টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আবার এলোমেলো, ছন্নছাড়া টাইগাররা

:
: ৬ years ago

ওপেনার তামিম ইকবাল প্রথম বলেই আউট। ওয়ান ডাউন সৌম্য সরকারও উইকেটে গিয়েই পত্রপাট বিদায় নিলেন। প্রথম ওভারেই দুই উইকেট নেই। শুরুতেই বিপাকে। পিছনের পায়ে চলে যাওয়া। টি-টোয়েন্টিতে এর চেয়ে খারাপ সূচনা আর কি হতে পারে? কে জানতো, সেটাই শেষ নয়। আরও খারাপ অপেক্ষা করছে সামনে।

এরপর পাওয়ার প্লে‘র ছয় ওভার শেষ না হতেই আউট লিটন, সাকিবও। প্রথম ৬ ওভারে ৪৩ রানে চার চার ফ্রন্টলাইন সাজঘরে। এমন অনিশ্চিত যাত্রার মাঝেও একদিকে চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়ালেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। জানান দিলেন-আমাকে দেখে যতটা স্লথ, মন্থর মনে হয় আমার ব্যাট কিন্তু তত স্লো নয়। আমিও পারি বিগ শট খেলতে। টিমো পল আর স্যামুয়েল বদ্রির বলে একজোড়া ‘বিগ সিক্স’ সে সত্যই জানান দিচ্ছিল।

মুশফিকুর রহিম শুরুতে বেশি মাত্রায় ছট ফট করলেও এক সময় মনে হলো থিতু হয়ে গেছেন। জুটি জমে ওঠার সম্ভাবনা। দুই ভায়রা মাহমুদউল্লাহ আর মুশফিকের ভেলায় চড়ে অতলে তলিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ধীরে ধীরে পার খুঁজে পেলো যেন। শুরুর ধাক্কা সামলে ইনিংসকে আবার নতুন করে সাজানোর কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছিলেন দুই পরম আত্মীয়। যা দেখে আশাবাদী হয়েছিলেন, কাকডাকা ভোরে ওঠা লাখো ভক্ত-সমর্থক। তাদের ধড়ে প্রাণ ফিরে এসেছিল-যাক বাবা, শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে একটা সম্মানজনক পুঁজির পথে দল!

কিন্তু হায়! যখনই এমন ভাবা, ঠিক তখনই স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় ডোবা। ছন্দপতন। ইনিংসের বয়স যখন ১০ ওভার, ঠিক তখন অনাবশ্যক-অপ্রয়োজনীয় শট খেলতে গিয়ে মুশফিকুর রহীম সাজঘরে। ফাস্ট বোলার কেমো পলের খানিক লাফিয়ে ওঠা বলকে থার্ডম্যানের ওপর দিয়ে গলাতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন মুশফিক। তাতেই ৯.৩ ওভারে ৯০ ‘তে নেই ৫ উইকেট।

আগের ক্ষত প্রায় সেরে গিয়েছিল। মুশফিকের আউটটা আবার ঠিক ততখানিই পিছিয়ে দিল। সঙ্গীর বিদায়ে মনমরা মাহমুদউল্লাহ কেমন যেন হয়ে গেলেন। তাকে হতোদ্যম হতে দেখে বুদ্ধি খাটিয়ে দারুণ এক স্লোয়ার দিলেন উইলিয়ামস, তাতে ধরা মাহমুদউল্লাহও।

সামনের পায়ে ভর করে অফড্রাইভ খেলতে যাওয়া মাহমুদউল্লাহর মতি-গতি বুঝেই লেন্থটা একটু টেনে স্লোয়ার দিয়েছিলেন ক্যাসরিক উইলিয়ামস। বল মাহমুদউল্লাহর প্রত্যাশার চেয়ে দেরিতে এসে এবং একটু আগে পিচ করে উইকেট ভেঙে দিল।

তারও আগে ভুল পথের যাত্রা হলেন আরিফুলও। মুশফিকুর রহিম ফেরার পর মাহমুদউল্লাহর সাথে শতভাগ আস্থার সাথে না হলেও মোটামুটি তাল মিয়ে চলছিলেন রংপুরের এ তরুণ। কিন্তু ১৫ ওভারে গিয়ে তারও ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটলো।

