ঝালকাঠিতে স্কুল শিক্ষিকাকে হত্যাচেষ্টা মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি

লেখক:
প্রকাশ: ১১ মাস আগে

ঝালকাঠি শাহী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রুনা খানমকে আদালত থেকে হত্যাচেষ্টা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে মামলার আসামি মো. আতিকুল ইসলাম ওরফে স্বপন (৩৮)।

 

আতিক ও তার সহযোগীদের হুমকিতে দু’টি নাবালক শিশু সন্তান নিয়ে রুনা খানম নিরাপত্তাহীনতায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। এ ব্যাপারে ঝালকাঠি থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি করা হলেও হুমকি দাতা আসামি আতিককে আটক করা হয়নি।

গত ৪ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে শহরের রোনাল্ডসে রোডের নিজ বাসা থেকে বাহের রোডে শাহী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে সেকশন কালিবাড়ির সামনে রুনা খানমের (৩০) পথরোধ করে তার পেটে ও বুকে হত্যার উদ্দেশ্যে ৬টি আঘাত করে গুরতর জখম করে তার সাবেক স্বামী আতিকুল ইসলাম। রক্তাক্ত জখম হয়ে শিক্ষিকা রুনা খানম রাস্তায় লুটিয়ে পরে।

 

স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার সময় সাধনার মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের এটিএসআই শাখাওয়াত হোসেন স্থানীয়দের সহযোগিতায় রক্তমাখা ছুড়িসহ আতিকুল ইসলামকে আটক করে থানায় সোর্পদ করেন।

ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আহত রুনা খানমের বড় বোন রোজি খানম (৩৮) বাদী হয়ে আতিকুল ইসলামকে একমাত্র আসামি করে ঝালকাঠি থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে (৫ এপ্রিল, ২০২৩) আতিকুল ইসলামকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। প্রায় চারমাস কারাগারে থাকার পর হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভ করে আতিক। এদিকে এরই মধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঝালকাঠি থানার এসআই মাসুদ রানা গত ৩০ জুন আতিককে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। ঝালকাঠির আমলী আদালত চার্জশিট নিয়ে মামলাটি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠায়।

 

চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. পারভেজ শাহরিয়ার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য তারিখ নির্ধারণ করেন। সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ হওয়ার পর থেকেই আতিক এবং তার সহযোগিরা বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার পথে রুনা খানমকে নানা রকম হুমকি এবং রাস্তাঘাটে অনুসরণ করা শুরু করে।
শুধু হুমকি বা অনুসরণ নয় রুনা খানম অভিযোগ করে বলেন, ‘জামিন পাওয়ার পর থেকে আতিক একাধিকবার আমাকে সরাসরি মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। আমার বাসায় লোক পাঠিয়ে আমার দুই শিশু সন্তানকে অপহরণের হুমকি দিয়ে বলেছে, একবারতো জানে বেচেঁ গেছো; এবার আর জানে বাচঁতে পারবিনা।’

রুনা খানম আরও বলেন, ‘আতিকের ভয়ে শিশু সন্তানদের নিয়ে বাসার বাইরে বের হই না, শুধু ভয়ে ভয়ে স্কুলে যাই। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন বাতিলের আবেদন করেছি কোনো লাভ হয়নি। আতিক হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছে তাই ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার জামিন বাতিল করেনি। সর্বশেষ আতিক গত ২৪ নভেম্বর রুনা খানমকে স্কুলে যাওয়ার পথে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি প্রদান করেন। ওই দিনই রুনা খানম ঝালকাঠি সদর থানায় একটি জিডি করেন।

উল্লেখ্য গত ২০২১ সালের ১৮ জুলাই তারিখ আতিক ও রুনার দ্বিতীয় বিয়ে হয় এবং পারিবারিক কলহের কারণে পরের বছর ২০২২ সালের ১৫ জুন বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। রুনার আগের ঘরের দু’টি সন্তান আছে। আতিক পুনরায় রুনাকে নিয়ে ঘর সংসার করতে চাইলেও রুনা তা প্রত্যাখান করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যার জন্য রুনার ওপর হামলা চালায় আতিক।

 

অভিযুক্ত আতিকুল ইসলাম আতিক বলেন, ‘জামিন পেয়ে আমি তাকে (রুনাকে) কোনো হুমকি দেইনি, তবে লোক মারফত সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য অনুরোধ করেছি, এটা অপরাধের কিছু নয়।’

