বেপরোয়া ট্রাকের চাপায় বগুড়ায় হাত ও রংপুরে পা হারানো দুই শিশু সুমি বেগম ও সুমাইয়া আক্তার মেঘলার অবস্থা সংকটাপন্ন।
সুমিকে ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রেখেছেন চিকিৎসকরা। মেঘলার পরিস্থিতি এখনও শক্তামুক্ত নয়। দুটি মেয়ে হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।
আকস্মিক দুর্ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন তাদের দরিদ্র বাবা-মা। সংসার চালানোই যাদের প্রতিদিনের যুদ্ধ, তাদের জন্য এত বড় দুর্ঘটনা মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ফুলতলা দক্ষিণপাড়া এলাকার দোকান কর্মচারী দুলাল মিয়ার মেয়ে সুমি বেগম। আট বছরের সুমি রোববার মা মরিয়ম বেগমের হাত ধরে বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিল। শেরুয়া এলাকায় মহাসড়ক পার হওয়ার সময় পাথরের সঙ্গে হোঁচট খেয়ে মায়ের হাত থেকে ছিটকে যায় সে। এ সময় একটি পাথরবোঝাই ট্রাক তার হাতের ওপর দিয়ে উঠে গেলে বাঁ হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ডান হাতের দুটি আঙুলও বিচ্ছিন্ন হয়। কপাল ও মুখের একাংশ থেঁতলে যায় সুমির। বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।
সোমবার দুপুরে সুমির বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুমির চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে তাকে। রোববার রাতে একটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তার পরিস্থিতি উন্নতির অপেক্ষা করছেন চিকিৎসকরা। এ সময় সুমির চিকিৎসাব্যয় বহনের ঘোষণা দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
প্রেস ব্রিফিং করেন হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. নির্মলেন্দু চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন বিএমএ বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. রেজাউল আলম জুয়েল।
সোমবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় সুমির বিচ্ছিন্ন হাতের ক্ষতস্থান দিয়ে চুয়ে চুয়ে রক্ত ঝরছে। সুমিকে দেখতে হাসপাতালে লোকজন ভিড় করছে। চোখের সামনে মেয়ের এই দুর্ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না সুমির মা মরিয়ম বেগম। যন্ত্রণাকাতর সুমিও বারবার মাকে ডাকছে। এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে হাসপাতালে। দুর্ঘটনার পর তিন যুবক নিজেদের খরচে সুমিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। নির্মাণশ্রমিক বাবু, খোকন ও খায়রুল নামে এই তিন যুবক সোমবার সুমিকে দেখতে আসেন।
এদিকে, নতুন কেনা লালজামা বাবাকে দেখাতে গিয়ে রংপুরের মাহিগঞ্জে ট্রাকচাপায় পা হারায় সাড়ে তিন বছরের সুমাইয়া আক্তার মেঘলা।
হাসপাতালের বিছানায় হাত বাড়িয়ে পা খুঁজছে সে। ছোট্ট সুমাইয়া জানতে চাইছে, তার একটি পা কোথায় গেল। সে কি আর হাঁটতে পারবে না। বাবাকে বলছে, আমার লালজামা কোথায় গেল?
রোববার রাতে মাহিগঞ্জ কলেজ রোডে ট্রাকের চাপায় সুমাইয়ার ডান পা বিচ্ছিন্ন হয়। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ৩১ নম্বরে ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে তার। তার বাবা রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি রাইস মিলের শ্রমিক। অভাব অনটনের সংসার তার। মাহিগঞ্জ কসাইটুলিতে থাকেন। তার এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়েটি বড়। মা কাজলি বেগমের সঙ্গে বাজারে লালজামা কিনতে গিয়েছিল। বাড়ি ফিরে চাতালে আসে আমাকে জামা দেখাতে। এরপর বাড়ি যাওয়া জন্য রংপুর-সুন্দরগঞ্জ সড়কে ওঠামাত্র একটি বেপরোয়ারা ইটবোঝাই ট্রাক সুমাইয়ার পায়ের ওপর দিয়ে উঠে যায়। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।
সোমবার অস্ত্রোপচার করে সুমাইয়ার হাঁটু পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ৯ হাজার টাকার ওষুধ কেনা হয়েছে। আরও কত টাকা লাগবে- তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন তার বাবা রফিকুল। সমাজের বিত্তবানদের কাছে সুমাইয়ার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন হতবিহ্বল এই বাবা।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. অজয় কুমার রায় বলেছেন, শিশুটি এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। তবে হাসপাতাল থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com