প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের স্ববিরোধী বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রত্যাশিতভাবে গ্রহণযোগ্য, অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক হওয়া নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সিইসির ‘হাল ছেড়ে দেওয়া’ এবং প্রকারান্তরে পক্ষপাতমূলক অবস্থানের মানসিকতারও সমালোচনা করেছে সংস্থাটি।
রোববার (১৫ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অবস্থানের কথা জানায় টিআইবি।
গতকাল শনিবার (১৪ অক্টোবর) সব দলের অংশগ্রহণ না থাকলেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে সিইসি যে মন্তব্য করেছেন তারই প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে হতাশা ব্যক্ত করেছে টিআইবি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মাত্র দুদিন আগেই তিনি (সিইসি) একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, প্রধান রাজনৈতিক বিরোধীদল বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এই বারংবার অবস্থান পাল্টানো সন্দেহজনক ও বিভ্রান্তিমূলক।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দলীয় চিন্তার ঊর্ধ্বে থেকে নির্বাচনে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি যখন তিনি (সিইসি) বলেন, ‘… কে নির্বাচনে এলো, কে এলো না…জনগণ যদি আসেন, ভোটাররা যদি আসেন, তারা যদি ভোট দেন, তাহলেই নির্বাচনের একটা বড় সফলতা…’। সিইসির এ ধরনের বক্তব্য বাস্তবে দলীয় পক্ষপাতিত্বের প্রতিফল। যা দেশবাসীর মধ্যে হতাশা বাড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, সাংবিধানিক সংস্থার প্রধানের এমন অবস্থান থাকলে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা কতটা পূরণ হবে সেটা নিয়ে আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ আছে। জনগণ ভোট দিলেই বড় সফলতা- এটি যেমন সঠিক, তেমনই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অজানা থাকার কথা নয় যে, জনগণের ভোটে অংশগ্রহণের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিত সাপেক্ষে বাস্তব অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি অপরিহার্য।
স্ববিরোধী ও পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থান পরিহার করে নির্বাচনকালীন সরকারের পাশাপাশি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে ভূমিকা পালনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা ও অধিপরামর্শমূলক কর্মকাণ্ডে অগ্রসর হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
তিনি বলেন, অতীতের জাতীয় নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে আসন্ন নির্বাচন অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া সবচেয়ে বেশি জরুরি। টিআইবির বিশ্বাস, সিইসি নিশ্চয়ই জানেন, শুধু আইনগত বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করে নির্বাচন শেষ করলে তাতে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে না। এমন বাস্তবতায়, সিইসির গত শনিবারের বক্তব্য শুনে আশঙ্কা হচ্ছে যে, তিনি হয়তো হাল ছেড়ে দিচ্ছেন।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কোনো অবস্থাতেই এর কোনো ইতিবাচক ব্যাখ্যা দাঁড় করানো সম্ভব নয়। দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে কমিশনের কাছে আরও বেশি উদ্যোগ প্রত্যাশিত।