ঝালকাঠি সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান ইয়েন বলেন, ‘প্রকাশ্য দিবালোকে আতিকুল ইসলাম আমাদের সমিতির সদস্য রুনা খানমকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে। আমরা আতিকের কঠোর বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। এখন আবার হুমকি দিচ্ছে। প্রশাসন যদি ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমরা আবার রাস্তায় আন্দোলন করবো।’

 

রুনা খানমের জিডির তদন্ত কর্মকর্তা ঝালকাঠি থানার এসআই মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘জিডির তদন্তের অনুমতি চেয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেছি। এখনও অনুমতি পাইনি।’

 
আন্তর্জাতিকপ্রচ্ছদ এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
কমলাপুর রেলস্টেশনের ঘাস নিয়ে লাইভ করার পর এবার ট্রেনে ওঠার সময় নারী ও বৃদ্ধাদের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফের ফেসবুক লাইভ করলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী ও বাচ্চাদের নিয়ে যারা রেলে চলাফেরা করেন তাদের প্রতি কি একটু সহায় হবেন- এমন আহ্বান জানান তিনি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেউ যদি বউ-বাচ্চা, বৃদ্ধা মা-বাবাকে নিয়ে ট্রেনে উঠতে চান তা হলে বউ থাকবে কই আর মা-বাবা থাকবে কই। শুক্রবার (৫ জুলাই) রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ফেসবুকে লাইভে এসে এসব কথা বলেন ব্যারিস্টার সুমন। লাইভে এসে প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনে ওঠার সিঁড়ির দূরত্ব দেখিয়ে সুমন বলেন, ‘এই ট্রেনটাকে মিটার গেজ (পরে সংশোধন করে বলেন ব্রডগেজ) বলা হয়। আমার প্রশ্ন হলো-প্ল্যাটফ্রম থেকে দূরত্ব বা উচ্চতা কত? ব্রিটিশ আমলের ট্রেনগুলো ছিল এমন। আপনারা (রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ) নতুন ট্রেন আনলেন কিন্তু প্ল্যাটফর্ম এখনো পুরনো।’ রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত লোকদের দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখেন সবাই, প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনের উচ্চতা দোতলার সমান। কোনো স্টেশনে ট্রেনটি তিন মিনিট থামে। তিন মিনিটে ৫০ জন মানুষ প্রায় দুই তলার সমান উচ্চতায় ওঠা কি সম্ভব?’ রেলমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘রেলমন্ত্রী, ট্রেন আপনি অনেক উঁচু বানিয়ে দিছেন। আর প্ল্যাটফর্ম এখানে বিট্রিশ আমলের। আমি কমলাপুর সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে বলছি। আর গ্রামের স্টেশনগুলোর অবস্থা তো আরও খারাপ। সেখানে ট্রেনে উঠতে তো রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। বউ বাচ্চা নিয়ে ওঠা একটা বে-ইজ্জতের কারবার।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুনিয়া এগোচ্ছে, সব কিছু এগোচ্ছে। রাতারাতি পরিবর্তন করতে পারবেন না। তবে ব্রেইনে আনেন পরিবর্তন করার। আপনারা বউ-বাচ্চা লইয়া ট্রেনে যাতায়াত করবেন কি-না জানি না। তবে, এই প্ল্যাটফর্ম ট্রেনের সমান করতে কোটি কোটি টাকার দরকার পড়বে না। আশা করি রেলমন্ত্রীসহ সকলেই এর প্রতি সদয় হবেন।’ এর আগে (৩০ মে) ব্যারিস্টার সুমন স্টেশনের সামনে রেললাইনের ওপর বেড়ে ওঠা ঘাস কেটে পরিচ্ছন্ন করার অনুরোধ জানিয়ে তার নিজের ফেসবুক পেজে লাইভ দেন। এর পরদিনই (শুক্রবার) সেসব ঘাস কেটে পরিষ্কার করে ফেলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পরিবারকে গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর জন্য ট্রেনে তুলে দিতে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে ফেসবুক লাইভে আসেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সেখানে তিনি দেখেন, রেললাইনের ওপর বড় বড় ঘাস জন্মেছে। যা কাটার জন্য কারো সময় নেই। ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘রেলের সময় নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। মোটামুটি ভালোই চলতেছে। এজন্য রেল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।’ ওই লাইভে তিনি আরও বলেন, এটা দেশের সবচেয়ে বড় রেলস্টেশন। এটা কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন। এ সময় তিনি এক হাত লম্বা লম্বা ঘাস দেখিয়ে বলেন, ‘কিছু লোক লাগিয়ে ঘাসগুলো পরিষ্কার করলে স্টেশনটা অনেক সুন্দর হয়ে যেত।’
৫ years ago