ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) শামসুন নাহার হলসংলগ্ন সড়কদ্বীপের পাশ দিয়ে গেলেই হঠাৎ থমকে দাঁড়ায় যেকোনো পথিক। কারণ আট বছর হলো এভাবেই দাঁড়িয়ে আছে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরকে বহন করা বিধ্বস্ত গাড়িটি।অনেকে হয়তো ভাস্কর্যটির নাম জানে না। পথিকরা ঘুরে ফিরে দেখে কালো স্ফটিক পাথরের ওপর সাদা ভাস্কর্যটি। পরে ভাস্কর্যের বিশদ জানার পর রীতিমত থমকে যায়।
চোখের কোণে গড়িয়ে পড়ে জল। তখন হয়তো ভাস্কর্যের চারপাশে সুনীল হাওয়া বয়ে যায়।পাতার মরমর ধ্বনি বলে বেড়ায় ভয়াল সে দিনের ঘটনা।২০১৪ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর ঢাবির শামসুন নাহার হলসংলগ্ন সড়কদ্বীপে স্থাপন করা হয় ‘সড়ক দুর্ঘটনা স্মৃতিস্থাপনা’।সেদিনের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান ঢালী আল মামুন।অনেক ভয়াল সেই দুর্ঘটনার কথা স্মরণ করে ঘটনার সাক্ষী শিল্পী ঢালী আল মামুন নিজেই তৈরি করেন ভাস্কর্যটি।অর্থবহ আর নিসর্গ-নকশার রূপ দিয়েছেন স্থপতি সালাউদ্দিন আহমেদ।ভাস্কর্যটির ৩টি অংশ। প্রথম অংশে আছে দুর্ঘটনার স্মারক মাইক্রোবাসটির মূল কাঠামো। সেটির কম ক্ষতিগ্রস্ত পাশটিতে ঝুলে থেকে ৫টি হাতের অবয়ব হারিয়ে যাওয়া জীবনগুলোর কথা বলছে।ভাস্কর্যের দ্বিতীয় অংশে রয়েছে গাড়ির ভেতর থেকে বের করে আনা আসনগুলো। সেগুলো স্থাপিত হয়েছে মাটির কয়েক ফুট ওপরে, যেন তা ভাসমান।তৃতীয় অংশের পুরো সড়কদ্বীপে ছড়ানো গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মনে করিয়ে দেয় ছিন্নভিন্ন জীবনের কথা। ভাস্কর্যের দুটি অংশে শিল্পী বসিয়ে দিয়েছেন দুটি ময়না পাখি। আর এভাবেই দুর্ঘটনার প্রামাণ্য তথ্যগুলো একটি কাহিনি হয়ে উঠেছে।২০১১ সালের ১৩ আগস্ট ভোরে কাগজের ফুল চলচ্চিত্রের দৃশ্য ধারণের জায়গা নির্বাচন করতে মানিকগঞ্জে গিয়েছিলেন চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, চিত্রগ্রাহক ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ নয়জন। ফেরার পথে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকায় তাদের মাইক্রোবাসটিকে মুখোমুখি ধাক্কা দেয় উল্টো দিক থেকে আসা একটি বাস। সেখানেই মারা যান পাঁচজন। আহত হন তারেকের স্ত্রী ও চলচ্চিত্রকার ক্যাথরিন মাসুদ, শিল্পী ঢালী আল মামুন ও তার স্ত্রী শিল্পী দিলারা বেগম জলি। একমাত্র অক্ষত থাকেন কাগজের ফুলের সহকারি পরিচালক মনিস রফিক।কিন্তু এ প্রতিভাবানরা চলে যাবার পরও মৃত্যুর মিছিল থামছে না। প্রতিনিয়ত ঘটছে। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যু মিছিল।