান মারা গেছেন। সংবাদ সম্মেলনে ডা. শামারুখের বাবা নুরুল ইসলাম দাবি করেন, শুরু থেকে মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতান তৎপর ছিলেন। তারা তদন্ত কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের প্রভাবিত করেছেন। ফলে মামলাটির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে রয়েছে।

নুরুল ইসলাম বলেন, খুনি আমার মেয়েকে বাম হাত দিয়ে হত্যা করেছে। গলার বাম পাশে এক আঙ্গুলের (বুড়ো আঙ্গুল) চাপের দাগ, ডান পাশের দুই আঙ্গুলের চাপের দাগ ছিল। গলায় ওড়না ফাঁস থাকলে গিরা পেছনের দিকে বা পাশে থাকে। থুঁতনিতে দড়ি বেঁধে গেলে ঝুলে পড়া যায় না। তাই গলার দুই পাশের ওই দুটি দাগ, গিরা বা নোডের নয়। বাথরুমের সিলিংয়ের উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। সেখানে কোনো হুক নেই। ৫ ফুট দুই ইঞ্চি গ্রিলের সঙ্গে ৫ ফুট আড়াই ইঞ্চি উচ্চতার মেয়ে কীভাবে ফাঁস ঝুঁলিয়ে আত্মহত্যা করলো বোধগম্য নয়। টিপু সুলতানের পরিবারের ভাষ্য, শামারুখ যখন আত্মহত্যা করেছে সবাই বাড়িতে ছিল। আত্মহত্যার সময় গোঙানির শব্দ ও হাত পা ঝাপটানোর শব্দ কিছুই তাদের কানে যায়নি?

ডা. শামারুখকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে নুরুল ইসলাম বলেন, হত্যার রহস্য উম্মোচনে অনেকগুলো প্রশ্ন সামনে এসেছে। কিন্তু সেই প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তর বের করতে পারেনি তদন্ত কর্মকর্তা। শামারুখকে উদ্ধার করে দু’শো গজ দূরে থাকা ধানমন্ডি থানা পুলিশ না ডেকে নিজেই তারা লাশ নামান। বাসার বিপরীতে গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও সেখানে নেয়া হয়নি। নিজের মালিকানাধীন হাসপাতালে (সেন্ট্রাল হসপিটাল) নেয়া হয়।

নুরুল ইসলাম বলেন, প্রথম থেকে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের চেয়ে সাক্ষীদের বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। আমার মেয়ের মোবাইল নম্বর ও আসামিদের মোবাইল নম্বর লিখিতখভাবে থানায় জমা দিয়েছি, কললিস্ট চেক করার জন্য। কারণ ঘটনার আগে ও পরের কললিস্ট চেক করলেই পরিষ্কার হয়ে যেত হত্যাকাণ্ডের রহস্য। আমি অন্যভাবে জানতে পেরেছি, ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর সকাল ৯টা ৩০ মিনিট হতে ১১ টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে খান টিপু সুলতান ও তার ছেলে হুমায়ুন সুলতান সাদাব ৩৫ বার কথা বলেছেন। আর হুমায়ুন সুলতান সাদাবের সঙ্গে মা জেসমিন আরা বেগম কথা বলেছে ১৩ বার। তদন্তকারী কর্মকর্তা তার প্রতিবেদনে কোথাও এ বিষয়টি উল্লেখ করেননি। আসামির বাড়ির গাড়ির ড্রাইভার ও কাজের বুয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দাবি করেছিলাম সেটিও করা হয়নি। এমন অনেক প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। পুনঃতদন্তের মাধ্যমে বিচার কাজ করার দাবি জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ডা. শামারুখ হত্যার বিচার দাবিতে মঙ্গলবার বিকেলে যশোর শহরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে যশোরবাসী।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত নাগরিক সমাজ যশোরের সভাপতি শহিদুল হক বাদল, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহ-সভাপতি অধ্যাপক সুকুমার দাস, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হারুন অর রশিদ, মোয়াজ্জেম হোসেন মনজু, ডা. শামারুখের ভাই ইঞ্জিনিয়ার শাহানুর মোহাম্মদ শরীফ প্রমুখ।