‘ছেলের লাশটা পাওয়াতে মনে সান্ত্বনা’

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

ছেলে হারানোর শোকের ভেতরেও স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা জানালেন সুখেন্দু বিকাশ রায়।

‘বাবারা, আমার ছেলের লাশ শনাক্ত হচ্ছিল না। খুব টেনশন হচ্ছিল। এখন লাশটা পাওয়াতে মনে একটা সান্ত্বনা পাইলাম। ভগবানের কাছে অসীম কৃতজ্ঞতা।’, বলতে বলতে কান্না চেপে রাখতে পারেননি স্কুল শিক্ষক সুখেন্দু। তিনি নেপালে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত পিয়াস রায়ের বাবা।

বৃহস্পতিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছিলেন সন্তানের জন্য।

”ছেলে আমার বলেছিল- ‘বাবা ডাক্তার হবো, কিন্তু ঢাকা শহরে যাব না; তোমার কাছে বরিশালেই থাকব।’ ছেলে আমার ডাক্তার হলো, কাছে থাকতে পারল না” বলে আবারও কান্নায় ভেঙে পড়লেন শোকাতুর বাবা। বুকে পাথর চেপে রাখলেও কান্নার স্রোত ঠেকানো যায় না।

পিয়াস রায় গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ থেকে চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা দিয়ে ইন্টার্নি ডাক্তার হিসেবে কাজ করছিলেন। তার বাবা সুখেন্দু ও মা পূর্ণিমা দু’জনেই স্কুল শিক্ষক- বরিশালের বাকেরগঞ্জে।

দুই সন্তানের মধ্যে পিয়াস ছিলেন বড়। তার ছোট বোন শুভ্রা নর্দান মেডিকেল কলেজে পড়ছেন। পিয়াস এসএসসি পরীক্ষায় বরিশাল বোর্ডে প্রথম হয়েছিলেন। নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষাতেও মেধা তালিকায় ছিলেন।

ছুটিতে নেপালে বেড়াতে যাচ্ছিলেন পিয়াস। বিমানবন্দরে তার বন্ধু তন্ময় এবং শারমিনও এসেছেন পিয়াসের বাবার সঙ্গে। অশ্রুসজল কণ্ঠে তন্ময় জানালেন, ঘুরতে খুব পছন্দ করত পিয়াস। ছুটি পেলেই চলে যেত দেশের বিভিন্ন স্থানে। এর আগে দেশের বাইরে ভারত ও ভুটান ঘুরে এসেছে পিয়াস। কোথাও থেকে ঘুরে এলে বন্ধুদের আড্ডায় গল্প শোনাত উৎসাহ নিয়ে। এবারও নেপাল যাওয়ার আগে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বন্ধুদের জানিয়েছিল, হিমালয়কন্যার দেশে যাচ্ছে। ফিরে এসে গল্প শোনাবে। পিয়াস আর কখনও গল্প শোনাবে না- বলেই কেঁদে ফেলেন তন্ময়, শারমিন।

তারা জানান, পিয়াসের মরদেহ বিমানবন্দর থেকে প্রথমে নেওয়া হবে গোপালগঞ্জে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজে। সেখানে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন শিক্ষক, তার বন্ধু ও সুহৃদরা। এর পর তাকে বরিশালের বাকেরগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হবে। এখানেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে কাঠমান্ডু থেকে বাকি থাকা তিনজনের মরদেহ বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরে স্বজনদের মরদেহ বুঝিয়ে দেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী শাহজাহান কামাল।

তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, এই তিনজনের মরদেহ শনাক্ত করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। এ কারণেই নিয়ে আসতে কয়েক দিন দেরি হয়েছে। তিনি বলেন, ২০ তারিখ ২৩ জনের মরদেহ নিয়ে এসেছি। আজ বাকি তিনজনের নিয়ে আসা হলো।

গত ১২ মার্চ নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত ৫১ জনের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি ছিলেন। এ দুর্ঘটনায় আহত ১০ বাংলাদেশির মধ্যে সাত জন ভর্তি আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে।