ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় ফাউন্ডেশন করবে সরকার

লেখক:
প্রকাশ: ৩ মাস আগে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন নারীদের প্রতিনিধিরা। এসব নেত্রী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যত মানুষ আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসা প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার দাবি জানান। এসময় এ আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় ফাউন্ডেশন করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হয়ে বৈঠক চলে এক ঘণ্টারও বেশি সময়। বৈঠকে ৩০ জন নেত্রী উপস্থিত ছিলেন। একই সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নারী সমন্বয়ক। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম, ফরিদা আখতার ও শারমিন এস মুরশিদ উপস্থিত ছিলেন।

 

বৈঠকে নারীদের প্রতি বৈষম্যরোধ, ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় ফাউন্ডেশন গঠনসহ নানান বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে দুপুর ১টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার প্রধান ফটকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যত মানুষ আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসা প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে একটা উদ্যোগ আছে, এটা কার্যকর হচ্ছে। আমরা একটা ফাউন্ডেশন সৃষ্টির মাধ্যমে যারা সাহায্য করতে আগ্রহী তাদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে এ কাজগুলো করবো।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, চিকিৎসা ও পুর্নবাসন সবকিছু করা হবে। যেহেতু ফাউন্ডেশন করতে সময় লাগছে, তাই একটা দাবি উঠেছে অন্তর্বর্তী একটা কিছুর ব্যবস্থা করার। যাদের চিকিৎসায় টাকার প্রয়োজন, যাতে তাড়াতাড়ি করে টাকা পেতে পারে।

নারী নেত্রীদের মতামত নেওয়ার জন্য বৈঠক হয়েছে বলে জানান এ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তাদের মতামতের ভিত্তিতে সংস্কারেরর যে এজেন্ডা আছে তা ঠিক করবো। প্রধান উপদেষ্টা নারী নেত্রীদের একসঙ্গে বসার অনুরোধ করেছেন। সেখানে সরকারের কাজ করতে সুবিধা হয় এমন কিছু প্রস্তাব দেওয়ার অনুরোধ করেন। অর্ধ সমাপ্ত কাজ করে লাভ নেই। তাই কিছু অগ্রাধিকার সুপারিশ করার জন্য যাতে বর্তমান সরকার করে দিয়ে যায়, যা দলীয় সরকারের অধীনে করতে কষ্ট হয়ে যাবে।

 

নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে বিক্ষিপ্তভাবে কাজ না করে নারী অধিকার কমিশন (ওমেন্স রাইট) গঠনের প্রস্তাব বৈঠকে করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তথ্য অধিকার কমিশন, মানবাধিকার কমিশন রয়েছে। যেগুলো দলীয় সরকারের সময় চাপে পড়ে দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। সেখানে স্বাধীনতা নিশ্চিতে করণীয় বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় নিয়ে কথা হয়েছে উল্লেখ করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, মন্ত্রণালয়টি আসলে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। সেটা ছাড়াও তাদের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হওয়া উচিত ৪৫টি মন্ত্রণালয়ের তদারকির ভূমিকা। সে কাজটা তারা ঠিকমতো করছে না।

নারীর প্রতি বৈষম্য নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান এ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক অনেক আইন আন্তর্জাতিক ও জাতীয়ভাবে আছে। সেগুলোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যেমন উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে সমান অধিকারের জন্য অবস্থান নেওয়া। পারিবারিক, অভিভাবকত্বে ও নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে যে আন্তর্জাতিক আইন আছে, সেখানে বৈষম্যকে অ্যাড্রেস করেছে। সেখানে বাংলাদেশের কোথাও কোথাও রিজারভেশন আছে। সেটা তুলে দেওয়ার দাবি এসেছে। সিডর রিজারভেশন তুলে দেওয়ার পাশাপাশি আইএলও ১৯০ ও আরও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

 

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা করা হলেও বিচার হয় না- এ মানসিকতা থেকে সরে আসতে হলে নারী ক্ষমতায়ন করলেই হবে না, সমাজকে নারীবান্ধব করার পরিবেশ আনতে হবে বলে বৈঠকে মতামত এসেছে। কল্পনা চাকমা, তনু, মুনিয়া এবং নুসরাতের হারিয়ে যাওয়া কিংবা নিহত হয়ে যাওয়ার কারণ বের করা। দায়ী ব্যক্তিরা যতই শক্তিশালী হোক তাদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য বৈঠকের সবাই দাবি জানিয়েছেন।

 

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের মাধ্যমে করার পরামর্শ বৈঠকে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, যেসব ভুলের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান, সেই সংস্কার করতে গিয়ে পুরোনো ভুলগুলো পুনরায় যাতে না হয়। শিল্পকলা একাডেমিতে শিল্পকলা বোঝেন এমন লোকদের নিয়োগ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কুকি-চিন ইস্যুতে বম জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন হচ্ছে বলে দাবি করে তা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।