ঝালকাঠিতে আশ্রয়কেন্দ্রই যখন আশ্রয়হীন!

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

বন্যা-ঘূর্ণিঝড়ের সময় দিশেহারা উপকূলবাসীর একমাত্র আশ্রয়স্থল সাইক্লোন শেল্টার।

সেই আশ্রয়কেন্দ্র যদি হয় ঝুঁকিপূর্ণ, তাহলে নদী তীরবর্তী মানুষের জীবন রক্ষাই দায়। এমন একটি ঝুঁকিপূর্ণ আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ঝালকাঠির বিষখালী নদীর তীরে।

সদর উপজেলার পশ্চিম দেউরী গ্রামে বিষখালী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারের একাংশ।

মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন খান বলেন, মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারের দোতলা ভবনের দুটি কক্ষ ও মসজিদটি বিষখালী নদীর স্রোতে তলিয়ে যায় এবং নেয়ামত উল্লাহ (১৬) নামে এক কিশোর নিখোঁজ রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর সময় পানির তোড়ে বিদ্যালয়ের একটি পানির ট্যাংক ও নলকূপ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এরই মধ্যে বেসমেন্টের নিচের মাটি সরে পানি ঢুকে পড়েছে। যেকোনো মুহূর্তে নদীগর্ভে চলে যেতে পারে পুরো ভবনটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইমারজেন্সি সাইক্লোন রিকভারি অ্যান্ড রিস্টোরেশন প্রজেক্টের আওতায় প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালে এই প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারটি নির্মাণ করা হয়।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এটি নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

ওই সময় ভাঙনকবলিত বিষখালী নদীর মাত্র ১০০ গজের মধ্যে এ ধরনের ভবন নির্মাণে স্থানীয়রা আপত্তি জানালেও কর্তৃপক্ষ তাতে ভ্রূক্ষেপ করেনি।

তখন বলা হয়েছিল, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নদীশাসনের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ভবনটি ভাঙনের চূড়ান্ত ঝুঁকিতে ছিল।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনটি এখন শুধু পাইলিংয়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তিন পাশেই বিষখালীর পানি থইথই করছে।

বিদ্যালয়ে মোট ১৩৭ জন শিক্ষার্থী থাকলেও ভয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসা বন্ধ হয়েছে করোনা পরিস্থিতিরও আগে। যেকোনো সময় নদীগর্ভে হারিয়ে যেতে পারে ভবনটি।

শুধু বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারটিই নয়, নদীতে বিলীন হচ্ছে স্থানীয় বাজার, সড়ক, বসতঘর, ফসলি জমিসহ অসংখ্য গাছপালা।

চলতি বছরের ২১ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আঘাত হানার ভয়ে তিন শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল এই সাইক্লোন শেল্টারে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় রাতে অনেকেই সেখান থেকে নেমে যান।

অনেক দুর্যোগের সাক্ষী দেউরী গ্রামের বৃদ্ধ হাসেম আলী হাওলাদার। তিনি বলেন, বিষখালীতে বহু ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি চলে গেছে নদীগর্ভে।

আবহাওয়ার সংকেত শুনে আগে আশ্রয় নিতাম নদীর পাশের বিদ্যালয়ে। সরকার আমাদের কষ্টের কথা চিন্তা করে বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করে দিলো। কিন্তু স্থান নির্ধারণ সঠিক হয়নি।

নদীর পাশে এটি নির্মাণ করায় নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। আশ্রয় নেওয়ার স্থানটি যদি হয় ঝুঁকিপূর্ণ, তাহলে আমরা যাবো কোথায়।

নদীতীরের বাসিন্দা হাওয়া বেগম বলেন, বসতঘরের পাশের জমিতে বিভিন্ন ফসলের চাষ করেছিলাম। পানি বেড়ে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে জমিও নদীতে চলে গেছে। প্রতিদিন আতংকে থাকি। সরকার আমাদের নদী ভাঙনরোধে পদক্ষেপ নিলে বেঁচে থাকতে পারতাম।

পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারটি রক্ষার জন্য বিভিন্ন দফতরে অনেকবার জানিয়েও কোনো সমাধান পাইনি। এখন এটি নদীগর্ভে বিলীন হলে স্থানীয়রা চরম ভোগান্তিতে পড়বে।

এ ব্যাপারে ঝালকাঠি অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রুহুল আমীন বলেন, ভবন নির্মাণের সময় পাউবো নদীশাসনের একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করলেও তা শেষ করেনি। ফলে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সাইক্লোন শেল্টারটি রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

বিকেলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মুশফিকুর রহমান শুভ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। যেহেতু দুর্গম এলাকা। বর্ষা মৌসুমে ট্রলার ছাড়া যাতায়াতের সহজ পথ নেই।

যেতে ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় লাগে। সরেজমিনে দেখে ক্ষতি নির্ধারণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।