ট্রেন ভ্রমণে নারীদের জন্য থাকতে হবে আলাদা কামরা। ট্রেনটি যদি ৫০ কিলোমিটারের বেশি চলে তাহলে কামরার সঙ্গে থাকবে শৌচাগার। বিনা অনুমতিতে কেউ কামরায় প্রবেশ করলে গুনতে হবে জরিমানা। বাংলাদেশ রেলওয়ের আইনটি সেই ব্রিটিশ আমলের। তবে একশ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত নারীদের জন্য আলাদা কামরার ব্যবস্থা করেনি রেলওয়ে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে তাতেও এখন পর্যন্ত মেলেনি কোনো সমাধান।
নারীদের নিরাপদ ভ্রমণে ট্রেনে আলাদা কামরা বরাদ্দ বাস্তবায়ন চেয়ে এক বছর আগে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেছিলেন এক আইনজীবী। পরে যাত্রীবাহী প্রতিটি ট্রেনে নারী যাত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট কামরা বরাদ্দ রাখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছিলেন আদালত। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই রুলের নিষ্পত্তি হয়নি। ট্রেনে বরাদ্দ হয়নি নারীদের জন্য আলাদা কামরা।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে টিকিট সংগ্রহ ও ভ্রমণে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে ট্রেনে ওঠেন নারীরা। এতে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন তারা। বিশেষ করে রাতে যাতায়াতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। অনেক সময় পরিবারও রাতে ট্রেনে যাতায়াত করতে দেয় না। এমন অবস্থায় নারীদের জন্য আলাদা কামরা বরাদ্দ সময়ের দাবি। অবিলম্বে রেলওয়ে আইন অনুযায়ী এই দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে।
তবে রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, ওই রিটের পর নারীদের জন্য আলাদা কামরা বরাদ্দে রেলওয়ের টনক নড়েছে। আসন্ন ঈদুল ফিতরে নারীদের জন্য আলাদা কামরা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে। এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বুধবার (১৩ এপ্রিল) রেল ভবনে সংবাদ সম্মেলন করবেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। এই সংবাদ সম্মেলনে নারীদের জন্য আলাদা কামরা বরাদ্দ থাকবে কি না তা মন্ত্রী জানাবেন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ৬৪ ধারা অনুসারে প্রতিটি ট্রেনে নারীদের জন্য নির্দিষ্ট কামরা থাকার কথা। ৫০ মাইলের বেশি ভ্রমণকারী ট্রেনের ক্ষেত্রে ওই কামরার সঙ্গে একটি শৌচাগার সংযুক্ত থাকবে বলা আছে। এছাড়া সেখানে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে জরিমানা আরোপের কথা উল্লেখ আছে ১১৯ ধারায়। ওই দুই ধারার বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি জনস্বার্থে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মমতাজ পারভীন। এরপর রিটকারী ২৪ ফেব্রুয়ারি একটি সম্পূরক আবেদন করেন।
পরে ওই বছরের ১০ মার্চ আইনের বিধান অনুযায়ী যাত্রীবাহী প্রতিটি ট্রেনে নারী যাত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট কামরা বরাদ্দ রাখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। একই বেঞ্চ ট্রেনের প্রতিটি কামরায় শিশু, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য কিছু আসন সংরক্ষণে পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে সে বিষয়েও জানতে চান।
রেলওয়ে সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ঢাকার ডেপুটি কমিশনারসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা জবাব দিয়েছিলেন কি না তা জানা যায়নি।
আদালতে ওই রিটের পক্ষে শুনানি করেছিলেন আইনজীবী আজমল হোসেন। এর আগে ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর নারীদের জন্য আলাদা কামরা বরাদ্দ চেয়ে রেলওয়েকে একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার নোটিশের কোনো জবাব দেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে আইনজীবী আজমল হোসেন বলেন, ট্রেনে ভ্রমণ অত্যন্ত আরামদায়ক। কিন্তু রাতে কোনো নারী একা ট্রেনে ভ্রমণ করতে চাইলে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। দিনের বেলা নারীকে অনেক ভিড় ঠেলে উঠতে হয়। এছাড়া যেসব নারী দুধের শিশু নিয়ে ট্রেনে ওঠেন, তাদেরও একটি বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। প্রতিটি ট্রেনে নারীদের জন্য আলাদা একটি কামরার কথা বলা থাকলেও সেটি কোনো ট্রেনে বাস্তবায়ন হয়নি।
তিনি বলেন, আমার করা রিট আবেদনটি উচ্চ আদালতের কার্যতালিকায় শুনানির অপেক্ষায় আছে। শিগগির চূড়ান্ত শুনানি ও ইতিবাচক রায় আসবে বলে আশা করি। তখন দিন-রাত নারীরা তাদের কামরায় নির্দ্বিধায় উঠতে পারবেন। এতে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকিও কমবে। এছাড়া ট্রেনে ভ্রমণের সময় যদি নামাজের সময় হয়, তখন তারা নিয়মিত সেখানে নামাজও আদায় করতে পারবেন।
ট্রেনে নিরাপদে ভ্রমণ নারী যাত্রীদের অধিকার বলে মন্তব্য করেছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, রেলওয়ের অব্যবস্থাপনায় ট্রেনে একা ভ্রমণ করতে নিরাপদ মনে করেন না নারীরা। এছাড়া ঈদ কেন্দ্র করে অনেকে স্ত্রী-সন্তানকে আগে বাড়িতে পাঠাতে চান, কিন্তু নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে দূরের পথে পাঠাতে সাহস করেন না। এটা নারীদের মানবাধিকার ও যাত্রী অধিকার পরিপন্থি।
তিনি বলেন, দেশের রেলস্টেশনগুলোতে নারীদের জন্য আলাদা অপেক্ষাগার ও টয়লেট রয়েছে। কিন্তু এসব অপেক্ষাগার ভাসমান লোকজন ও মাদকাসক্তদের দখলে। ফলে নারীরা ট্রেন ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। অবিলম্বে নারীদের জন্য আলাদা কামরা বরাদ্দসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com