জাপানে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

টোকিও (জাপান), ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ :: জাপানের টোকিওস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ও মর্যাদায় মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে । আজ ২১-০২-২০২১ (রবিবার) সকালে অনুষ্ঠান শুরু হয় ভাষা শহিদদের স্মরণে দূতাবাসের অস্থায়ী শহিদ মিনার বেদীতে পুস্পাস্তবক অর্পণের মাধ্যমে।

জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব শাহাবুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা- কর্মচারী পুস্পাস্তবক অর্পণ করেন। অনুষ্ঠানের পরবর্তী অংশে দূতাবাস প্রাঙ্গনে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর সাথে সাথে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন রাষ্ট্রদূত। অতঃপর ভাষা শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ এবং জাপান সরকার কর্তৃক জারিকৃত বিভিন্ন দিক নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূতাবাস এবছর অনলাইনে শহিদ দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। শহিদ দিবস উপলক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেয়া বানী পাঠ করা হয়। এছাড়া ভাষা শহিদদের আত্মার মাগফেরাত ও বাংলাদেশের সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

আলোচনা অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমদ, এসময় তিনি ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও তাৎপর্য তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সাথে অবিচ্ছিন্নভাবে মিশে আছে ভাষা আন্দোলন এবং ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ দিনটি। তিনি মহান ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতার ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন, ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন এবং ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। ফলে ‘একুশ’ এখন সার্বজনীন, ‘একুশ’ এখন পুরো বিশ্বের। ‘একুশ’ এখন বিশ্বের মানুষের কাছে সংগ্রাম ও মর্যাদার প্রতীক। ‘একুশ’ আমাদের প্রেরণা, ‘একুশ’ আমাদের শিক্ষা দেয় অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করার।

অনলাইন আলোচনায় অংশ নিয়ে জাপান বাংলাদেশ সোসাইটির (জেবিএস) প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে জানান জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নে জেবিএস আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেক্রেড হার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মাসাকি ওহাসি বাংলা ভাষার ব্যবহার নিয়ে বাংলায় আলোচনা করেন। এছাড়া ভিডিও বার্তায় জাপানিজ ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কো এর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল জনাব ইয়োশিয়াকি ইশিদা এই অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রন জানানোর জন্য রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান। তোশিমা সিটির মেয়র জনাব ইউকিও তানাকো তাঁর ভিডিও বার্তায় বলেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস জাপানিদের তাঁদের মাতৃভাষার কথা মনে করিয়ে দেয়, তিনি জানান তোশিমা সিটি টোকিও অলিম্পিকে বাংলাদেশ দলকে আতিথিয়তা দিবে। জাপান প্রবাসী বাংলাদেশি কমিনিউটির নেতৃবৃন্দও এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। বক্তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ভাষা সৈনিক ঘোষণার প্রস্তাব করেন এবং বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় সবাইকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে ভাষা আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। জাপানি নাগরিক ও প্রবাসী বাংলাদেশিসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অতিথি এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা- কর্মচারীগণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন ।