আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের (এএমইউ) ছাত্র সংসদের অফিসের দেয়ালে দ্বিজাতিতত্ত্ব প্রণেতা ও পাকিস্তানের জনক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবি রাখাকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় জিন্নাহর কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে কট্টর হিন্দুত্ববাদী ছাত্র সংগঠন হিন্দু যুবা বাহিনী। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরে স্থানীয় সাংবাদিকদের আটকে রেখে মারধর, তাদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে সেখানকার ছাত্রদের বিরুদ্ধে।
গুজব ছড়িয়ে পড়ার জেরে অশান্তি মাথাচাড়া দেয়ার আশঙ্কায় আলিগড় জেলায় শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবাও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
কিছুদিন আগে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রের রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘপন্থী আরএসএসের শাখা খোলার অনুমতি চেয়ে আবেদন বাতিল হওয়ার পরপরই স্থানীয় বিজেপি সাংসদ সতীশ গৌতম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তারিক মনসুরকে চিঠি দিয়ে জিন্নার ছবি রাখার কারণ জানতে চেয়েছেন। আর এ থেকেই অশান্তির সূত্রপাত।
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিয়ন হলে মোহাম্মদ আলি জিন্নাহর ছবি থাকায় হিন্দু যুবা বাহিনীর কয়েকজন কর্মী গত ২ মে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢুকে স্লোগান দেন। পরে এটি মারামারিতে রূপ নেয়। এ সময় ছাত্ররা স্থানীয় সাংবাদিকদের ভেতরে ডেকে বেধড়ক মারধর করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। মারধরের পাশাপাশি তারা সাংবাদিকদের ক্যামেরা কেড়ে নেয়ারও চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠন হিন্দু যুবা বাহিনী কর্মীদের গ্রেফতারি দাবি করেছে।
এ ব্যাপারে মুসলিম সংগঠন জমিয়ত উলেমা এ হিন্দের মহাসচিব মৌলানা মেহমুদ মাদানি বলেছেন, তাদের পূর্বপুরুষরা জিন্নাকে কখনও আদর্শ বলে মানেননি। তার দ্বিজাতিতত্ত্ব তাদের কাছে সমর্থন পায়নি। এ সময় তিনি ওই ছবি সরিয়ে ফেলার জন্য আলিগড়ের ছাত্রদের অনুরোধ করেন।
এদিকে ছবি বিতর্কের জেরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কট্টর হিন্দু গোষ্ঠী। তারা ছাত্রদের টয়লেটের দেয়ালে জিন্নাহর পোস্টার সেটে নিচে লিখেছে, জিন্নাহর এএমইউয়ে ঠাই হবে না, ওর জায়গা হবে ভারতের শৌচাগারে।
ভারত মুসলিম মহাসংঘ নামে একটি সংগঠনের প্রধান ফারহাত আলি খান বলেছেন, পাকিস্তানে কোনও সংগঠন নিজেদের দফতরে স্বাধীনতার সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের ছবি টাঙায় না। একই নীতি থাকা উচিত ভারতেও। আমি আবেদন করছি, জিন্নাহ ও তার মতো লোকদের পোস্টার ছিড়ে ফেলুন। যে ওর ছবি পুড়িয়ে দিতে পারবে, তাকে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেব। ভারতের মুসলিমরা জিন্নাহ, পাকিস্তান-উভয়কেই ঘৃণা করে বলেও জানান তিনি।
এদিকে মোহাম্মদ আলি জিন্নাহর ছবি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা নিয়ে চলমান বিতর্ক অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আঠওয়ালে। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, স্বাধীনতার আগে জিন্নাহর ছবি টাঙানো হয়েছিল এএমইউয়ে। ফলে এতে অন্যায়ের কিছুই নেই। তবে দেশের জনমত, সেন্টিমেন্ট ওই ছবি রাখার বিরুদ্ধে হলে তা মাথায় রেখে ছবি সরিয়ে দেওয়াই যায়।
প্রসঙ্গত, আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ কার্যালয়ে জিন্নাহর ছবিটি রয়েছে দশকের পর দশক ধরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইফি কিদওয়াই মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ১৯৩৮ সালে জিন্নাহ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। সে সময় তাকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়। তখন থেকে ছবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম আজীবন সদস্যপদ দেওয়া হয়েছিল মহাত্মা গান্ধীকে ১৯২০ সালের ১৯ অক্টোবর। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কোনো জাতীয় নেতা এই ছবি সরানোর দাবি কখনও তোলেননি।