ঝালকাঠিতে পেঁয়াজের উচ্চমূল্যে ক্রেতারা দিশেহারা

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

ঝালকাঠির খুচরা বাজারে আজ পেঁয়াজের কেজি ২শ টাকা। পেঁয়াজের উচ্চমূল্যে ক্রেতারা দিশেহারা। বিক্রেতারা বলছে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে বেশি দামে বিক্রি করি।

সকাল থেকেই জেলা শহরের খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ ২শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা এই বাড়তি দাম দিয়ে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাই অনেকেই সামান্য পরিমান কিনে কোন ভাবে প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আড়ৎ থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে ২শ টাকায় কেজি প্রতি বিক্রি করতে হচ্ছে।

আর আড়দ্দাররা জানায়, তাদের বরিশাল থেকে পাইকারী কেজি প্রতি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ১৮০ টাকা দরে। ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ না থাকায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

জানা যায়, দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি হলেও উন্নত দেশগুলোতে তুলনামূরক অনেক কম। মরুভূমির উত্তপ্ত বালুকনার দেশ সৌদি আরবে খুচরা বাজারে পিয়াজের কেজি ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মসলা জাতীয় এই খাদ্য পণ্যটি এ দেশে খোলা এবং বস্তায় করে বিক্রি করা হচ্ছে। খোলা পিয়াজ প্রতি কেজি ১ রিয়াল ৭০ হালালা ধরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ৩-৪ কেজি ওজনের একেকটি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৫-৬ রিয়ালে। সেই হিসাবে বস্তা প্রতি এই পিয়াজের মূল্য দাঁড়ায় ২৫-৩০ টাকায়। সৌদি আরবের বাজারে যে পিয়াজ পাওয়া যায় এসব পিয়াজ আমদানি করা হয়ে থাকে ভারত, পাকিস্তান, মিসর এবং চীনসহ পিয়াজ উৎপাদনকারী অন্যান্য দেশ থেকে।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনের বাজারে পিয়াজের খুচরা মূল্য প্রতি কেজি বাংলাদেশি টাকায় ৫৫ টাকা করে। আবার বিভিন্ন বড় বড় গ্রোসারি শপে ২৫ কেজি পিয়াজের বস্তার দাম ৮ পাউন্ড, যা কেজি দরে হিসাব করলে ৩২ পেন্স দাম হয়, যা বাংলাদেশি টাকায় ৩৫ টাকা প্রতি কেজি পড়ে।

ইউরোপের আরেক দেশ জার্মানির বার্লিন শহরেও খুবই কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে। সেখানে দেখা গেছে একটি সুপার স্টোরে পাঁচ কেজি পেঁয়াজের দাম মাত্র ০.৯৯ ইউরো (বাংলাদেশি ৯২.২৫ টাকা) ধরা হয়েছে। তবে তা ৫০% ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে বাংলাদেশি টাকায় পাঁচ কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৪৬ টাকা। অর্থাৎ এক কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৯ টাকা ২০ পয়সা!

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পেঁয়াজের দাম ১০ পাউন্ডের ব্যাগ ২ ডলার। ১০ পাউন্ডের পরিমান হয় সাড়ে ৪ কেজি। ১ ডলার ৮৫ বাংলাদেশী টাকা হলে ২ ডলার ১৭০ টাকা। এতে সাড়ে চার কেজি ১৭০ টাকা। হিসেবে দেখা যায়, প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৩৭ টাকা।

এদিকে পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকায় বৃহস্পতিবার সংসদে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকারি ও বিরোধী উভয় দলের সংসদ সদস্যরা। এর পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করে তা খতিয়ে দেখার জন্য সরকারের প্রতি আহবানও জানিয়েছেন তারা।

এদিন জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন। বৃহস্পতিবার পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০-৪০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকায় উঠে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘কী কারণে প্রতিদিন পেঁয়াজের মূল্য বাড়ছে? পেঁয়াজের ঝাঁজ বেশি হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে এটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। মানুষের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া হলে সেটি খারাপ হবে। এতে সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’

গত সেপ্টেম্বরে ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে; ৩০ টাকা কেজির পেঁয়াজ কয়েক দিনেই পৌঁছে যায় ১০০ টাকায়। তখন সরকার মিয়ানমার থেকে আমদানি শুরু করে। এছাড়া টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি এবং আড়তগুলোতে অভিযানের পর দাম কিছুটা কমলেও পরে আবার দাম বাড়তে শুরু করে।

এরপর তুরস্ক ও মিশর থেকে আরও আমদানি করে দাম ৮৫ টাকায় নামিয়ে আনার আশা দেখালেও তা তো ঘটেইনি। উল্টো ঘূর্ণিঝড়ের পর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে ২০০ টাকায় উঠেছে।