ঝালকাঠিতে জিয়াউলের যত সম্পত্তি, তত অভিযোগ

লেখক:
প্রকাশ: ৩ মাস আগে

ঝালকাঠিতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার- এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল হাসান। শেখেরহাট ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রামে মালটিপারপাস এগ্রো ফার্মের নামে বিশাল এলাকাজুড়ে করেছেন মাছের ঘের, গরুর খামার, নার্সারি ও বিলাসবহুল বাংলো। প্রায় তিনশ বিঘা জমিও কিনেছেন শেখেরহাট ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে।

 

ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেখেরহাট ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রামের সন্তান তিনি। যার দাপট ও বিভিন্ন অপকর্মের কারণে এলাকাবাসীর কাছে র‌্যাব তপু নামে বেশ পরিচিত তিনি। সাবেক সরকারের আমলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকাকালীন তিনি নিজ এলাকায় বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিজের প্রভাব বিস্তার করতে র‌্যাব দিয়ে নজরদারি করিয়ে মানুষকে ভীত সন্ত্রস্ত করে রাখতেন। ২০১৬ সালে বাংলো বাড়ি, মাছ ও গরুর ফার্ম, ফল বাগান, আবাদি জমিসহ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি কেনার সময়ও র‌্যাব দিয়ে প্রভাব খাটিয়েছেন। অনেকে এখন পর্যন্ত জমির টাকা না পেলেও ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেননা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতাপপুর গ্রামে তার তাসফিয়া মালটিপারপাস এগ্রো ফার্মে জমি রয়েছে ১৫ বিঘা। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর এই ফার্মে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছেন কেয়ারটেকার মফিজ। সেই থেকে ফার্মটি তালাবদ্ধ রয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, বরিশাল র‌্যাব-৮ এর এক কর্মকর্তা গাড়িতে এসে এই বিশাল সম্পদের দেখাশুনা করতেন। জিয়াউলের নির্দেশে এই সম্পত্তি আরও বাড়াতে পাশের জমি নামমাত্র মূল্যে কিনতেন ওই কর্মকর্তা। কেউ জমি দিতে অস্বীকৃতি জানালে করা হতো মারধর।

প্রতাপপুর গ্রামে ১৫ বিঘা সম্পত্তিতে গড়ে তোলা তাসফিয়া মাল্টিপারপাস এগ্রো ফার্মের পাশেই নাজমুন নাহারের বাড়ি। তিনি জানান, জিয়াউল এলাকায় কম আসতেন। বরিশাল র‌্যাবের গাড়িতে আসা এক অফিসার তার সব কিছু দেখাশুনা করতেন। অন্যের জমির গাছ কেটে এই ফার্মের সীমানা দেয়াল করেছে।

একই এলকার মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান মীর বলেন, ফার্মের পাশে থাকা বেলাল নামে এক ব্যক্তির নারিকেল গাছ কেটে, নান্না হাওলাদার এবং আবু বকর সিদ্দিকীর অনেক জমির ওপর দিয়ে জোর করে সীমানা দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। আমার ১ কাঠার বেশি জমি দেয়ালের ভেতরে নিয়ে গেলেও দাম দেয়নি। ফার্মের সীমানা দেয়ালের নিকটবর্তী বাসিন্দা কৃষক লিয়াকত আলী জানান, আমার পুকুর ও বেড় ভরাট করে দেয়াল করেছে র‌্যাব।

প্রতাপপুরের সহকারি শিক্ষক আব্দুস ছত্তার বলেন, জিয়াউলের আক্রোশের শিকার হয়েছি আমি। একটি বিষয়ে তার সঙ্গে মতোবিরেধ হওয়ায় আমাকে বরিশাল র‌্যাব-৮ অফিস থেকে ফোন দিয়ে বলে- আমি নাকি জামায়াত-শিবির করি অভিযোগ আছে। তাই সেখানে গিয়ে দেখা করতে হবে। এরপর পরিচিত আরেক র‌্যাব সদস্যকে বিষয়টি জানালে তার হাত থেকে রেহাই পাই।

ফার্মের ভিতরে দ্বিতল বাংলো বাড়ির পেছনে বসবাসরত গৃহীনি মিঠু বেগম জানান, ২০১৬ সালে র‌্যাব জিয়াউল তার এই বাড়ির ভেতরে আমার ২ কাঠা সম্পত্তি নিলেও দাম দেয়নি। তাছাড়াও ভবনটির সেফটি ট্যাংকি আমার জমিতে নির্মাণ করায় ময়লা-দূর্গন্ধযুক্ত পানিতে ভর্তি থাকে আমার রাস্তা।

কুতুবকাঠি গ্রামেও রয়েছে জিয়াউলের বিপুল সম্পত্তি। এই এলাকার বাসিন্দা হৃদয় তালুকদার জানান, আমাদের ৮ কাঠার সম্পত্তির ওপরে বাড়ি ও একটি ছোট মসজিদ ছিল। জিয়াউলের নির্দেশে বরিশাল র‌্যাব-৮ এর মো. কামরুল নামে এক অফিসারকে পাঠিয়ে বাড়ি-মসজিদ ভেঙ্গে ৮ কাঠার সম্পত্তির পরিবর্তে ৫ কাঠা জমি দেয়। এ জমি নিতে রাজি না হওয়ায় আমার বাবাকে র‌্যাব কামরুল মারধর করেছে। এতে তার এক পাশ অবস হয়ে গেছে। তিনি এখন হাঁটতে বা কাজ করতে পারেন না। আমার ৩ বোন ঐ সময় ৩ বছর র‌্যাবের ভয়ে পালিয়ে চট্টগ্রামে ছিল।

এভাবে কুতুবকাঠি গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিতোষ গাইন, প্রশান্ত মহুরীসহ আরো অনেকের জমি নামমাত্র মূল্যে দখল নিয়েছেন জিয়াউল। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এসব জমিতে পাকা পিলার দিয়ে সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে।