টি-টোয়েন্টির মহাযজ্ঞে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স কেমন?

লেখক:
প্রকাশ: ১ মাস আগে

মোহাম্মদ আশরাফুলের দৃষ্টিনন্দন ফ্লিক কিংবা আফতাব আহমেদের ডাউন দ‌্য উইকেটে এসে মিড অন দিয়ে ছক্কা উড়ানোর স্মৃতি বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের হৃদয়ে এখনও তরতাজা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম‌্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মাটিতে নামিয়ে এনে প্রথম ম‌্যাচেই দুর্দান্ত জয় পায় মোহাম্মদ আশরাফুলের দল। জোহানেসরবার্গের গ‌্যালারি ছিল এক টুকরো বাংলাদেশ। আর মাঠের ক্রিকেটে বাংলাদেশ ছিল সর্বসেরা।

 

 

ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম‌্যাটের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শুরুটা যে আতিশজ‌্যে হয়েছিল, ২২ গজে যে পারফরম‌্যান্স দেখিয়েছিল, গর্ব নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো পরাশক্তিকে হারিয়েছিল, তার কিছুই টিকিয়ে রাখতে পারেনি পরবর্তীতে। শুধু ওই বিশ্বকাপ কেন, ২০০৯, ২০১০, ২০১২, ২০১৪, ২০১৮, ২০২১ ও ২০২২; প্রতিটি বিশ্বকাপ যেন বাংলাদেশের কাছে হাহাকার আর দীর্ঘশ্বাসের।

বলে রাখা ভালো, ২০০৭ বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে জয়ের পর মূল আসরে জয়ের জন্য বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয় ১৫ বছর। হ্যাঁ, ১৫ বছর। সেই জয় আসে ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে। নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে মূলপর্বে পরাজয়ের গেরো ছুটায় বাংলাদেশ। এরপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় পায়। তবুও রেকর্ডটা বেশ বিবর্ণই।

 

৩৮ ম্যাচে জয় মাত্র ৯টি। যার ৬টিই বাছাইপর্বে। মূলপর্বে কেবল ৩টি। মনে করিয়ে দেওয়া ভালো- হংকং, আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তানের মতো প্রতিপক্ষের কাছে হারের লজ্জাও পেয়েছে বাংলাদেশ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সেবার হারানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের কাছে পাত্তাই পায়নি আশরাফুলের দল। পরের তিন আসরে গল্পগুলো একই রকম। বড় দলগুলো পাশাপাশি পুঁচকে আয়ারল‌্যান্ডের কাছেও ২০০৯ সালে হারতে হয় বাংলাদেশকে।

 

২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশকে খেলতে হয় বাছাইপর্ব বা প্রথম পর্ব। ঘরের মাঠে সেবার আফগানিস্তানের সঙ্গে জিতে শুরু করলেও নিজেদের তৃতীয় ম‌্যাচে হংকংয়ের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ। মাঝে নেপালের বিপক্ষে পাওয়া জয়ে বাংলাদেশ উঠে যায় দ্বিতীয় পর্বে। কিন্তু মূল পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে আবার হার।

দুই বছর পর বাংলাদেশ মূলপর্বে জয়ের সূবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল। তাও আবার ভারতের মাটিতে ভারতকেই প্রায় হারিয়ে দিয়েছিল মাশরাফির দল। কিন্তু বেঙ্গালুরুতে মাত্র ১ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। ২০২১ সালে বাংলাদেশ মূলপর্বে জয় পায়নি। উল্টো প্রথমপর্বে স্কটল‌্যান্ড হারিয়ে দেয় মাহমুদউল্লাহদের দলকে।

২০২২ অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের পর জিম্বাবুয়েকেও হারায় বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতকে বাগে এনেও শিকার করতে পারেনি। পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানকে হারাতে। ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ হয় অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেও।

 

মূলপর্বে বাংলাদেশের ব্যর্থতার গল্পগুলো অভিন্ন। একাধিকবার প্রতিপক্ষকে হাতের মুঠোয় পেয়েছে। কিন্তু জয়সূর্যের দেখা পায়নি। নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দরজায় কড়া নাড়ছে। বাংলাদেশের গ্রুপে রয়েছে এবার শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেপাল ও নেদারল্যান্ডস। বুক ভরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামতে পারছে না বাংলাদেশ। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে কিছুদিন আগেই ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছে নাজমুল হোসেন শান্তর। অতীত রেকর্ড আর বর্তমান পারফরম্যান্স বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নিয়ে খুব বড় আশা করা যাচ্ছে না। তবে মাঠের ক্রিকেটে নিজেদের দিনে যেকোনো কিছুই হতে পারে। সেই ভালো দিনটিরই প্রহর গুনছে বাংলাদেশ।