নব্বুইয়ের দশকের শেষ তিন বছর এবং দুই হাজার সাল থেকে ২০১২ পর্যন্ত যাদের জন্ম, তাদের বলা হচ্ছে ‘জেনারেশন জেড’ বা সংক্ষেপে ‘জেন-জি’। এর সঙ্গে আই-জেনারেশন, জেন টেক, নেট জেন, জুমার্স সহ আরও নানারকম নাম রয়েছে, যার বড় কারণ হলো ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা। যুক্তরাষ্ট্রের তরুণদের নিয়ে প্রথম এমন আলোচনা শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। এরপর তা খুব দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৭-২০১২ সময়কালে জন্ম নেওয়া প্রত্যেকের বয়স এখন ১২ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে। এর আগের প্রজন্ম হলো মিলেনিয়াল জেনারেশন। তাদের সংক্ষিপ্ত নাম ‘জেন-ওয়াই’। আর তারও আগের প্রজন্মের নাম জেনারেশন এক্স। এই তালিকারই ক্রম অনুযায়ী ‘জেড’ বা ‘জি’ এসেছে, যে নামটি এখন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। বিভিন্ন দেশেই এখন তরুণদের বয়সভিত্তিক পরিচয় বোঝাতে ‘জেন-জি’ ঘরানার শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে।
মোটাদাগে জেন-জি কারা, সেটি না হয় বোঝা গেলো। কিন্তু বিশদভাবে বলতে গেলে, তাদের বৈশিষ্ট্য কেমন?
মূলত এই প্রজন্ম হলো প্রকৃত ডিজিটাল প্রজন্ম। এর আগের প্রজন্ম ইন্টারনেটের উত্থান দেখলেও তারা ডিশ ক্যাবল সংযুক্ত টেলিভিশন দেখেছে, ল্যান্ডফোনও ব্যবহার করেছে। কিন্তু জেন-জি গোত্রের অধিকাংশই বড় হয়েছে একধরনের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের সময়ের মধ্য দিয়ে। এই প্রজন্মের অনেকেই একেবারে ছোটবেলা থেকেই ফেসবুক ব্যবহার করছে, অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে সময় কাটাচ্ছে; কিন্তু এর আগের প্রজন্মের বেড়ে ওঠা এমন ছিল না। এখন জেন-জি’র অনেক সদস্যরাই স্মার্টফোন আসার আগের কোনো জীবনের কথা মনে করতে পারে না। আবার, জেন-জি বড় হয়েছে আইফোনের যুগে। ২০০৭ সালে অ্যাপলের আইফোন প্রথম বাজারে আসে, যার প্রতিটি সংস্করণই সময়ের চেয়ে এগিয়ে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাপটে বললে, জেন-জি’রা বড় হওয়ার প্রথমদিকের বছরগুলোতে সে দেশে কিছু সামাজিক রূপান্তর দেখা দেয়। প্রথম কৃষাঙ্গ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাকা ওবামা দায়িত্ব নেন। কিছু সামাজিক রীতিনীতিতেও পরিবর্তন আসে। আমেরিকানদের মধ্যে জেনারেশন জেড হয়ে ওঠে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় প্রজন্ম, কারণ তাদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ নৃতাত্ত্বিক ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন হিস্পানিক। বলা হয়, আগের প্রজন্মের তুলনায় তাদের মধ্যে অনেকের বাবা অথবা মা বিদেশি বংশোদ্ভূত হওয়ার সংখ্যাও বেড়েছে। অর্থাৎ জাতিগত মিশ্রতা তৈরি হয়েছে এতে।
আরও একটি বিষয় হলো, জেন-জি সাধারণত শহর বা মহানগর এলাকার বড় হচ্ছে। এদের খুব সীমিত একটা অংশ বেড়ে উঠছে গ্রামাঞ্চলে। বিশ্বকোষ ব্রিটানিকা বলছে, জেন-জি এর সবচেয়ে বয়স্ক সদস্যরা বিয়ের ক্ষেত্রে দেরি করেছেন। এদের মাত্র ৪ শতাংশ ১৮ থেকে ২১ বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে করছেন। এই হার তাদের আগের প্রজন্মের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।
অন্যদিকে কিছু প্রতিবেদনে জেনারেশন জেডের সদস্যদের আগের প্রজন্মের চেয়ে বেশি বাস্তববাদী এবং অল্পবয়সে দ্রুত পরিপক্ব হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই প্রজন্মের মাঝে ক্যারিয়ার নির্ধারণে সতর্কতা, শিক্ষা বা ডিগ্রি অর্জনের হারও বেড়েছে। আবার এই প্রজন্মেরই অনেকের বাবা-মায়েরা উচ্চশিক্ষিত, যেটিও আগের তুলনায় বেশি। তবে জেন-জি’র সদস্যরা ক্যারিয়ার সচেতন হওয়ার একটি কারণ হতে পারে, আগের প্রজন্মের মাঝে আর্থিক সমস্যা ও কর্মসংস্থানে অস্থিরতাসহ নানা সমস্যা দেখা। অনেকের বাবা-মা ছিলেন এক্স জেনারেশনের। তাদের ক্ষেত্রে এসব সমস্যা দেখে থাকলে জেন-জি’রা শৈশবে একধরনের সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল। যেটি তাদের মধ্যে এখন অনেকবেশি সচেতনতা তৈরি হওয়ার কারণ। সবশেষে কোভিড মহামারীও এই প্রজন্মকে নতুন করে প্রভাবিত করেছে।