জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

নিউইয়র্ক , ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ : আজ যথাযােগ্য মর্যাদায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হয় । মিশনস্থ বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়ামে আয়ােজিত এ অনুষ্ঠানের শুরুতে মহান একুশের ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয় । এরআগে প্রভাত ফেরীর মাধ্যমে অডিটোরিয়ামটিতে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয় । অনুষ্ঠানটিতে রাষ্ট্রপতি , প্রধানমন্ত্রী , পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ এবং মহান একুশের ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয় ।

এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে একটি প্রামাণ্য ভিডিও চিত্র প্রদর্শণ করা হয় । অনুষ্ঠানটির আলােচনা পর্ব শুরু হয় জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার স্বাগত ভাষণের মধ্য দিয়ে । স্বাগত ভাষণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য “ শিক্ষায় এবং সমাজে বহুভাষার অন্তভূক্তি সযত্নে লালন করি ( Fostering multilingualism for inclusion in education and society ) ” উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন , “ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন জাতিসংঘসহ সকল আন্তর্জাতিক ফেরামে বহুভাষিকতাকে এগিয়ে নিতে সর্বাত্তক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে ” । ভাষণের শুরুতেই তিনি বাহান্নের ভাষাশহীদ এবং ভাষা আন্দোলনের পথিকৃৎ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন ।

রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন , “ ১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবে ছাত্রলীগ , তমদুন মজলিশ ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ । এই পরিষদই ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করে । জাতির পিতা ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে বার বার গ্রেফতার হয়েছেন । জেলে থেকে ভাষা আন্দোলনের দিক – নির্দেশনা দিয়েছেন । সেই দুর্বার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি শাসকগােষ্ঠীর জারি করা ১৪৪ ধারা ভাঙতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন ভাষা শহীদগণ ” । ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই কীভাবে জাতির পিতার নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে সে প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা । এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সুযােগ্য নেতৃত্বে জাতিসংঘসহ বিশ্ব পরিমন্ডলে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে । তা তুলে ধরেন তিনি । বাংলাদেশের জন্য কোভিড় -১৯ এর টিকা সংগ্রহের ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন এবং চলমান টিকা প্রদান কর্মসূচিতে সরকার যে সফলতা দেখিয়েছে তা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা । তিনি বলেন , “ বিশ্বের ২৫ কোটি মানুষের ভাষা বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে যে প্রস্তাবনা রেখেছেন তা বাস্তবায়নে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে ” ।

 প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাংলা ভাষা উজ্জীবিত রাখতে পরিবার এবং কমিউনিটিতে বাংলার শুদ্ধ চর্চা অব্যাহত রাখতে প্রবাসী বাঙালিদের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা । উন্মুক্ত আলােচনা পর্বে অংশ নেন মিশনের সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারিবৃন্দ । কোভিড -১৯ জনিত স্থানীয় বিধিনিষেধ অনুযায়ী সামাজিক দুরত্ব মেনে সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠানটি উদযাপন করা হয় । উল্লেখ্য আগামীকাল ভার্চুয়ালভাবে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন , জাতিসংঘ সদরদপ্তর ও ইউনেস্কো এবং জাতিসংঘে নিযুক্ত ব্রাজিল , কানাডা , মিশর , জর্ডান , লিথুনিয়া এবং নিউজল্যান্ড মিশনের যৌথ উদ্যোগে উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের জাতিসংঘ ভিত্তিক উদযাপন । ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ বেলা ১২:০০ থেকে ১৩:৩০ পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য এই অনুষ্ঠান জাতিসংঘ ওয়েভ টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে ।