রেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান ও দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে চিনকি রেল স্টেশনের দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টারের অবহেলায় ভোরের আলো ফোটার আগেই ঝড়ে গেছে দুটি প্রাণ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ে বাস ও ট্রেনের সংঘর্ষের প্রাথমিক কারণ অনুসন্ধানে এমনটাই জানা গেছে। দুর্ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন গেটম্যান মো. আরিফ।
রোববার ভোর ৪টার দিকে বারৈয়ারহাট রেল ক্রসিংয়ে ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে যাওয়া বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে খাগড়াছড়িগামী এস আলম পরিবহনের একটি বাসের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুই বাসযাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত আরও ২৫ জন।
স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, রাত চারটার একটু আগে বিকট শব্দে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। বাসটিকে প্রায় কয়েকশ হাত দূর নিয়ে যায় ট্রেনটি। এর আগেও গেটম্যানের অবহেলায় এই ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে।
তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকে রেল ক্রসিংয়ের দায়িত্ব থাকা গেটম্যানের নাম মো. আরিফ পলাতক রয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনাস্থল থেকে চিনকি আস্তানা রেল স্টেশন বেশি দূরে নয়। ট্রেন আসার বিষয়টি গেটম্যানকে স্টেশন মাস্টার অবহিত করেছে কি না কে জানে?
মিরসরাইয়ের চিনকি আস্তানা রেলস্টেশনের প্রধান স্টেশন কর্মকর্তা মইনুল হুদা মজুমদার জানান, রাত ৩টা ৪০ মিনিটে ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনটি মিরসরাইয়ের বারৈয়ারহাট রেলগেট পার হওয়ার সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খাগড়াছড়িগামী যাত্রীবাহী বাসটিকে ধাক্কা দেয়। দুর্ঘটনার সময় স্টেশনে ওয়াহেদুর রহমান নামে এক সহকারী স্টেশন মাস্টার কর্মরত ছিলেন।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনটি বারৈয়ারহাট রেলক্রসিং গেটে এস আলম পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসকে ধাক্কা দেয়। ঘটনার সময় ওই রেলক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান ছিল না। এতে বাসটি ট্রেন লাইনে চলে আসে।
মিরসরাই ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র অফিসার রবিউল আজম বলেন, স্থানীয়রা জানিয়েছে রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান না থাকার সুযোগে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসটি রেল লাইনে উঠে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই ট্রেন এসে বাসটিকে ধাক্কা দিয়ে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে নিয়ে যায়। ট্রেনের ধাক্কায় বাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২৫ জন।
তিনি আরও জানান, খবর পেয়ে মিরসরাই ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি উদ্ধার করে। দুর্ঘটনার পর গুরুতর আহত সুনীল চাকমা (৫৫) নামে একজনক মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া নিহত অন্যজনের পরিচয় জানা যায়নি।
আহতদের মধ্যে চালকসহ ১২ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় মুস্তাননগর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালেও বাকিদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আহত ১৭ জানের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- মো. জায়েল (২২), মো. মারুফ (২৫), মংসিং প্রু মারমা (৪৭), আবাদুল করিম (২৭), লিটন চাকমা (২৪), কমিস্ট ত্রিপুরা (১৯), দীপ্তি চাকমা (৫৬), কর্ম বিকাশ চাকমা (৬০), দেশি ত্রিপুরা (২৮), বাবু ত্রিপুরা (২৩), নিরঞ্জন ত্রিপুরা (২৯), সুজন ত্রিপুরা (২৮), প্রমি ত্রিপুরা (২৪), লোশন দেওয়ান (২৩), পূজন চাকমা (৬০), মীনা চাকমা (৩৫), কুসুম বীথি (৬০)।
রেলওয়ে থানার ওসি মোস্তাফিজ ভূইয়া জানান, নিহত সুনীল চাকমা খাগড়াছড়ি ডিসি অফিসের অফিস সহকারী ছিলেন। দুর্ঘটনায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার পর সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।