ছাত্রীদের অবস্থান ৩ ঘণ্টা পর বাসভবনে প্রবেশ করলেন ঢাবি উপাচার্য

লেখক:
প্রকাশ: ১ বছর আগে

আবাসন সংকট নিরসনসহ তিন দফা দাবিতে উপাচার্যের বাসার সামনে অবস্থান করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের ছাত্রীরা। দাবি না মানায় দুবার চেষ্টা করেও বাসায় ঢুকতে পারেননি ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। পরে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছাড়লে প্রায় তিন ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাসভবনে প্রবেশ করেন উপাচার্য।

 

সোমবার (১৪ আগস্ট) দুপুর ১টা থেকে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। দাবি মেনে না নেওয়ায় এ অবস্থান কর্মসূচি চলে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত।

এর আগে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ে ডাকা হয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের। পরে চারজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, তিনজন আবাসিক শিক্ষক ও একজন সহকারী প্রক্টর সেখানে যান। কিন্তু আলোচনার পরও মূল দাবি ৩০০ ছাত্রীকে এক মাসের মধ্যে অন্য হলে স্থানান্তরের দাবি পূরণ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আবারও উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।

 

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপাচার্য বাসভবনের সামনে আসেন। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বাধায় তাকে বহনকারী গাড়ি বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। এসময় প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান ও সহকারী প্রক্টর শিক্ষার্থীদের গেট ছাড়ার অনুরোধ করলেও অবস্থান চালিয়ে যান তারা। এরপর সেখানে ২০-২৫ মিনিট গাড়িতে বসে অপেক্ষা করে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন কার্যালয়ে ফিরে যান উপাচার্য।

এর কয়েক ঘণ্টা পর রাত ১০টার দিকে উপাচার্য ফের তার বাসভবনের সামনে যান। সেখানে তিনি আবারও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কথায় দাবি আদায়ের পরিষ্কার আশ্বাস না পাওয়ায় তার পথরোধ করে অবস্থান অব্যাহত রাখেন। প্রায় ৩০ মিনিট সেখানে উপাচার্যের গাড়ি আটকে রাখেন হলের ছাত্রীরা। পরে গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত সংকট সমাধানের আশ্বাস দিলে রাত সাড়ে ১০টার পর রাস্তা থেকে সরে যান শিক্ষার্থীরা। পরে বাসভবনে প্রবেশ করেন উপাচার্য।

 

এসময় উপাচার্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বলেন, আমরা তোমাদের সমস্যা নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা সমস্যা সমাধান করবো। তোমরা এখন হলে ফিরে যাও।

এর আগে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সোমবার (১৪ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন ছাত্রীরা। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে- কুয়েত-মৈত্রী হল থেকে অন্তত ৩০০ শিক্ষার্থীকে অন্য হলে এক মাসের মধ্যে স্থানান্তর, হলের আসন সংখ্যার সঙ্গে সমন্বয় করে শিক্ষার্থী অ্যালোটমেন্ট দেওয়া এবং মূল ভবনের প্রতিটি রুমে ৬ জনের বেশি শিক্ষার্থী বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট না করা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, তাদের দাবি ছিল ৩০০ শিক্ষার্থীকে স্থানান্তর করতে হবে। কিন্তু এ বিষয়ে যথাযথ সমাধান তারা পাননি। উপাচার্য তাদের জানিয়েছেন, এ স্থানান্তরে প্রশাসনিক জটিলতা রয়েছে, তাই আপাতত সম্ভব নয়। তবে আগামীতে শিক্ষার্থী অ্যালোটমেন্ট না দেওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য। তারা জানান, মূল সমস্যার সমাধান না হওয়ায় তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যান।

 

এসময় হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নাজমুন নাহার সাংবাদিকদের বলেন, উপাচার্য স্যার নিজে গিয়ে হল দেখেছেন এবং শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা ছাত্রীদের রাস্তা থেকে সরে যেতে অনুরোধ করছি।

শিক্ষার্থীরা জানান, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ছোট হলেও প্রতিবছর অনেক ছাত্রী সেখানে অ্যালোটমেন্ট দেওয়া হয়। ফলে অন্যান্য হলে ছয়মাসের মধ্যে বৈধ আসন পেলেও মৈত্রী হলে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রীরা চতুর্থ বর্ষে উঠেও আসন পাচ্ছেন না। এর পাশাপাশি ২০২০-২১, ২১-২২, ২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সবার আসন অনিশ্চিত অবস্থায় আছে। এ অবস্থায় এরই মধ্যে ২০২২-২৩ সেশনকে এই হলে অ্যালোটমেন্ট দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ চারটি সেশনের শিক্ষার্থীরা মৈত্রী হলের সিট জটিলতায় বৈধ সিটের অধিকার হারাতে বসেছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, হলের মূল ভবনে পাঁচটি অতিথি কক্ষে চাপাচাপি করে ১০০ শিক্ষার্থী বার্ষিক চার হাজার টাকা দিয়ে অবস্থান করেন। অথচ তাদের জন্য তিনটি ওয়াশরুম রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষিত সিকদার মনোয়ারা ভবনের তিনতলার ১৫টি অতিথি কক্ষ, যেখানে বর্তমানে ১১০ জন শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন এবং তাদের জন্য ২টি ওয়াশরুম আছে। দোতলায় ২৪ শিক্ষার্থীর জন্য একটি ওয়াশরুম। এ অবস্থায় তারা বর্ণনাতীত কষ্টে আছেন।

এ বিষয়ে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, আমি সরেজমিনে দেখেছি ওখানে জীবনযাত্রার মান কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য না। সুযোগ-সুবিধার অনেক ঘাটতি রয়েছে। ছাত্রীরা যে দাবিগুলো জানিয়েছে সেগুলো খুব জরুরি। তাদের জীবনমান উন্নয়নে আমাদের আন্তরিক প্রয়াস থাকা জরুরি। হল প্রশাসনকেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যেন দ্রুত সংকট সমাধান করা হয়।