সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামোর বৈষম্য দূর করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সরকারি কর্মচারীরা নতুন পে-স্কেল পেতে পারেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, নতুন বেতন কাঠামোতে যাতে কোনো অসমতা না থাকে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৬ মার্চের মধ্যে বেতন বৈষম্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
বেতন বৈষম্য নিরসনে সরকার ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল। কমিটি গত দুই বছরে তেমন দৃশ্যমান কোনো কাজ করেনি। ফলে বৈষম্য দূর করা যায়নি। এ অবস্থায় সরকারের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। তাই, মূল্যস্ফীতির চাপ ও জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনের আগে নতুন বেতন কাঠামো দিতে আগ্রহী সরকার।
বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদ শেষ হতে এখনো প্রায় দুই বছর বাকি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ২০২৩ সালের শেষদিকে হওয়ার কথা আছে। এ বিষয়টি সামনে রেখে অর্থ বিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কাজ করছে।
গত ১৩ বছরে টেকসই উন্নয়নের বেশকিছু সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট হওয়ার সুযোগ থাকলেও সুশাসন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়ে নানা সমালোচনা আছে। বিশ্বজুড়ে টানা দুই বছর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। এ সময়ে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। অন্যদিকে, বাকি ৩০ শতাংশের মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশের আয় বেড়েছে বহুগুণ। এতে দেশে আয় বৈষম্য তৈরি হয়েছে। এ ধরনের অসমতায় চরম সংকটের মুখে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবন-জীবিকা। এরই মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, যিনি বেতন ও ভাতা নিয়ে কাজ করেন, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারের বেতন বাড়ানোর এ উদ্যোগ অসাধারণ। যদিও একটি জাতি কতটা উন্নতি করছে এটি তার একমাত্র প্যারামিটার নয়। গত পাঁচ বছরে জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। একই সঙ্গে জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। তবে, জীবনযাত্রার ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়লেও মূল্যস্ফীতির চাপ সহনীয় বলে মনে করে সরকার। আর খুব কম লোকের আয় বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের আয় খুবই সীমিত ও স্থির। এজন্য নতুন বেতন কাঠামো প্রয়োজন। তবে, এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আশা করছি, আগামী নির্বাচনের আগে সরকার নতুন বেতন কাঠামো দিতে পারবে।’
সর্বশেষ বেতন কাঠামো ২০১৫ সালে ঘোষণা করা হয়েছিল, যা এখনো কার্যকর আছে। সরকারি কর্মচারীরা মনে করেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন বেতন কাঠামো দিয়ে সরকার তাদের খুশি রাখতে চায়। তারা মনে করেন, বেতন বাড়ালে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনে উদ্দীপনা সৃষ্টি হতে পারে।
এর আগে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সরকারি কর্মচারীদের জন্য তিনটি ‘বিশেষ ইনক্রিমেন্ট’ এবং ‘নবম বেতন কমিশন’ গঠনের জন্য গত ২৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আবেদন করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ৩ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে।