জিয়াংসুর ৮ কোটি নাগরিকের মধ্যে দরিদ্র ১৭ জন!

:
: ৪ years ago

গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের একটি প্রদেশ দাবি করেছে, তাদের জনসংখ্যা ৮ কোটিরও বেশি। অথচ মাত্র ১৭ জন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের জিয়াংসু প্রদেশের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের খুবই কম সংখ্যক ব্যক্তি বছরে ৬ হাজার ইউয়ানের (৮৬৩ মার্কিন ডলার) নিচে আয় করে থাকে। তাদের সংখ্যা মাত্র ১৭ জন। রাষ্ট্রের ফলপ্রসূ ক্যাম্পেইনের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে।

প্রদেশটির দারিদ্র্যসীমার মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বছরে ৬ হাজার ইউয়ানের নিচে আয় করলে সে দরিদ্র।

তবে প্রদেশটির কর্তৃপক্ষ দরিদ্র ব্যক্তির যে সংখ্যা ঘোষণা করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এক ব্যক্তি বলেছেন, ‘আমি এটা বিশ্বাস করি না। প্রদেশটিতে কি কোনো বেকার লোক নেই। ভিক্ষুক নেই।’

চীন সরকারের লক্ষ্য দেশটি থেকে চিরতরে দারিদ্র্য নির্মূল করা। আর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত জিয়াংসু দেশটির সম্পদশালী প্রদেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

গত বছরের শেষে জিয়াংসু প্রদেশের একটি পরিসংখ্যান বলছে, গত চার বছরে ২০ লাখেরও বেশি জনসংখ্যাকে দারিদ্র্যসীমা থেকে বের করে আনা হয়েছে। এর আগে প্রদেশটি থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, ২০২০ সালের মধ্যে জরুরিভিত্তিতে দারিদ্র্যসীমা শূন্যের কোটায় নিয়ে আনা হবে।

প্রদেশ কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে চীনা গণমাধ্যম বলছে, যে ১৭ জন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছেন, তারা কর্মক্ষম। এদের মধ্যে চারজন অসুস্থ হয়ে ভুগছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মন্দা সত্ত্বেও চীনা অর্থনীতি প্রতিবছর ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মানে হলো দেশটি দিন ধনী থেকে আরও ধনী হচ্ছে। তবে জিয়াংসু প্রদেশ কর্তৃপক্ষ যে দাবি করেছে, তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।

‘তারা এতটা নিশ্চিত কীভাবে হলো?’- চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এ ধরনের প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন ক্ষুব্ধ নেটিজেনরা।

তবে জিয়াংসু প্রদেশ দারিদ্র্য নিরসনে নিজেদের কৃতিত্ব দাবি করলেও কিছু ব্যক্তি বিশেষের ঘটনা কিন্তু তাদের সেই দাবির পক্ষে যাচ্ছে না।

২০১৯ সালে জিয়াংসু প্রদেশে এক ছাত্রকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে তার চিকিৎসায় প্রায় ১০ লাখ ইউয়ান সংগ্রহ করা হয়। জানা যায়, পাঁচ বছর ধরে ওই ছাত্রের দৈনিক আয় ছিল ২ ইউয়ান (বাৎসরিক ৭২০ ইউয়ান)। এই আয়ের ওপরই তাকে চলতে হতো। এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।

তার আগের বছরে ঘটে আরেকটি ঘটনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ছবিতে দেখা যায়, একটি ছেলে হিমশীতল বরফে আচ্ছাদিত তার মাথার চুল, যা তার পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার ইঙ্গিত দেয়। আর্থিক দুরবস্থার ‘লিটল ওয়াং’ নামে আরেকটি শিশুর ছবিও ভাইরাল হয়।

বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, চীনের দারিদ্র্যসীমা নিরূপণের নির্দিষ্ট কোনো মানদণ্ড নেই। একেক প্রদেশে দারিদ্র্যসীমার মানদণ্ড একেক রকম। তবে চীনের দারিদ্র্যসীমার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জাতীয় মানদণ্ড হলো বার্ষিক ২ হাজার ৩০০ ইউয়ান (৩৩১ মার্কিন ডলার)।

ওই মানদণ্ড অনুযায়ী, ২০১৭ সালের এক পরিসংখ্যান বলছে, সমগ্র চীনে ৩০ মিলিয়ন (৩ কোটি) জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে।

বিশ্বব্যাংকের মতে, যাদের দৈনিক আয় ১.৯ মার্কিন ডলারের নিচে তারা দারিদ্র্য। সেখানে জিয়াংসু প্রদেশে দৈনিক ২.৪০ মার্কিন ডলার আয়কে দারিদ্র্যসীমার মানদণ্ড ধরা হয়।

চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের এক পরিসংখ্যান মতে, ২০১৮ সালে চীনে মাথাপিছু আয় ছিল ২৮ হাজার ২২৮ ইউয়ান (৪ হাজার ৫৯ মার্কিন ডলার)। শহরে এ সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ২৫১ ইউয়ান। এ সংখ্যা গ্রামে ছিল অনেক কম, ১৪ হাাজর ৬১৭ ইউয়ান।