ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না ঝালকাঠির লেবুচাষিরা। ২০ হালি অর্থাৎ ৮০টি লেবু পাইকারি বিক্রি করে আকার ও মানভেদে মিলছে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ টাকা। স্থানীয় ভাষায় ২০ হালিকে বলা হয় এক পণ। এই এক পণ লেবু বেচে তাতে এক কেজি চালও মিলছে না কৃষকের। এতে চরম হতাশ ঝালকাঠি জেলার প্রান্তিক লেবুচাষিরা।
ঝালকাঠির শহর থেকে কীর্তিপাশা হয়ে সরু সড়ক ধরে এগিয়ে গেলেই বিখ্যাত ভীমরুলী বাজার। খালের পাড়ঘেঁষে বিখ্যাত ভাসমান বাজারে যেতে যেতে চোখ প্রশান্ত করবে চিরায়ত গ্রাম-বাংলার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য।
যদিও এক সময়ের মেঠোপথ এখন পিচঢালা পাকা সড়ক। ঝালকাঠি শহর থেকে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা ও লেগুনাযোগে মাত্র ৩০ মিনিটেই পৌঁছে যাওয়া যায় ভীমরুলী বাজারে।
ঝালকাঠির সদর উপজেলার ডুমুরিয়া, খেজুরা, কীর্তিপাশা, মিরাকাঠি, বাউকাঠি, শতদশকাঠি, ভিমরুলী, কাফুরকাঠি, আটঘর, গাভারামচন্দ্রপুর, পোষন্ডাসহ ২২ গ্রামের চাষিরা লেবু বিক্রি করেন এই হাটে।
কাগজি লেবুই বেশি জনপ্রিয় এখানে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, সুগন্ধি ও রসে ভরা হওয়ায় এই লেবুর চাহিদা বেশি। এসব এলাকায় শুধু লেবুচাষ করেই প্রতিবছর অনেকে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে থাকলেও এবার তা থেমে গেছে।
মূলত পেয়ারার জন্য বিখ্যাত হলেও এখন ভীমরুলীর ভাসমান হাটে লেবুর রাজত্ব। পেয়ারা পরিপক্ব হয়ে পাকতে সময় লাগবে আরও ১৫ দিন। তখন থেকেই বসবে পেয়ারার হাট।
এখন ভীমরুলী ব্রিজের ওপরে দাঁড়ালে দেখা যায় ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় করে হাটে আসছে সুগন্ধি ও রসে ভরপুর কাগজি লেবু। খালের মধ্যে যেন সবুজের এক সমারোহ।
লেবুচাষিরা খুব সকালে বিভিন্ন বাগানের গাছ থেকে লেবু সংগ্রহ করে নৌকা ভরে নিয়ে আসছেন ভীমরুলী খালের ভাসমান হাটে। আশপাশের ২২ গ্রামের চাষিরা প্রতিদিন মিলিত হন এই হাটে।
প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা লেবু নিয়ে যান এখান থেকে। ভাসমান লেবু বাজারের বেচাকেনা দেখতে ভিড় করেন দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটক। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই হাট জমে থাকে লেবুচাষি, পাইকার ও দর্শনার্থীদের কোলাহলে।
এখানে শুধু লেবুর বেচাকেনাই হয় না। ভাসমান হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গৌতম রায় সুমন জানান, পেয়ারার মৌসুমে পর্যটকের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়।
এখনও পেয়ারা পরিপক্ব হয়ে পাকতে শুরু করেনি। আরও ১৫ দিন লাগবে পরিপক্ব হয়ে পাকতে। এ সময়ে লেবুর ভরা মৌসুম। কিন্তু বাজার এবার কলম্বো লেবুর দখলে থাকায় পাইকাররা তেমন আসছে না।
ফলে নামমাত্র মূল্যে লেবু বিক্রি করতে হচ্ছে চাষিদের। ৮০টি লেবু আকার ও মান ভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তা দিয়ে এক কেজি চালও কেনা কঠিন।
আগামী আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের পুরো সময়টাই থাকবে পেয়ারায় সরগরম। সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে একই নৌকায় করে ভাসমান হাটে পসরা বসাবেন আমড়াচাষিরা। পেয়ার, আমড়া, লেবুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি বেচাকানার জন্য বিখ্যাত ভীমরুলীর এই ভাসমান হাট।
জেলার কৃষি বিভাগ জানায়, ঝালকাঠি জেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ হয়। বছরে জেলায় ১৮৭৫ মেট্রিক টন লেবু উৎপাদন হয়। লেবুর উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় এখানকার চাষিরা লেবুচাষে বিশেষ আগ্রহী। কিন্তু এ বছরের মূল্যস্ফীতিতে চরম হতাশায় কৃষকরা।
লেবুচাষিরা জানান, এক পণ (৮০টি) লেবু তারা গত বছরও বিক্রি করেছেন চারশ টাকায়। এবার সেই লেবুর দাম ১০ ভাগে এসে দাঁড়িয়েছে। চারশ টাকার স্থলে মাত্র ৪০ টাকা দরে লেবু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
লেবুচাষি তৈয়বুর রহমান বলেন, আমি চার বিঘা জমিতে কাগজি লেবু চাষ করেছি। উৎপাদন খরচ ছিল ৫০ হাজার টাকা। গত বছরে প্রায় ৪ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেছি। এ বছর উৎপাদন খরচ আরও বেড়েছে, কিন্তু লেবুর দাম নেমে গেছে ১০ ভাগে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, লেবু মানুষের শরীরে ভিটামিন সির ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে।
লেবুচাষের পরিধি বাড়াতে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সার ও ঋণের সঙ্কট দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com