মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে বিয়ের সময় ১৫ লাখ টাকা ও ২০ ভারি স্বর্ণলংকার যৌতুক দিয়েছিলেন বাবা-মা। তারপরও স্বামীর বাড়িতে সুখের সংসার করা হলো না বাবা-মায়ের আদরের একমাত্র কন্যা বৃষ্টি চৌধুরীর! বিয়ের মাত্র দুই বছরের মধ্যেই স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদের নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করতে হলো বৃষ্টিকে!
শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনে অসুস্থ বৃষ্টিকে শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের টানবাজার সাহাপাড়ার গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির ৭ম তলা থেকে অচেতন অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নূরুজ্জামান তাকে মৃত ঘোষণা করে সদর থানা পুলিশকে খবর দেয়।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের ডা. নূরুজ্জামান বলেন, মৃত বৃষ্টি চৌধুরীর শরীরে আঘাতের চিহ্নসহ গলায় দাগ পাওয়া গেছে। এতেই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায় তার মৃত্যু স্বাভাবিক না। নিহতের স্বামী নারায়ণগঞ্জ শহরের ডাচ বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তা ও টানবাজারের সুদের ব্যবসায়ী সুভাস চন্দ্র রায়ের ছেলে সুদীপ রায়। তার দাবি তার স্ত্রী পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে আত্মহত্যা করেছে।
সুদিপের বক্তব্য, ‘প্রায় প্রতিদিন এমন দ্বন্দ্ব লেগেই থাকতো। দরোজা বন্ধ করার পর অনেক ডাকাডাকি করার পর কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে কালীরবাজার থেকে তালা ভাংগার মিস্ত্রী ডেকে নিয়ে দরোজা ভেঙ্গে বৃষ্টির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।’
‘নারায়ণগঞ্জ সদর থানা থেকে মাত্র কয়েক গজের মধ্যে এমন ঘটনায় পুলিশকে কেন জানালেন না?’ এমন প্রশ্নে নিশ্চুপ থাকে সুদীপ রায়।
বৃষ্টি চৌধুরীর মৃত্যুর খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ছুটে আসেন শহরের অবস্থানরত তার আত্মীয় স্বজন। এ সময় সকলে অভিযোগ করে বলেন, ‘বৃষ্টির ননদ ডেইজি, স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি বৃষ্টিকে নানাভাবে নির্যাতন করতো। সকালেও ডেইজি সাহাপাড়ার বাবার বাড়িতে এসে নির্যাতন করেছে বলে খবর পেয়েছি। এরপর বৃষ্টির মৃত্যুর পর পালিয়ে যায় ডেইজি সাহা। বৃষ্টির মৃত্যুর জন্য দায়ী স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদের বিচার চাই।’
নিহত গৃহবধূ বৃষ্টি চৌধুরীর ভাই মিঠুন চৌধুরীসহ নিকাটাত্মীয় অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ‘বৃষ্টিকে হত্যা করেছে স্বামী সুদীপ, শ্বশুর সুভাষ, ননদ ডেইজিসহ পরিবারের লোকজন। কারণ বিয়ের সময় ১৫ লাখ টাকা যৌতুক নেওয়ার পর আরো যৌতুক দাবি করে আসছিলো সুদ ব্যবসায়ী সুভাষ, তার ছেলে সুদীপ ও তার বোন ডেইজি।’
জানা গেছে, এক বছর আগে বৃষ্টির সন্তান শুভদ্বীপ জন্মের মাত্র ৮ দিনের মধ্যে বৃষ্টিকে মারধর করে বাবার বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার ছালিয়াকান্দি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। এমন দ্বন্দ্বের কারণে বিয়ের মাত্র দুই বছরের মধ্যে বহুবার সালিশও হয়েছে। গত কয়েকদিন যাবৎ যৌতুকের কারণে মারধর করতো বলেও বৃষ্টির বাবা কুমিল্লার মুদি ব্যবসায়ী শ্যামল চৌধুরী জানতে পারেন।
নিহত বৃষ্টি চৌধুরীর পরিবারের জোরালো অভিযোগের প্রেক্ষিতে সদর থানার উপ পরিদর্শক আলাউদ্দিন আল আজাদ নিহতের লাশের সুরৎহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠায়।
ঘটনার বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম জানান, বৃষ্টি নামের এক গৃহবধূ মারা গেছে। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্বামী ও শ্বশুরকে থানায় আনা হয়েছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত গৃহবধূর মৃত্যুর সঠিক কারণ আপাতত বলা যাচ্ছে না।