জবির নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্প, টেন্ডার বাণিজ্য, ৫৪১ কোটি টাকা দূর্নীতি,সত্যতা কি?

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

অমৃত রায়:: সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে অনিয়ম, দুর্নীতি সহ নানান অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে ৫৪১ কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে। এই দুর্নীতি প্রসঙ্গে বর্তমান উপাচার্য ড. ইমদাদুল হকের বক্তব্য আংশিক প্রকাশ করে বিতর্কও সৃষ্টি করা হয়েছে। এ সকল বিষয় নিয়ে অনুসন্ধ্যান চালিয়েছে আর্থটামস২৪.কম।
 
এই বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা প্রদান করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তর। প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস, ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ এবং ৫৪১ কোটি টাকা হিসাবের গড়মিলের বিষয়টি সঠিক নয়।
 
২০১৮-১৯ অর্থ বছরে গত ৩০/০৬/২০১৯ তারিখে মোট টাকা ৮৯৯ কোটি ৮৫ লক্ষ ছাড় হয়েছে। যার মধ্যে মূলমন খাতের টাকা ৮৯৯ কোটি ৮০ ৪১ হাজার ৮৩২৫০ তাৎক্ষনিক ভাবে জমি অধিগ্রহণ বাবদ জেলা প্রশাসক, ঢাকা বরাবর একটি মাঠকের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। অব্যায়িত টাকা ৪,২১,০০০/- (চার লক্ষ একুশ হাজার) চেকের মাধ্যমে সরকারী কোষাগারে ফেরত দেওয়া হয়।
 
জমি অধিগ্রহণের আর্থিক দায় দেনা পরিশোধের সম্পূর্ণ এখতিয়ার জেলা প্রশাসকের। এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সংশিষ্টতা নেই পরবর্তীতে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৫/০২/২০১১ তারিখে ঢাকা ১৫,০০,০০,০০০/- (পনের কোটি) হারে করা হয় যা কোভিড জনিত কারনে খরচ করা সম্ভব হয়নি। এমতাবস্থায় গত ২৮/০৬/২০১১ তারিখে উক্ত টাকা ১৫,০০,০০,০০০/- (পনের কোটি) সরকারী কোষাগারে ফেরত দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত প্রকল্পের অনুকূলে সর্বমোট মাত্র টাকা ৯১৪, ৮৫,০০,০০০/- (নয়শত চৌদ্দ কোটি পঁচাশি লক্ষ) হয়েছে যার মধ্যে টাকা ৮১১,৮০,৪৯, ৮৩২.৫০ (আটশত নিরান্নবই কোটি আশি লক্ষ উনপঞ্চাশ হাজার অটশত বত্রিশ টাকা পঞ্চাশ পয়সা) খরচ হয়েছে এবং টাকা অব্যায়িত ১৫,০৪, ২১,০০০/- (পনের কোটি চার লক্ষ একুশ হাজার) সরকারী কোষাগারে ফেরত দেওয়া হয়েছে। সুতারাং প্রকল্পে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ এবং ৫৪১ কোটি টাকা হিসাবের গড়মিলের বিষয়টি ভিত্তিহীন এবং অসত্য।
 
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রকল্পটি ০৯/১০/২০১৮ তারিখে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়, ২৭/১১/২০১৮ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদান করা হয় এবং গত ২৩/০১/২০২১ তারিখে প্রকল্পের ১৮৮.৬ একর জমি হস্তান্তর করা হয়। প্রকল্প শুরুর কিছুদিন পর থেকেই বৈস্মিক মহামারীর প্রাদুর্ভাব হয়। কোভিডের কারণে সবকিছু স্থবির হয়ে যায়। এ মহামারীর মধ্যেও অধিগ্রহণকৃত জমি হস্তান্তর কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। জমি অধিগ্রহণের পর প্রকল্পের মাস্টারপ্লান প্রণয়ন এবং অন্যান্য অংশের কাজ শুরু করতে হবে বিধায় প্রকল্পের কার্যক্রম সীমিত করা হয়। সুতরাং প্রকল্পটির পাঁচ বছরে শুধু জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে বক্তব্যটি সঠিক নয়।
 
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন বলেন যে, ‘মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে এমন কিছু হয়নি। কেবলমাত্র তাদের লিখতে ভুল হয়ছে।’
 
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, ‘সবাই বলছে যে এরকম হয়েছে। তাই আমি বলেছি যে এরকম হলে আমরা তদন্ত করে দেখব। দরকার হলে দুদকে পাঠাবো। অসুবিধা কি। কিন্তু আমাদের তো এরকম কিছু হয়নি।’
 
তিনি আরও বলেন, ‘তারপরও আমি একটা কমিটি ইউনিভার্সিটি থেকে করে দিব। যাতে করে স্বচ্ছতা থাকে।’
 
এ বিষয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান জড়িত ছিলেন না দাবি করে বলেন, ‘নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন প্রকল্পের ৫৪১ কোটি টাকা হিসাবের গড়মিল হয়ে থাকলে বর্তমান প্রশাসনের আমলেই সেটা হয়েছে। আরো প্রায় ছয় মাস আগে আমি যখন দায়িত্ব ছেড়ে আসি তখন হিসাবে কোন গরমিল ছিল না। প্রকল্পের জন্য একনেকে অনুমোদিত অর্থ থেকে প্রথম কিস্তিতে ৮৯৯কোটি ৮০ লক্ষ টাকা পাওয়া যায়। যার পুরোটাই তাৎক্ষণিকভাবে আবার সরকারিখাতেই(জেলা প্রশাসক- ঢাকা) জমা দেয়া হয়, জমি কেনার জন্য। এছাড়া আমি উপাচার্য থাকাকালে এই প্রকল্পে আর কোনো অর্থ বরাদ্দ হয়নি এবং কোন ব্যয় হয়নি। এমতাবস্থায় হিসাবে গড়মিল বা দুর্নীতি হয়ে থাকলে সেটা এই বর্তমান প্রশাসনের আমলেই হয়েছে। বর্তমান প্রশাসনকেই এর জবাব দিতে হবে অথবা দায়িত্ব নিতে হবে।