ঝালকাঠিতে পঙ্গু মায়ের খোঁজ খবর নেয় না ছেলে

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

ঝালকাঠি প্রতিনিধি ॥  ২৫ বছর আগে তিন বছরের শাহজাহানকে রেখে মারা যান বাবা ইয়াছিন হাওলাদার। বসতভিটা ছাড়া কিছুই রেখে যাননি তিনি। স্ত্রী শাহাবানু অন্যের বাসায় কাজ করে ছেলে শাহজাহানকে লালন-পালন করেন। খেয়ে না খেয়ে ছেলেকে বড় করেন মা। কিন্তু ছেলে বড় হয়ে মাকে রেখে চলে যান।

 

 

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার পুটিয়াখালী গ্রামের বাসিন্দা শাহাবানু। দুঃখে-কষ্টে চলে তার সংসার। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে হামাগুড়ি দিয়ে চলেন তিনি। পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই।

 

 

শাহাবানুর কষ্টের দিনগুলোতে সহায়তা করেছেন প্রতিবেশীরা। এরই মধ্যে ১০ বছর সহায়তা করেছেন এমন দাবি তুলে সহায়তার অর্থ লিখে রাখেন এক প্রতিবেশী।

 

এরপর সহায়তার অর্থ শাহাবানুর কাছে ফেরত চান তার প্রতিবেশী। কিন্তু ওই অর্থ ফেরত দেয়ার মতো অবস্থা ছিল না শাহাবানুর। এ অবস্থায় তার বসতভিটার জমির দিকে নজর দেন প্রতিবেশী।

 

পরে ওই প্রতিবেশীকে জমি লিখে দেন শাহাবানু। ছাড়তে হয় তাকে বসতভিটা। প্রতিবেশীকে জমি লিখে দেয়ার ক্ষোভে ১৪ বছরের ছেলে শাহজাহান মাকে ফেলে চলে যায়। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংগ্রাম করছিলেন শাহাবানু।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অন্যের বাড়িতে কাজ করার সময় পুকুরঘাটে হোঁচট খেয়ে কোমরে আঘাত পান শাহাবানু। সেই থেকে আর কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারেননি তিনি। এখন চলাফেরা করতে অক্ষম। বর্তমানে তার বয়স ৭০ বছর। হাঁটু ও দু’হাতে ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করেন তিনি।

 

 

বিষয়টি জেনে স্থানীয় ইউপি সদস্য তাকে একটি বয়স্কভাতার কার্ড করে দেন। চলাফেরায় অক্ষম হওয়ায় এক প্রতিবেশীকে ১২০ টাকা দিয়ে বয়স্কভাতার টাকা উত্তোলন করান। অন্যের বাড়িতে থাকেন তিনি।

 

 

শাহাবানু বলেন, আমাকে ছেড়ে ছেলে শাহজাহান চলে গেছে। থাকে পাশের গ্রামে। বিয়ে করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শান্তিতে আছে। কিন্তু আমার খোঁজখবর নেয় না।

 

 

পরনে একটা কাপড় নেই আমার। ছেঁড়া কাপড়ে শরীর ঢেকে চলতে হয়। হাঁটতে পারি না, হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হয়। ছেলে খোঁজ না নিলেও অভিযোগ দেই না কারও কাছে। সন্তান তো আমার। পেটে ধরেছিলাম, কষ্ট করে বড় করেছি। এজন্য অভিশাপও দেই না।

 

 

শাহাবানু বলেন, কেউ যদি আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতো, থাকার একটু ব্যবস্থা করে দিতো; খাবার এবং পরনের কাপড় দিতো তাহলে মরার আগে একটু স্বস্তি পেতাম।

 

পুটিয়াখালীর স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ শাহাদাত বলেন, শাহাবানুর ছেলে থাকতেও নেই। ছেলে শাহজাহান মাকে ছেড়ে চলে গেছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখে আছে তার ছেলে। কিন্তু মা শাহাবানু কষ্টে আছে। তার থাকার স্থান নেই, খাবারের ব্যবস্থা নেই। এমনকি পরনের কাপড় নেই। হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হয়।

 

 

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. ফারুক মোল্লা বলেন, শাহাবানু অসহায় মানুষ। চলতে পারেন না, খাইতে পারে না, নেই পরনের কাপড়। তাকে একটি বয়স্কভাতার কার্ড করিয়ে দিয়েছি। তার পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাই।

