সাংগঠনিক শক্তি, অতীত ভোটের হিসাব অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মূল রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এরপরও জোটের হিসাব-নিকাশ মেলাতে শরিক দলগুলোকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বারবার। আসন পুনর্বিন্যাস আর জোট-মহাজোটের মারপ্যাঁচের কারণে আলোচিত এ আসনের এবারও প্রার্থিতা নির্ভর করছে জোটের রূপ কেমন দাঁড়ায়, এর ওপর।
১৯৭৩ সালের পর এ আসনে কখনোই জয় পায়নি আওয়ামী লীগ। এমন অবস্থার জন্য কোন্দল আর প্রার্থীজটকেই দায়ী করা হয়। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরেও মনোনয়নপ্রত্যাশীর ছড়াছড়ি। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চান, এমন অন্তত ১৯ জন নেতা মাঠে তৎপর রয়েছেন। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে এখনো অনেকটা গা-ছাড়া ভাব। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্তত অর্ধডজন।
কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সাংগঠনিক শক্তি কিংবা জনসমর্থন সেভাবে না থাকা সত্ত্বেও ২০০৮ সালে মহাজোটের শরিক হিসেবে জাতীয় পার্টির (জাপা) জিয়াউল হক মৃধা প্রথমবারের মতো এই আসনের সাংসদ হন। ২০১৪ সালেও তিনি সাংসদ হন। জোট থাকলে এবারও তিনি মনোনয়নের বড় দাবিদার।
২০০১ সালে চারদলীয় জোটের কারণে বিএনপির টানা দুবারের সাংসদ আবদুস সাত্তারকে বাদ দিয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রয়াত চেয়ারম্যান ফজলুল হক আমিনীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। গত বছর আমিনীর ছেলে আবুল হাসানাত আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট ২০-দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যায়।
আওয়ামী লীগে কোন্দল
জোটের হিসাবের বাইরে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মঈনউদ্দিন মঈন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম ওরফে শিউলি আজাদও আলোচনায় আছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রথমে তাঁকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়। পরে দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। এর বাইরে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচন করা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল হালিমও মনোনয়নপ্রত্যাশী।
সরাইল থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আরও আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নাজমুল হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন ঠাকুর, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ তানবির হোসেন কাউছার, উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির দুই সদস্য সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফরহাদ রহমান ও সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তা শফিকুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান। মূলত দলীয় কোন্দলের কারণেই প্রার্থীর তালিকা এত দীর্ঘ।
আবদুল হালিম বলেন, ‘আমি এখানে দুবার নির্বাচন করেছি। দু-একজন দলীয় লোকের কারণে পরাজিত হয়েছি। এখন মাঠ আমার পক্ষে রয়েছে।’ শিউলি আজাদ বলেন, ‘দিনরাত এলাকায় কাজ করছি। আশা করি দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে।’
আশুগঞ্জে মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান আনসারী, বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম, ধানমন্ডি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমেদ, আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শফিউল্লাহ মিয়া, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হান্নান ও নারীনেত্রী সাদেকা আক্তার।
মঈনউদ্দিন মঈন বলেন, ‘দল এবার পরিচ্ছন্ন ইমেজের প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবে। তাই মনোনয়ন পাব বলে আশা করছি।’ কামরুজ্জামান আনসারী বলেন, ‘এবার এ আসনে নৌকার প্রার্থীর প্রয়োজন। মনোনয়ন পাব বলে আশা করছি।’ শাহজাহান আলম বলেন, ‘এখানে দলীয় কর্মকাণ্ডকে বেগবান করতে নৌকার প্রার্থীর প্রয়োজন। আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।’
বিএনপিতে গা-ছাড়া ভাব
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে চারবারের সাংসদ ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াই মূল প্রার্থী। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মো. শামীম ও আশুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু আসিফ আহমেদের নামও শোনা যায়। এ ছাড়া সরাইল উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি এস এন অরুণ দে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে তাঁদের তৎপরতা ব্যানার-ফেস্টুনের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি এখানে যতবার প্রার্থী হয়েছি, ততবার বিজয়ী হয়েছি। আশা করি দল আমাকে বিবেচনায় নিলে আসনটি উদ্ধার করতে সক্ষম হব।’ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এক-এগারোর পর আমি ছাড়া এলাকায় কাউকে তেমন মাঠে দেখা যাচ্ছে না। চলমান আন্দোলনেও তাঁদের কোনো ভূমিকা নেই। তাঁরা ব্যানার-ফেস্টুনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছেন। আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।’
সুবিধায় জাপা
একসময় এখানে সাংগঠনিক অবস্থা শক্তিশালী না থাকলেও কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউল হক জাপার ভিত্তি মজবুত করতে সক্ষম হয়েছেন। জিয়াউল হক মৃধা বলেন, ‘দলীয় প্রধান আমাকে চিঠি দিয়ে আমার মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন। জোট থাকলে আমিই এখানে জোটের প্রার্থী হব। আমি দুবার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে যেভাবে এলাকার রাস্তাঘাট ও সেতু নির্মাণ করেছি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিদ্যুতের উন্নয়ন করেছি, তা আগে হয়নি।’ এ ছাড়া প্রচারণা আছে মুফতি আবুল হাসানাত আমিনী নির্বাচন করতে পারেন। জাতীয় পার্টির (জেপি) কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান জামিলুল হক বকুলও নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন।