চোরাগোপ্তা মেরে সরকার সরানো যায় না: প্রধানমন্ত্রী

:
: ৮ মাস আগে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হরতাল ও অবরোধের নামে চোরাগোপ্তা হামলা করে, নিরীহ মানুষ মেরে সরকার সরিয়ে ক্ষমতায় আসা যায় না। বিএনপি হলো সন্ত্রাসী দল ও জামায়াত শিবির যুদ্ধাপরাধীদের দল। তাদের কথা সাধারণ মানুষ শুনে না। তাদের নিজেদের কিছু লোক আছে, তারাই নাচানাচি করে। এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়ার জেলে, আমি দয়া-মমতা করে তাকে বাসা থাকার অনুমতি দিয়েছি।

 

ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়ার ফার্টিলাইজার প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে রোববার (১২ নভেম্বর) বিকেলে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজিত নরসিংদী মুসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে এক জনসভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া ২০০৭ সালে মুচলেকা দিয়েছিল, কখনও রাজনীতি করবে না। এখন চোরের মতো মোবাইলে বার্তা দেয়। লন্ডন গিয়ে বসে আছে, এত টাকা কোথায় পায় সে? এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছে, অস্ত্র ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি, মানি লন্ডারিংয়ের সাথে জড়িত সে। লন্ডনে বসে বাংলাদেশে আগুন জ্বালাতে বলে। এগুলো দেশের মানুষ কখনও মেনে নেবে না। কঠিনভাবে প্রতিহত করা হবে। আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণের স্বার্থে সবকিছু করতে রাজি। জনগণের জানমালের ক্ষতি আর বরদাস্ত করা হবে না। জনগণ ভোটের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতকে সঠিক বিচার করবে।

 

সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপি অবরোধের নাম করে বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালিয়ে মানুষকে আহত করছে। পুলিশ ও সাংবাদিকের ওপর হামলা করছে। তাদের এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আমরা যুগ যুগ ধরে দেখে আসছি। তারা (বিএনপি) পুলিশ হাসপাতালে আক্রমণ করে অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়ে দিয়েছে। কেউ কি হাসপাতালে আক্রমণ করে? তারেক জিয়ার চামচারা এসব হামলা করছে। কেউ যদি বাসে আগুন দিতে যায়, তাকে ধরে সেই আগুনে ফেলে দেবেন। সে বুঝুক আগুনের কত জ্বালা।

উল্লেখ্য, ঘোড়াশাল সার কারখানার উদ্বোধন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নরসিংদীতে কয়েকটি উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের ভিত্তিপ্রস্তরের উদ্বোধন করেন। রোববার দীর্ঘ ১৯ বছর পর নরসিংদীতে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগমনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে।

‘আমার কাছে ক্ষমতা নয়, দেশের স্বার্থই বড়’

সমাবেশের আগে প্রধানমন্ত্রী নরসিংদীতে নবনির্মিত ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা (জিপিইউএফএফ) উদ্বোধন করেন। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কারখানা।

 

কারখানার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাস বিক্রির মুচলেকা না দেওয়ায় ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। আমার কাছে ক্ষমতা নয়, দেশের স্বার্থই বড়। দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে হবে— এমন দৈন্যতায় শেখ মুজিবের কন্যা ভোগে না।

২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ওই নির্বাচনে হারানোর জন্য শুধু বিদেশিদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাদের দেশের কিছু জ্ঞানী-গুণীও উঠেপড়ে লেগেছিলেন। আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছিল। ফলে আমরা ওই নির্বাচনে সরকারে আসতে পারিনি।

 

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রপতি আমাদের দেশে এসেছিলেন। আমাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরে যখন লতিফুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হন, তার বাড়িতে আমাদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। আমাদের পার্টি থেকে আমি এবং তখনকার সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান আর বিএনপির পক্ষ থেকে ছিলেন খালেদা জিয়া ও মান্নান ভুঁইয়া। সেখানে জিমি কার্টার আসেন দূত হিসেবে। এবারও একই প্রস্তাব। আমি একই কথা বলেছি। বলেছি, আমাকে সার্ভে করতে হবে, আমার দেশের মানুষের চাহিদা মেটাতে হবে, পঞ্চাশ বছরের রিজার্ভ থাকতে হবে, তারপর উদ্বৃত্ত গ্যাস বিক্রির কথা আমি চিন্তা করব।

‘দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে হবে— এমন দৈন্যতায় বঙ্গবন্ধুর কন্যা ভোগে না। আমার কাছে ক্ষমতা বড় না। একবার চিন্তা করেন, সেদিন যদি আমি গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হতাম তাহলে কি আজ এত চমৎকার সার কারখানা আমরা করতে পারতাম? কিন্তু খালেদা জিয়া রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। আমার চোখের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার রাষ্ট্রপতি এসে তার পিঠে হাত দিয়ে বাহবাও দিয়েছিলেন। তখন আমি জিল্লুর রহমান সাহেবকে বলেছিলাম, চাচা এখন চলেন। আমি বুঝতে পেরেছি কী হবে? কিন্তু আমি এটা কেয়ার করিনি। আমার কাছে ক্ষমতা বড় না, দেশের স্বার্থ বড়। আমরা সেখান থেকে চলে এসেছিলাম’- বলেন শেখ হাসিনা।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিন নরসিংদীতে নবনির্মিত ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা (জিপিইউএফএফ) উদ্বোধন করেন। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কারখানা। এটি সার আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে সহায়তা করবে।