২০১৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরেছেন আবু কাউসার মিন্টু। দীর্ঘ ৯ বছর পরেও দেশটির প্রতি ভালোবাসা কমেনি তার। তাই আসন্ন ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে নিজের জমি বিক্রি করে এবং স্ত্রীর জমানো টাকা দিয়ে ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা টাঙিয়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দড়িকান্দি ইউনিয়নের খাল্লা গ্রামের পশ্চিম পাড়ার আবুল হাশেমের ছেলে আবু কাউসার মিন্টু ১৯৯৮ সালে জীবিকার তাগিদে দক্ষিণ কোরিয়ায় যান।
এরই মধ্যে, ২০০২ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়। এসময় মাঠে বসে কোরিয়ার ফুটবল খেলা উপভোগ করেন মিন্টু। তখন থেকেই দক্ষিণ কোরিয়া ফুটবল দলের প্রেমে পড়ে যান তিনি। তখন থেকেই ফুটবলের বিভিন্ন আসরে দক্ষিণ কোরিয়া অংশ নিলে তিনি সমর্থন করে যাচ্ছেন।
২০০৬ সালে দেশে এসে পাশের ইউনিয়ন তেজখালীর পশ্চিম পাড়ার সাবিনা বেগমকে বিয়ে করেন মিন্টু। বিয়ের পর স্বামীর পাশাপাশি সাবিনাও দক্ষিণ কোরিয়া ফুটবল ভক্ত হয়ে যান। ২০১৩ সালে প্রবাস জীবনের ইতি টেনে দেশে ফেরেন মিন্টু। দেশে ফেরার পর গাজীপুরে ছোট একটি ব্যবসা শুরু করেন।
প্রবাস থেকে ফেরার পরেও দক্ষিণ কোরিয়া ফুটবল দলের প্রতি বিন্দুমাত্র ভালোবাসা কমেনি তার। ২০১৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় ওভারব্রিজে এক হাজার ফুট দৈর্ঘ্যের দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা টাঙিয়েছিলেন মিন্টু। তবে এতে আত্মতুষ্টি পাননি। এরপর মিন্টু ও তার স্ত্রী সাবিনা সিদ্ধান্ত নেন, ২০২২ বিশ্বকাপে দেশে দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় পতাকা টাঙাবেন তারা।
মিন্টুর স্ত্রী সাবিনা আলাদা ৮টি মাটির ব্যাংকে টাকা জমানো শুরু করেন। দুজনের সংসারে দক্ষিণ কোরিয়া ফুটবল দল যেন একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে হয়ে ওঠে। তারা প্রতিদিন খাবার খান দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকাযুক্ত প্লেটে, পানি পান করেন দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকাযুক্ত মগে। টাকা জমাচ্ছিলেন মাটির যে ব্যাংকে তাও দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকাযুক্ত।
আসন্ন ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা বানানোর উদ্যোগ নেয় এই দম্পতি। পতাকাটি হবে চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের, মিন্টুর বাড়ি থেকে তার শ্বশুরবাড়ি তেজখালীর পশ্চিমপাড়া পর্যন্ত। হিসেব করে দেখেন, পতাকার কাপড় এবং প্রিন্টিংসহ বানাতে খরচ পড়বে পাঁচ লাখ টাকা।
মিন্টুর স্ত্রীর ৮টি মাটির ব্যাংক ভেঙে পাওয়া যায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু এই টাকায় পতাকাটি বানানো সম্ভব না হওয়ায় পৈতৃক সূত্রে পাওয়া একটি জমি বিক্রি করে দেন মিন্টু। এতে আসে আরও ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। পরে স্বপ্নের সেই পতাকা তৈরি করেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, মিন্টুর এই পতাকা দেখতে সবাই ভিড় করছেন। এই পতাকার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে মানুষ নতুনভাবে চিনবে। তারা জানান, মিন্টু বলেছিল, ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পতাকা তৈরি করবেন তিনি। আমরাও বলেছিলাম, করেন। সারাদেশ আপনার এই পতাকার কথা জানবে। মিন্টু আজ সফল হয়েছে দেখে আমরাও খুশি।
মিন্টুর স্ত্রী সাবিনা বেগম বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি ভালবাসা থেকেই মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা ও জমি বিক্রির টাকা দিয়ে পতাকা বানিয়েছি। স্বামীর স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে ভালো লাগছে।’
আবু কাউসার মিন্টু বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়া থাকাকালীন থেকে এখন পর্যন্ত দলটির প্রতি ভালোবাসা কমেনি। গত বিশ্বকাপেও আমি রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় ওভারব্রিজে এক হাজার ফুট দৈর্ঘ্যের দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা ঝুলিয়েছিলাম। কিন্তু এতে মন ভরেনি। আমি চাই আমার এই পতাকার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ বাংলাদেশকে ভালোভাবে চিনে।’
দড়িকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম স্বপন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মিন্টুর পতাকা টাঙানোর ব্যাপারটি আমার পছন্দ হয়নি। কারণ যেখানে অন্য দেশের পতাকার সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা থাকবে না, সেটা যত বড় কাজই হোক ভালো বলতে পারি না। অন্য দেশের পতাকার সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা না রাখায় আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’