আঁশযুক্ত মাংস যথা গরু, খাসি, উট, হাঁস ইত্যাদির মাংস রান্নার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো, অনেক সময় ঠিকমতো সেদ্ধ হয় না। যার ফলে মাংস শক্ত থেকে যায়। মাংস রান্না করতে গিয়ে এই সমস্যায় পড়েননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সেজন্যই মূলত জানা দরকার কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করলে সহজেই মাংস ভালোভাবে সেদ্ধ হয়। সাথে মাংসের আঁশগুলোও নরম হয়ে যায়।
মাংস সেদ্ধ না হলে মাঝেমধ্যে বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও পড়তে হয়। বাসায় মেহমান এলে বা কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজনে এই সমস্যাটির জন্য বিব্রত হতে হয়। আবার নতুন কোনো রেসিপি তৈরি করতে গিয়ে, সেই রেসিপিটিও নষ্ট হয়। অনেকেই ভাবেন মাংসের আঁশ নরম করে রান্না করার পদ্ধতিটি খুবই কঠিন। আসলে একদমই তা নয়। মাংস নরম করে রান্না করতে খুব বেশি পরিশ্রমেরও দরকার নেই।
আজ মাংস ভালোভাবে সেদ্ধ করে রান্না করার জন্য ৮টি সহজ টিপস নিয়ে এসেছি। এজন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়, সময়ের ব্যয় বা পরিশ্রম কোনোটিরই প্রয়োজন হবে না। এই টিপসগুলো জানা থাকলে যেকেউ সহজেই মাংস সঠিকভাবে সেদ্ধ করে রান্না করতে পারবে। চলুন তাহলে পদ্ধতিগুলো জেনে নিই
১. মাংস কাটার ব্যাপারে সর্তক হোন
রান্না করার পর ভালোভাবে সেদ্ধ হবে নাকি, তার অনেকটাই নির্ভর করে মাংস সঠিকভাবে কাটা হয়ে কিনা। খেয়াল রাখবেন মাংস কাটার সময় আঁশগুলো যেন থেতলে না যায়। ছুড়ি বা বটি যাই ব্যবহার করুন, তার ধার থাকতে হবে। মাংস কাটতে ধারবিহীন কিছু ব্যবহার করলে আঁশগুলো থেতলে যাবে। সেজন্য সঠিকভাবে মাংস কাটার অভ্যাস করুন।
২. মাংস মেরিনেট করুন
মাংসের আঁশ কোমল করতে মেরিনেটের বিকল্প নেই। মেরিনেট না করলে মাংস সেদ্ধ হতে সময় নেয় আবার ঠিকমতো সেদ্ধও হয় না। মাংস মেরিনেট করতে এসিডিক উপাদান যেমন – লেবু, ভিনেগার, দই ইত্যাদি ব্যবহার করুন। মেরিনেট করার ফলে মাংসে কেবল নতুন ফ্লেভারই যুক্ত হবে না, কম সময়ে ভালোভাবে সেদ্ধও হবে। তবে খুব দীর্ঘসময় ধরে মেরিনেট করার দরকার নেই। ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টা মেরিনেট করলেই হবে। এরথেকে বেশি সময় না নেয়াই ভালো।
৩. লবণ ব্যবহার করুন
রান্নার আগে যদি মাংস মেরিনেট না করে থাকেন, তাহলে লবণের ব্যবহার করবেন। যদি মেরিনেট করতে পছন্দ না করেন বা মেরিনেটের ফ্লেভার ভালো না লাগে, তাহলে রান্নার ২৪ ঘণ্টা পূর্বে লবণ দিয়ে মেখে ফ্রিজে রেখে দিন। এভাবে লবণ ব্যবহার করার ফলে মাংসের আঁশের ভেতর থেকে কোমল হবে। লবণ মেখে রাখার ফলে মাংস গাঢ় লালচে রঙের হবে। এতেই আপনি বুঝবেন মাংস নরম হতে শুরু করেছে।
৪. মাংস স্বাভাবিক তাপমাত্রায় নিয়ে রান্না করুন