আন্দ্রে রাসেলের বলকে ফ্লিক আর গ্ল্যান্সের মাঝামাঝি কিছু একটা করতে গিয়ে বোল্ড হলেন আরিফুল। প্রথমে মনে হচ্ছিল, বল প্যাডে লেগে পিছনে চলে গেছে। পরে বোঝা গেল, ব্যাটের ভিতরের কানা ও প্যাড ছুঁয়ে বল উইকেটে গিয়ে আঘাত হেনেছে।

‘ব্যাটসম্যান’ তকমাধারিদের মধ্যে আরিফুলই শেষ। আর কেউ নেই। এই ভেবেই হতোদ্যম মাহমুদউল্লাহও খেই হারিয়ে বিদায় নিলেন। তারপর যা হবার তাই হলো। তিন বোলার নাজমুল অপু, রুবেল আর মোস্তাফিজকে নিয়ে ব্যর্থ চেষ্টা করলেন মিরাজ। ইনিংস থামলো ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে।

খেলা না দেখা যে কেউ ভাববেন, বলবেন- আরে, প্রথম ওভারে দুই উইকেট আর পাওয়ার প্লে‘তে ৪৩ রানে চার উইকেট খোয়ানোর পরও যে রান ১৪৩ পর্যন্ত গেছে, এটাই অনেক। কিন্তু যারা খেলা দেখেছেন, তারা এমন বলবেন না। তারা বরং আফসোসে পুড়েছেন। কারণ শুরুর ঐ ধাক্কা সামলে এর চেয়ে অন্তত ২০-৩০ রান বেশি করার অবস্থা ছিল।

মাহমুদউল্লাহ আর মুশফিকের জুটিটা একটু বড় হয়ে ১০ ওভারে শেষ না হয়ে ১৫ ওভার পর্যন্ত দীর্ঘ হলেই বাংলাদেশের রান অনায়াসে ১৭০-১৮০ হতে পারতো। শেষ অবধি ডাকওয়ার্থ লুইস ম্যাথডে খেলার ভাগ্য নিধারিত হয়েছে। যাতে করে উইন্ডিজের সামনে ১১ ওভারে ৯১ রানের টার্গেট দাড়ায়। বাংলাদেশ ১৭০ এর বেশি করলে ক্যারিবীয়দের সামনে ডিএল ম্যাথডে টার্গেট দাঁড়াতো ১১০ থেকে ১১৫ কিংবা তারও বেশি। তখন একটা সম্ভাবনা থাকতো।

‘ক্যারিশমা, ম্যাজিক’- যাই বলা হোক না কেন, অধিনায়ক মাশরাফির উপস্থিতি একটা ফ্যাক্টর। তার অসীম সাহস, অবিচল আস্থা আর সার্বজনীন মানসিকতায় দলকে চাঙ্গা, অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ করার ক্ষমতায় ওয়ানডেতে অন্যরকম হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। শুনতে খারাপ লাগবে, নির্মম সত্য হলো-আর কারো নেতৃত্বে বাংলাদেশ দলকে অমন চনমনে, চাঙ্গা ও উজ্জীবিত এবং ভালো খেলতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ মনে হয় না।

তাই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও অধিনায়ক মাশরাফির অনুপস্থিতি পরিষ্কার চোখে পড়ে। টস থেকে শুরু করে ব্যাটিং অর্ডার সাজানো, বোলার ব্যবহার ও ফিল্ডিং পরিচালনা, কোথায় যেন কি নেই! কিসের যেন একটা অভাব পরিষ্কার। সেটা যে মাশরাফি না থাকা, তা কি আর বলার অবকাশ আছে?

মাশরাফির অভাব, ঘাটতি পরিষ্কার। তার জায়গা পূরণ হচ্ছে না। এটা টি -টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে অনুজ্জ্বল ও ফ্যাকাশে দেখানোর বড় কারণ। তারপরও একটি কঠিন সত্য আজ আবার নতুন করে ফুটে উঠলো, বাংলাদেশ টেস্টের মত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও কেমন যেন- এলোমেলো, ছন্নছাড়া!