ঝালকাঠিতে সেই অন্ধ বৃদ্ধাকে চিকিৎসা দিল উপজেলা প্রশাসন

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

দারিদ্র কবলিত ও অবহেলিত হয়ে পরিত্যাক্ত ঘরে ৩ বছর ধরে দিন যাপন করে আসছিলেন ৫ সন্তানের জননী সরবানু। তিনি ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার বাসিন্দা।

গত ৬ মে সরবানুর এমন পরিস্থিতি নিয়ে ‌‘৫ সন্তানের জননীর স্থান গোয়ালঘরে!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এরপর বিষয়টিতে দৃষ্টি পড়ে উপজেলা প্রশাসনের। সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখে ৯০ বছরের অন্ধ বৃদ্ধা সরবানুর চিকিৎসার দায়িত্ব নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহাগ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বৃদ্ধা সরবানুকে তার নির্দেশে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে তাকে ফের নিজ বসতভিটায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেবা-শুশ্রুষার। মশার কামড় থেকে রক্ষা করে তাকে পরিচ্ছন্ন রেখে স্বাস্থ্য সম্মত খাবার দিলেই তিনি ভালো থাকবেন।

এর আগে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. মাহবুবুর রহমান জানিয়েছিলেন, ‘বৃদ্ধা সরবানুর শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। কিন্তু তার চেতনা আছে। তিনি অভিজাত পরিবারের মেয়ে। তাকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা হচ্ছে।’

নিজের এলাকায় এমন অশীতিপরের করুণ জীবনযাপন বিষয়ে আগে ওয়াকিফহাল ছিলেন না রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহাগ হাওলাদার।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ বৃদ্ধার বিষয়ে আমি জানতে পেরে দেখতে গিয়েছিলাম তাকে। সন্তানরা তাকে সে সময় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে আজ এমন অচল হতেন না তিনি।’

জানা গেছে, উপজেলার বাঘড়ি এলাকার মৃত তাহের মল্লিকের স্ত্রী সরবানু। তার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। মেয়েরা পরের ঘরে চলে গেছেন। বড় ছেলে কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। বাকি দুই ছেলে দিনমজুর।

সরবানুর প্রতিবেশি আকলিমা জানান, ‘১০ বছর আগে একদিন মাটিতে পড়ে পায়ে ব্যথা পান সরবানু। অর্থের অভাবে ছেলেরা উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেননি তার। ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়েন তিনি। একদিন পুরোপুরি অন্ধও হয়ে যান।’

যে কারণে বিছানাতেই প্রাকৃতিক কর্ম সারতে হয় তাকে। এমন অথর্ব বৃদ্ধা মাকে ছেলেরা একদিন পাশের পরিত্যক্ত গোয়ালঘরের একটি ভাঙা চৌকিতে শুইয়ে দিয়ে আসেন। সেই থেকে তিনি এখানে থাকছেন।

সরবানুর এমন হাল প্রসঙ্গে তার দুই পুত্রবধূ জানান, ‘আমরা নিজেরাই অনেক গরিব ও অসহায়। প্রতিদিনের খাবার জোগাতে আমাদের সারাদিন পরিশ্রম করতে হয়। মাকে দেখার সময় পাই না। আমরা না পারি তার চিকিৎসা করাতে, না পারি তাকে ভালো খাওয়াতে।’