আবহাওয়া বার্তাজাতীয়প্রচ্ছদপ্রশাসনবরিশাল এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
কমলাপুর রেলস্টেশনের ঘাস নিয়ে লাইভ করার পর এবার ট্রেনে ওঠার সময় নারী ও বৃদ্ধাদের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফের ফেসবুক লাইভ করলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী ও বাচ্চাদের নিয়ে যারা রেলে চলাফেরা করেন তাদের প্রতি কি একটু সহায় হবেন- এমন আহ্বান জানান তিনি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেউ যদি বউ-বাচ্চা, বৃদ্ধা মা-বাবাকে নিয়ে ট্রেনে উঠতে চান তা হলে বউ থাকবে কই আর মা-বাবা থাকবে কই। শুক্রবার (৫ জুলাই) রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ফেসবুকে লাইভে এসে এসব কথা বলেন ব্যারিস্টার সুমন। লাইভে এসে প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনে ওঠার সিঁড়ির দূরত্ব দেখিয়ে সুমন বলেন, ‘এই ট্রেনটাকে মিটার গেজ (পরে সংশোধন করে বলেন ব্রডগেজ) বলা হয়। আমার প্রশ্ন হলো-প্ল্যাটফ্রম থেকে দূরত্ব বা উচ্চতা কত? ব্রিটিশ আমলের ট্রেনগুলো ছিল এমন। আপনারা (রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ) নতুন ট্রেন আনলেন কিন্তু প্ল্যাটফর্ম এখনো পুরনো।’ রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত লোকদের দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখেন সবাই, প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনের উচ্চতা দোতলার সমান। কোনো স্টেশনে ট্রেনটি তিন মিনিট থামে। তিন মিনিটে ৫০ জন মানুষ প্রায় দুই তলার সমান উচ্চতায় ওঠা কি সম্ভব?’ রেলমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘রেলমন্ত্রী, ট্রেন আপনি অনেক উঁচু বানিয়ে দিছেন। আর প্ল্যাটফর্ম এখানে বিট্রিশ আমলের। আমি কমলাপুর সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে বলছি। আর গ্রামের স্টেশনগুলোর অবস্থা তো আরও খারাপ। সেখানে ট্রেনে উঠতে তো রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। বউ বাচ্চা নিয়ে ওঠা একটা বে-ইজ্জতের কারবার।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুনিয়া এগোচ্ছে, সব কিছু এগোচ্ছে। রাতারাতি পরিবর্তন করতে পারবেন না। তবে ব্রেইনে আনেন পরিবর্তন করার। আপনারা বউ-বাচ্চা লইয়া ট্রেনে যাতায়াত করবেন কি-না জানি না। তবে, এই প্ল্যাটফর্ম ট্রেনের সমান করতে কোটি কোটি টাকার দরকার পড়বে না। আশা করি রেলমন্ত্রীসহ সকলেই এর প্রতি সদয় হবেন।’ এর আগে (৩০ মে) ব্যারিস্টার সুমন স্টেশনের সামনে রেললাইনের ওপর বেড়ে ওঠা ঘাস কেটে পরিচ্ছন্ন করার অনুরোধ জানিয়ে তার নিজের ফেসবুক পেজে লাইভ দেন। এর পরদিনই (শুক্রবার) সেসব ঘাস কেটে পরিষ্কার করে ফেলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পরিবারকে গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর জন্য ট্রেনে তুলে দিতে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে ফেসবুক লাইভে আসেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সেখানে তিনি দেখেন, রেললাইনের ওপর বড় বড় ঘাস জন্মেছে। যা কাটার জন্য কারো সময় নেই। ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘রেলের সময় নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। মোটামুটি ভালোই চলতেছে। এজন্য রেল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।’ ওই লাইভে তিনি আরও বলেন, এটা দেশের সবচেয়ে বড় রেলস্টেশন। এটা কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন। এ সময় তিনি এক হাত লম্বা লম্বা ঘাস দেখিয়ে বলেন, ‘কিছু লোক লাগিয়ে ঘাসগুলো পরিষ্কার করলে স্টেশনটা অনেক সুন্দর হয়ে যেত।’
৬ years ago