জয়পুরহাটে ফসলি জমি কেটে রাস্তা সংস্কার, কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

জয়পুরহাট সদর উপজেলায় স্থানীয় সরকার ও সমবায় অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রাস্তা সংস্কারের কাজে কৃষকের ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। রাস্তার দুই পাশের ফসলি জমি থেকে মাটি নেয়ার অনুমতি না থাকলেও ভেকো মেশিন দিয়ে খনন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা।

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের দুর্গাদহ বাজার থেকে হরিপুর রাস্তার প্রায় ৬ কিলোমিটার এলজিইডির ব্যবস্থাপনায় ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইথান এন্টারপ্রাইজ। এ কাজের জন্য ঠিকাদারকে অন্যস্থান থেকে মাটি সরবরাহ করে কাজ করতে হবে— এমন চুক্তি আছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এলজিইডির। কিন্তু চুক্তির নিয়ম উপেক্ষা করে স্থানীয় কৃষকের ফসলি জমি থেকে জোর করে মাটি তুলে প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তা বর্ধিত করছে ঠিকাদারের প্রতিনিধিরা।

স্থানীয় কৃষকরা তাদের ফসলি জমি থেকে মাটি কাটতে বাধা দিলে তাদের উল্টো হুমকি দেওয়া হচ্ছে। দুইপাশে খাল হওয়ায় রাস্তাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। ছাওয়ালপাড়া গ্রামের কৃষক রফিকুর ইসলাম বলেন, ‘আমরা এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে অবশ্যই রাস্তা চাই, কিন্তু আমাদের আলু, সরিষা, ধানসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট করে মাটি কেটে রাস্তা ভরাট করা হচ্ছে। বাধা দিতে গেলে ঠিকাদারের লোকজন সরকারি কাজে বাধা দিলে অসুবিধা হবে বলে হুমকি দিচ্ছেন।’

তরিকুল ইসলাম, হারুনুর রশিদসহ অনেক কৃষক বলেন, ‘ঠিকাদারের লোকজন বলেছিলেন— এটা সরকারি কাজ। তবে এখন আমরা নিশ্চিতভাবে জেনেছি, এই জমির মাটি কাটা সরকারের সিদ্ধান্ত নয়, ঠিকাদার করছেন ইচ্ছেমতো।’ কৃষকেরা এর ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

স্থানীয় ভাদসা ইউপির মেম্বার লিটন জানান, কয়েক ফুট গভীর করে মাটি খনন করছে। এতে প্রায় একশত কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের বাধা দিলে কথাও শোনেনি।

জয়পুরহাট সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অশোক ঠাকুর জানান, ঠিকাদারকে অন্য জায়গা থেকে মাটি কেনার জন্য এলজিইডি অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। তারপরও অসাধু ঠিকাদার অসহায় কৃষকের অর্থ না দিয়ে তাদের ফসলী জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি খনন করে যে ক্ষতি করেছে, তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।

এ নিয়ে কথা বলতে নওগাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইথান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রাসেলকে ফোন করা হলে তিনি জরুরি কাজে ব্যস্ত আছেন বলে লাইন কেটে দেন।

রাস্তার কাজের দায়িত্বে থাকা এলজিইডির (সদর) উপ-সহকারী প্রকোশলী নেওয়াজ শরিফ বলেন, ‘তারা সাইড থেকে মাটি নেবে, এমন পরামর্শ আমরা দেইনি। উনারা নিজ দায়িত্বে মাটি নিয়ে আসবেন। এখন উনারা জমি মালিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। নরমালি তারা দিতে পারে, অথবা ডিমান্ড করলে টাকা দিয়ে নিতে পারেন। অবশ্যই সেটা সমোঝতার মধ্যে দিয়ে হতে হবে। রাস্তার ডিজাইন অনুযায়ী কাজ বুঝে দেবে।’

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জয়পুরহাট সদর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মোবারক হোসেন জানান, বিষয়টি ঠিকাদারকে জানানো হয়েছে। ঠিকাদার অন্যত্র থেকে মাটি আনবেন। কৃষকের বা ফসলের ক্ষতি না করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা না হলে ঠিকাদেরর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।