জাতীয় স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল

:
: ২ years ago

সবুজ ঘাস, রঙিন ফুলের গাছের পাশে খয়েরি ইটের সড়ক। মধ্যখানে সাত স্তম্ভের স্মৃতিসৌধ একা দাঁড়িয়ে। অগ্রহায়ণের সকালে এখানে প্রতিদিন রোদ পোহায় শিশির ভেজা ঘাস। তবে ১৬ ডিসেম্বর এলে বদলে যায় পরিবেশ। মানুষের আনাগোনায় ভরে উঠে চারপাশ। সৌধের সামনে বেদি ভরে উঠে ফুলে ফুলে। এবছরেও দেখা গেল একই চিত্র। মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকাল থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে।

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ভোরের আলো ফুটতেই স্মৃতিসৌধে ছুটে এসেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয়ের ৫২তম দিবসে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও স্বাধীন দেশ পাওয়ার উৎসবের আনুষ্ঠানিক শুরুতে শ্রদ্ধা জানান তারা।

 

তাদের স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগের পরেই সৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সবার জন্য। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরো এলাকায় নামে লাখো মানুষের ঢল। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা-ভালোবাসার ফুলে ভরে উঠে স্মৃতিসৌধের বেদি।

এতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব বয়সী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বেদিতে ফুল দিয়েছেন। শহিদদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আবেগ জানিয়েছেন তারা।

এ ছাড়া শ্রদ্ধা জানাতে আসেন রাজনীতিক, কূটনীতিক, সমাজকর্মী, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী শিল্পী-বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, পেশাজীবী, শ্রমিক, শিক্ষার্থী, সর্বোপরি সাধারণ মানুষ। এতে ফুলে ফুলে শ্রদ্ধার পুষ্পাঞ্জলিতে ঢেকে যায় বেদি।

 

সকাল সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তাদের সালাম জানায় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল। শহিদদের স্মরণে বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। কিছুটা সময় নীরবে দাঁড়িয়ে জাতির বীর সন্তানদের স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের নেতাদের নিয়ে আবার ফুল দেন শেখ হাসিনা।

জাতীয় সংসদের স্পিকার, সংসদের বিরোধীদল, মন্ত্রীপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরাও বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

 

সকাল থেকেই নানান রঙে সাজসজ্জা করে ফুল দিতে এসেছেন অনেকেই। তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন শ্রেণির অনেককে দেখা গেল, স্মৃতিস্তম্ভ পেছনে রেখে একা, যুগল, দলবেঁধে মুঠোফোনে সেলফি তুলছেন।

এদিকে, ভিভিআইপি যাতায়াতের কারণে ফজরের আগ থেকেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানবাহন ও মানুষের চলাচল বন্ধ করা হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করার পর মহাসড়ক ছেড়ে দেওয়া হয়।

 

এর আগে, দিবসটি পালনে জাতীয় স্মৃতিসৌধকে প্রায় ১ মাস ধরে ধুয়ে-মুছে, রং-তুলির আঁচড় ও রঙ-বেরঙের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। সেই সাথে স্মৃতিসৌধে আগত দর্শনার্থীসহ সকলের নিরাপত্তা ও কোনও প্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এখানকার পুলিশ ও আনসার ক্যাম্পকে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক অবস্থানে রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, দর্শনার্থীসহ সকলের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ওয়াচ-টাওয়ার দিয়েছি। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে। আমাদের প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুলিশ সদস্য এই সৌধ এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। আমরা সৌধ এলাকায় নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিয়েছি। সাভারের আমিনবাজার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।