অমৃত রায়, জবি প্রতিনিধি:: উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের ৬৩ তম জন্মদিনে বিভিন্ন মহল থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও গণমাধ্যমকর্মীরা তাকে শুভেচ্ছা জানান। জানা যায়, রাত থেকে বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে তাকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। মোবাইল ফোন, ক্ষুদে বার্তা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে জবি উপাচার্যকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রিয়জনেরা।
১৯৫৮ সালে কুমিল্লার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম
নেওয়া অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ। শিক্ষা, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি তথা সামগ্রিক ক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য দখলদারিত্ব। বিশিষ্ট কলামিস্ট ড. মীজানুর রহমান দেশের জাতীয় পত্র- পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখেন, মিডিয়া পাড়ার জনপ্রিয় মুখ নিয়মিত টকশো করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন।ড. মীজানুর রহমান ১৯৭৩ সালে বিবির বাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এইচএসসি পাস করে ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগে ভর্তি হন।
একই বিভাগ থেকে স্নাতক ( সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে ব্যবসায় প্রশাসনে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষকতার মত মহান পেশার মাধ্যমেই তাঁর বর্ণিল কর্মজীবনের সূচনা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮২ সালে মার্কেটিং বিভাগে যোগদান করে ১৯৮৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। শিক্ষকতাই তিনি এতোটাই জনপ্রিয় যে, তাঁকে দক্ষিণ এশিয়ার মার্কেটিং- এর ফিলিপ কটলার বলে আখ্যায়িত করা হয়। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বও পালন করেছেন। শেখ বোরহানুদ্দীন কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান, আইসিএমএ- বাংলাদেশের কাউন্সিল মেম্বার, ম্যাকসন্স স্পিনিং-এর পরিচালক, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের ফাইন্যান্স কমিটির সদস্য, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন।বর্তমানে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্বরত আছেন।
২০১৩ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত করেন। অতীতে পড়ালেখার মান নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন থাকলেও বর্তমানে ড. মীজানুর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মেধাবীদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়টি দ্বিতীয় শীর্ষ বিদ্যাপীঠে পরিণত হয়েছে। বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর যে অসামান্য অবদান, সেই অবদানের অংশ হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক ও তথ্যপ্রযুক্তিগত দিক থেকে সমৃদ্ধ করতে ইতোমধ্যে কেরানীগঞ্জে নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য এক মেগা প্রকল্প উপহার দিয়েছেন।সেখানে ভূমি উন্নয়নের কাজ অব্যাহত রয়েছে। নিয়মিত সভা-সেমিনার, দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ,উন্নত পাঠদান, নিয়মিত ক্লাস- পরীক্ষাসহ সেশনজটমুক্ত একটি শিক্ষা পরিমণ্ডল তৈরি হয়েছে। যা বর্তমান উপাচার্য মহোদয়ের সুদক্ষ প্রশাসনিক দক্ষতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ড. মীজানুর রহমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ উপাচার্য। তাঁরই ঘোষণায় ২০২১ সাল থেকে কোনো শিক্ষক পিএইচডি ডিগ্রি ব্যতিত অধ্যাপক হতে পারছেন না।এটি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ। জগন্নাথ বিশ্ববিদালয়ই বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ১০৪ জন অধ্যপকের মধ্যে ১০২ জনই পিএইচডি ডিগ্রিধারী, বাকি ২ জনের পিএইচডি ডিগ্রি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অতীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রকাশনা ছিল না কিন্তু ড. মীজানুর রহমানের হাত ধরেই বর্তমানে ১৬ টি বই প্রকাশিত হয়েছে। দেশের অনেক পুরনো সুপ্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে অংশ নিতে সক্ষম হয়নি সেখানে নবীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নিজস্ব প্রকাশনা নিয়ে প্রতিবছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় সুনামের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে আসছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। যা বর্তমান উপাচার্যের কারণেই সম্ভব হয়েছে। ড.মীজানুর রহমানের আন্তরিক প্রচেষ্টায় পুরান ঢাকার মতো জায়গায় বহুল আকাঙ্ক্ষিত সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম এবং সবচেয়ে বড় সমাবর্তন।যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিরাট প্রাপ্তি। বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০২০ সালে ১৫ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করেছে।২০ অক্টোবর, ২০২০ দেশের একমাত্র অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়টি ছাত্রীদের জন্য বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে।ছাত্রীদের এই হলটি উদ্বোধনের মাধ্যমেই অনাবাসিকতার তকমা ঘুচেছে।এটি উপাচার্য মহোদয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল।
ড. মীজানুর রহমানের সহধর্মিণী নাজমা আক্তার একজন খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী। তার একমাত্র পুত্র অনিন্দ্য রহমান একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং পুত্রবধূ নাজিয়া আফরিন মনামী সময় টেলিভিশনের নিউজ এডিটর।