যেসব প্রাণী ঘাস খায়, সেগুলোর মাংস রান্নার ক্ষেত্রে এই টিপসটি বেশ কার্যকর। ঘাস খাওয়ার ফলে এই ধরনের প্রাণীদের মাংস বেশ শক্ত হয় এবং সেদ্ধ হতে সময় লাগে। এজন্যই রান্নার পূর্বে মাংস স্বাভাবিক তাপমাত্রার করে নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাংস ফ্রিজে থাকলে রান্নার কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে ফ্রিজ থেকে বের করে পানিতে ভিজিয়ে রেখে স্বাভাবিক করে নিন।
৫. সময় নিয়ে অল্প পরিমাণে রান্না করুন
যেকোনো রান্নার ক্ষেত্রেই তাড়াহুড়ো ব্যাপারটা ক্ষতিকর। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভালো কোনো রেসিপিও ঠিকঠাক রান্না হয় না। আর মাংস রান্নার বেলায় তো একদমই তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। মাংস রান্নার জন্য হাতে সময় নিয়ে তৈরি হোন। কোনোমতেই অল্প সময় নিয়ে রান্না করতে চাইবেন না। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে চুলা বা ওভেনে অতিরিক্ত তাপ দিলে মাংস ঠিকঠাক সেদ্ধ তো হবেই না, স্বাদও নষ্ট হয়ে যাবে।
আরেকটি ব্যাপার হলো খুব বেশি প্রয়োজন না হলে অধিক পরিমাণে মাংস একসাথে রান্না করবেন না। বেশি মানুষের আয়োজন হলে প্রয়োজনে অল্প অল্প করে কয়েকবারে রান্না করুন। অতিরিক্ত মাংস সাধারণ চুলা, প্রেশার কুকার, ওভেন ইত্যাদিতে রান্না করতে গেলে পুরো পাত্রে ভালোভাবে তাপ পৌঁছায় না। ফলে কিছু অংশের মাংস সেদ্ধ হয়, কিছু অংশের হয় না। সেজন্য পরিমাণে অল্প করে রান্নার চেষ্টা করুন।
৬. রান্নার তাপের ক্ষেত্রে যত্নবান হোন
অতিরিক্ত রান্না যেমন মাংস শক্ত করে দিতে পারে, তেমনই কম তাপে করা মাংসও শক্ত থেকে যায়। সেজন্যই মাংসভেদে কতটুকু তাপ দিতে হবে তার ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা রাখুন। অতিরিক্ত তাপ বা কম তাপ দুটোই রান্নার জন্যে ক্ষতিকর। স্বাভাবিক ভাবে সব মাংসই ১২৫°-১৯৫° ফারেনহাইট তাপমাত্রায় রান্না হয়। তবে মাংসভেদে তাপের কিছুটা তারতম্য হতে পারে। সে ব্যাপরে খেয়াল রাখুন।
৭. মাংসের বিশ্রাম নিশ্চিত করুন
এই পয়েন্টটি পড়ে নিশ্চয়ই ভাবছেন, মাংসের আবার বিশ্রাম কি! তাই না? আসলেই মাংসের বিশ্রাম প্রয়োজন। রান্না শেষ হওয়ার পর চুলা থেকে নামিয়েই খাওয়া শুরু করবেন না। কিছুটা সময় রান্নার পাত্রেই মাংস রেখে দিন। চুলায় একটু অল্প সেদ্ধ হওয়া আঁশগুলো নরম হওয়া বাকি থাকলেও রান্নার পর ভাপে বাকিটুকু হয়ে যাবে।
তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই পাত্রটি ঢেকে রাখবেন। মাংসের তরকারির বা রোস্টের জন্য ১০ মিনিট সময় হলেই হয়। আর স্টেক বা গ্রিল জাতীয় রান্নার বেলায় ১ ইঞ্চি পুরু মাংসের জন্য ৫ মিনিট করে সময় দিন।
৮. আঁশের বিপরীত দিক থেকে মাংস কাটুন
প্রথম পয়েন্টটিতেই মাংস সঠিকভাবে কাটা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তার বর্ণনা করেছিলাম। এই পয়েন্টটিও মাংস সঠিকভাবে কাটার পদ্ধতি নিয়ে। আঁশযুক্ত মাংস সবসময় আঁশের বিপরীত দিকে কাটবেন। এতে শুধু ভালো সেদ্ধই হয় না, মাংস চাবানোতেও সুবিধে হয়।