মিরপুর টেস্টের দুদিন মাত্র শেষ হয়েছে। এখনো শেষ হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংস। যদি প্রশ্ন করা হয়, প্রথম দুই দিনের পারফরম্যান্সে বিজয়ী দলের নামটা কী? অবশ্যই বাংলাদেশ। দিন শেষে সাকিব-মুশফিকদের মুখগুলো স্টেডিয়ামে জ্বলে ওঠা শত শত ফ্লাডলাইটের চেয়ে উজ্জ্বল দেখাবে, সেটাই স্বাভাবিক!
কী দিনটাই না আজ কাটিয়েছে বাংলাদেশ! সন্ধ্যায় আইসিসি যথার্থই টুইট করেছে, ‘হোয়াট আ ডে ফর বাংলাদেশ!’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাঁধে চাপানো গেছে ৫০৮ রানের বোঝা। শেষ চার ব্যাটসম্যানই যোগ করেছেন ২০০ রান। এই স্কোর গড়তে কত বিরল রেকর্ডে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আজ ১১ ব্যাটসম্যানের প্রত্যেকে কমপক্ষে দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেন! ১১ ব্যাটসম্যানের প্রত্যেকের ডাবল ফিগারে যাওয়ার ঘটনা এ নিয়ে ঘটেছে মাত্র ১৪ বার। পাহাড়সম স্কোরের পর বোলিংয়ে স্বপ্নের মতো সূচনা। ২৯ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৫ উইকেট মিলিয়ে গিয়েছে হেমন্তের হিম হিম হাওয়ায়! ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের প্রত্যেকেই বোল্ড হয়েছেন। টেস্ট ইতিহাসে এমন ঘটনা এর আগে ঘটেছে ১৮৯০ সালে। ১২৮ বছর পর প্রথম ঘটল এ ঘটনা। একুশ শতকে প্রথমবার, সেটিও আবার বাংলাদেশের হাত ধরে।
‘ক্রিকেট সংখ্যার খেলা’—দুর্দান্ত খেলুন আর খারাপ খেলুন রেকর্ড বই নাড়াচাড়া হবেই। তবে আজ বাংলাদেশের এমনই দিন, যা হয়েছে সবই গৌরবের রেকর্ড। প্রথম দুই সেশনে লোয়ার মিডল অর্ডার কিংবা লোয়ার অর্ডারের দৃঢ়তা, শেষ সেশনে দুর্দান্ত বোলিং—সব মিলিয়ে এটাই কি টেস্টে বাংলাদেশের সেরা দিন?
আমিনুল ইসলাম ও হাবিবুল বাশারের সৌজন্যে ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর অভিষেক টেস্টের প্রথম দিনে বিস্ময়ের পর বিস্ময় উপহার দিয়েছিল বাংলাদেশ। আইসিসির ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত আমিনুল এখন চীনে। সেখান থেকেই বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক জানালেন, পারফরম্যান্সের বিচারে আজকের দিনটা ওপরেই রাখবেন, ‘যদি পারফরম্যান্সের কথা চিন্তা করি এটাকে ওপরে রাখতে হবে। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর এক সেশনে বাংলাদেশ কখনো এত ভালো বোলিং করেনি। তবে প্রতিপক্ষ, উইকেট, কন্ডিশনও বিবেচনা করতে হবে। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তো ভীষণ শক্তিশালী বলা যায় না।’
হাবিবুল অবশ্য এটাকে ‘সেরা দিন’ নয়, বলতে চান ‘অন্যতম সেরা দিন’। আমিনুলের মতো তিনি প্রতিপক্ষ ও কন্ডিশনের তুলনা টানলেন। বাংলাদেশের অন্যতম সফল এ অধিনায়কের যুক্তি,‘বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে সেরা দিন বলার আগে আপনাকে প্রতিপক্ষ, কন্ডিশন সবকিছুই বিবেচনায় আনতে হবে। আমি অন্যতম সেরা দিন বলতে চাই। টেস্টে বাংলাদেশ যতগুলো দুর্দান্ত দিন কাটিয়েছে এটি অনেক ওপরেই থাকবে। আগের ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে একটা পার্থক্য তো আছেই।’
টেস্টে বাংলাদেশে যে কটি স্বপ্নের মতো দিন কাটিয়েছে তার একটি ২০১৫ সালের ১ মে, পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে। পাকিস্তান ৬২৮ রানের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার পরও নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের দুই বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবাল-ইমরুল কায়েসের ব্যাটিংয়ে দেখা গিয়েছিল রুদ্র-নাচন। কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৭৩ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শেষ করায় প্রথম আলোর ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্র লেখেন, ‘এমন দিন কখনো আসেনি আগে।’ সেটি ছিল শুধুই ব্যাটিং প্রেক্ষাপটে। আজ বোলিং-ব্যাটিং-ফিল্ডিং সব বিভাগেই বাংলাদেশ পাবে ‘এ প্লাস’। উৎপল শুভ্রর রায়, টেস্টে এটিই বাংলাদেশের সেরা দিন, ‘ব্যাটিং-বোলিং মিলিয়ে এটাকেই সেরা দিন বলা যায়। খুলনা টেস্টেও বাংলাদেশ অসাধারণ এক দিন কাটিয়েছিল, তবে সেটি ছিল ব্যাটিং প্রেক্ষাপটে। অনেকটা হারা টেস্টে তামিম-ইমরুলের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে রচিত হয়েছিল অবিশ্বাস্য পাল্টা আক্রমণ। ব্যাটিং-বোলিং চিন্তা করলে এটাই সেরা।’
কোচ ও ক্রিকেট লেখক জালাল আহমেদ চৌধুরী মিরপুর টেস্ট দেখছেন প্রেসবক্সে বসেই। বাংলাদেশের এই পারফরম্যান্সে অন্যরকম সুখানুভূতি কাজ করছে তাঁর হৃদয়ে। দিনটা সেরা কিনা, এ প্রশ্নে তিনি শুভ্রর কথারই পুনরাবৃত্তি করলেন, ‘আমাদের অভিষেক টেস্টের প্রথম দিনটাও অসাধারণ ছিল। ওই টেস্ট নিয়ে আমাদের কোনো প্রত্যাশা ছিল না। যেটিই হয়েছিল তাতে আমাদের আনন্দ-তৃপ্তিই বেশি ছিল। সেই প্রথমের সঙ্গে কোনো তুলনা হয় না। অভিষেক টেস্টের প্রথম দিনটা যে আমরা ভালো কাটিয়েছিলাম সেটি শুধু ব্যাটিং দিয়ে। যদি ম্যাচে বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা ভাবি, এমন জয়াভিসারী স্বস্তির দিন আগে কখনো আসেনি।’
জালাল চৌধুরী বলেছেন বটে, জয়াভিসারী স্বস্তির দিন আগে কখনো আসেনি!
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com