জ্বালাও-পোড়াও করলে কোনও ছাড় নয়: প্রধানমন্ত্রী

লেখক:
প্রকাশ: ৬ মাস আগে

আন্দোলনের হুমকি-ধমকিতে পরোয়া করেন না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, জ্বালাও-পোড়াও-অগ্নিসংযোগ এগুলো যারা করবে, তাদের কোনও ছাড় নেই।

 

তিনি বলেন, যতই মুরুব্বি ধরুক, আর যা-ই ধরুক। এদের আমরা ছাড়বো না। মানুষের ক্ষতি যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের আগে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

 

 

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ছাড়া দেশের মানুষের কল্যাণ হবে না জানিয়ে এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তিকে আরও সুসংগঠিত হওয়ার পরামর্শ দেন।

 

১৪ দল নেতাদের তিনি বলেন, আপনারা এসেছেন, ভালো হয়েছে। আমি খুশি হয়েছি। সবার কথা শুনবো। কীভাবে কী করা যায়।

স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তিকে আরও সুসংগঠিত হয়ে মানুষের কাছে যেতে হবে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ছাড়া দেশের মানুষের কল্যাণ হবে না। গ্রেনেড হামলাকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি; ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে রোজই আন্দোলন, সরকার উৎখাতসহ নানা রকম হুমকি-ধমকি দেয়। যতক্ষণ জনগণ আছে সাথে ওটা আমি কেয়ার করি না।

‘তারপরও দেশে জ্বালাও-পোড়াও-অগ্নিসংযোগ এগুলো যেন না করতে পারে। এগুলো যারা করবে, তাদের কোনও ছাড় নাই। যতই মুরুব্বি ধরুক, আর যা-ই ধরুক। এদের আমরা ছাড়বো না। মানুষের ক্ষতি যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।’

 

রোহিঙ্গাদের নিয়ে তার উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রতিনিয়ত বাচ্চা হচ্ছে। তাদের জনসংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। এদিকে মিয়ানমারেও পরিস্থিতি ভালো নয়। তাদের তো আর ঠেলে দিতে পারি না। আলাপ-আলোচনা করে যাচ্ছি। যুদ্ধ করতে যাইনি, ঝগড়াও করতে যাইনি। কখন যে তাদের ফেরাতে পারবো, জানি না। আমরা তো রিফিউজি ছিলাম, তাদের কষ্ট বুঝি। তাদের ভাসানচরে নিচ্ছি। কিছু গেছে, আরও যাবে।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বাধাগুলো আছে সেগুলো অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছি। গাজায় গণহত্যা চলছে। আমরা এর প্রতিবাদ করছি। যেখানেই যাই, এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলছি। ইরানের প্রেসিডেন্ট মারা যাওয়ার ঘটনায় আমরা শোক দিয়েছি। শোক দিবসও পালন করেছি। যেখানেই মানুষ বিপদে পড়েছে, আমরা পাশে দাঁড়িয়েছি। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ নীতিতে কাজ করছি।

তিনি বলেন, সবচেয়ে সমস্যা ইনফ্লুয়েশন। এটা অনেক দেশের সমস্যা। এটা কমাতে পারলে ভালো হতো। রিজার্ভ আমাদের মতো অনেক দেশেরই কমে যাচ্ছে। আমাদের আপদকালীন সময়ের জন্য খাদ্য মজুত থাকলে রিজার্ভ কম কোনও সমস্যা না। তারপরও আমি এটা নিয়ে সচেতন করায়, এখন দেখি সবাই এটা নিয়ে কথা বলছে। এটা ভালো। অন্তত বললে, সবাই সচেতন থাকবে।

 

সবাইকে কৃষি উৎপাদনে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, নিজেদের চাহিদা পূরণে অনাবাদী জমি আবাদের আওতায় আনার উদ্যোগ নিতে বলেছি। গোপালগঞ্জে আমরা একটা সমিতির মাধ্যমে চাষাবাদ করেছি। সেখানে সবাই এটা করছে। এভাবে অনাবাদী জমি চাষের আওতায় আনলে আমাদের খাবারের অভাব হবে না। বরং রপ্তানি করতে পারবো। অবশ্য, এখনও সবজি-ফুল রপ্তানি হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সব সুযোগ-সুবিধার দেওয়ার পরও টেলিভিশন করে দেওয়ার পরও বলছে, কথা বলতে পারি না। ফেসবুকেও সমালোচনা, মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স। আমরাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশও এ ব্যাপারে সচেতন, কীভাবে এ সমস্যার মোকাবিলা করা যায়।

তিনি বলেন, স্কুলে ছেলেদের সংখ্যা কমছে। মেয়েদের সংখ্যা বেশি। এবারে মেয়েরা বেশি পাস করছে, ছেলেরা কম। এর কারণ খুঁজে বের করতে বলেছি। উচ্চশিক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ফান্ড থেকে আমরা সুবিধা দিচ্ছি।

 

সরকারপ্রধান বলেন, ২২ জেলা ও ৩৩৪ উপজেলা এখন ভূমিহীন গৃহহীন মুক্ত। বাকিগুলোও হবে। প্রত্যেক নাগরিক ২ শতক জমিসহ ঘর পাবেন। কোনও মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। অভুক্ত থাকবে না। পাশাপাশি নিরক্ষরও থাকবে না। সবাইকে পড়াশোনার আওতায় আনবো। বেকারও থাকবে না। কর্মসংস্থানের নানা সুযোগ সৃষ্টি করছি।

তিনি বলেন, বিএনপির অহমিকা ছিল, তারাই বড় দল। ২০০৮ এর নির্বাচনে মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছে, সেটাই তাদের ক্ষোভ। এরপর ২০১৪ সালে তারা নির্বাচনে আসেনি। এরপর থেকে তো বাংলাদেশে নির্বাচনই হতে দেবে না, এমন অবস্থা। হ্যাঁ, কোনও এক সাদা চামড়ার দেশ থেকে প্রস্তাব এসেছে, বাংলাদেশে তাদের ঘাঁটি করবে। সে সুযোগ দিলে তারা নির্বাচন করতে দেবে। আমি রাজি হইনি। আমি এই প্রস্তাব পাত্তা দিইনি, সোজা কথা। দেশের মানুষ আমাদের শক্তি। আমি তাদের ওপরই নির্ভর করি।

২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে না পারার কারণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাস বিক্রি নিয়ে অনেকদিন দেন-দরবার হয়। আমার একটাই কথা ছিল, দেশের চাহিদা পূরণ করে উদ্বৃত্ত থাকলে বিক্রি করবো। অতোবড়ো দেশ, এমন কথা তো সহ্য করবে না, এটাই স্বাভাবিক। বৈঠক হলো, খালেদা জিয়া রাজি হলো গ্যাস বিক্রির। আমি রাজি হইনি। আমি বলেছি, গ্যাস বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে হবে, এমন দৈন্যতা আমাদের নেই। আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, দেশের স্বার্থ বিক্রি করে ক্ষমতায় যাব না। পরে কিন্তু ক্ষমতায় আসতে পারিনি।

বৈঠকে ১৪ দলের শরীক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতারাও অংশ নেন।