‘জালাল সাইফুর দক্ষ, কর্মঠ, সৎ ও চৌকস অফিসার ছিলেন’

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন প্রশাসনের উপসচিব জালাল সাইফুর রহমান। বিসিএস প্রশাসন সার্ভিসের ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তা জালাল সাইফুর দুর্নীতি দমন কমিশনে পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

সোমবার (৬ এপ্রিল) সকালে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে মারা যান তিনি। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত সোমবার থেকে সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার স্ত্রী সন্তানরাও আইসোলেশনে আছেন।

জালাল সাইফুর কর্মজীবনে একজন সৎ, দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তা ছিলেন। ছিলেন একজন ভালো মানুষ। কিন্তু মাত্র ৪৫ বছর বয়সে করোনার থাবায় জীবনের পাঠ চুকাতে হয়েছে তাকে। সহকর্মী, বন্ধু ও সিনিয়র কর্মকর্তাদের স্মৃতিচারণায় উঠে এসেছে জামাল সাইফুরের কর্মময় জীবনে নানা গুণের কথা।

জালাল সাইফুর ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছাড়াও মাঠ প্রশাসনে বিভিন্ন স্থানে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন বলে জানিয়েছেন সহকর্মীরা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেয়ার আগে তিনি ১৭তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে কাজ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ছাড়াও একপুত্র ও এক কন্যা রেখে গেছেন।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের একান্ত সচিব (পিএস) মো. রেজাউল আলম ও জালাল একই ব্যাচের কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘ও (জালাল সাইফুর) খুবই হাসিখুশি, কারো সঙ্গে তাকে রাগ করতে দেখিনি। অসাধারণ একটা ভালো মানুষ ছিল, আমার ব্যাচমেট, এটা আমার ভালো করে জানা। ওর এক ছেলে ও এক মেয়ে। ভাবি ও বাচ্চারাও মনে জয় আইসোলেশনে। এই মুহূর্তে যে তাদের সান্ত্বনা জানাব সেটারও উপায় নেই। ঘর থেকে তো বের হওয়া যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘আমি খুবই মর্মাহত, অসম্ভব রকমের একজন ভালো মানুষ ছিল সে।’

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের ফেসবুক গ্রুপে জালাল সাইফুর রহমানের মৃত্যু নিয়ে একটি পোস্ট দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়, ‘জালাল সাইফুর রহমান সরকারের একজন দক্ষ, সৎ এবং খুবই পরিশ্রমী কর্মকর্তা ছিলেন।’

সেই পোস্টে কমেন্ট করে তাদের অনুভূতি জানিয়েছেন সহকর্মী, বন্ধু, পরিচিত ও সিনিয়ররা।

অবসরে যাওয়া সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ফেসবুক কমেন্টে লিখেছেন, ‘জালাল সাইফুর একজন দক্ষ, কর্মঠ, সৎ ও চৌকস অফিসার ছিলেন। আমি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার থাকাকালে সে কসবার ইউএনও ছিল। তার অকাল মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। আল্লাহপাক তাকে শহীদি মর্যাদাসহ বেহেস্ত নসিব করুন। দোয়া করি, তার পরিবারের প্রতি আল্লাহ পাকের রহমত বর্ষিত হোক।’

তৌফিক হাবিব নামের একজন লিখেছেন, ‘ভাবতেই পারছি না তিনি আর নেই। গত মাসের ৪ তারিখেই দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক পদের ভাইভার সময় তার সাথে পরিচিত হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। তার কথা, চিন্তা, পরিকল্পনার কথা শুনে আমরা সবাই মুগ্ধ হয়েছিলাম। তার থেকে শেখার অনেক ইচ্ছা ছিল। তার মতন এমন একজনের অকাল প্রস্থান সত্যিই অনেক বেদনাদায়ক।’

আজিজ রায়হান নামের একজন লিখেছেন, ‘স্যারের সাথে অনেক কাজ করেছি। তিনি যেমন সৎ ও নিষ্ঠাবান। স্যারকে জান্নাতের সর্বোচ্চ আসন দান করুন, আমিন।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লিখেছেন, ‘আল্লাহ স্যারকে বেহেশত নসিব করুন। জাতির এই ক্রান্তিকালে আমরা হারালাম একজন সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাকে। আল্লাহ তাঁকে শহীদের মর্যাদা দান করুন। হে রাব্বুল আলামিন সকল রোগ, মহামারি ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষা করুন।’

ফজলুল করিম লিখেছেন, ‘অনুজ সহকর্মী জালাল সাইফুর রহমান মারা গেছেন। আমি যশোরে এডিসি থাকাকালীন জালাল প্রবেশনার ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাতবাসী করুন। আমিন।’

মোহাম্মদ রবিউল হাসান লিখেছেন, ‘আল্লাহ পাক তাকে জান্নাত দান করেন। স্বল্প বয়সের এই সরকারি কর্মকর্তার অকাল মৃত্যুর জন্য খুব অসহায় বোধ করছি। পরিবারকে শোক সহ্য করার শক্তি দাও।’

তানভীর ইবনে আলম লিখেছেন, ‘আমাদের কসবা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। খুবই সৎ ও ভালো মানুষ ছিলেন।’

পাপ্পু ইসলাম লিখেছেন, ‘কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। ভালো লোক ছিলেন। আল্লাহ উনাকে বেহেশতে নসিব করুন-আমিন।’

এক শোকবার্তায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, ‘তিনি ছিলেন একজন সৎ, দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তা। তিনি ছিলেন দেশ ও জনগণের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। তার মৃত্যুতে দেশ একজন মেধাবী কর্মকর্তাকে হারাল।’

প্রতিমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুনও তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।