চোখের পাতা কাঁপার ৫ কারণ

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

মাঝেমধ্যে চোখের পাতা কাঁপে বা লাফায়? সাধারণত এর মানে হলো চোখের পাতার পেশিতে অনৈচ্ছিক সংকোচন। ডাক্তারি পরিভাষায় এটাকে মায়োকিমিয়া বলে।

যুক্তরাষ্ট্রের রুটগার্স নিউ জার্সি মেডিক্যাল স্কুলের ইনস্টিটিউট অব অফথালমোলজি অ্যান্ড ভিজুয়াল সায়েন্সের অধ্যাপক রজার্স ই টারবিন বলেন, ‘অন্যান্য সমস্যার তুলনায় চোখের পাতা লাফানো উদ্বেগজনক কিছু নয়। এটা বেশ প্রচলিত ঘটনা। কিন্তু যদি এমন অবস্থা একনাগাড়ে দুই সপ্তাহের বেশি থাকে, চোখের আশপাশে কোনোভাবে ব্যথা করে, চোখ দিয়ে অযথা পানি পড়তে থাকে, দেখায় কোনোভাবে সমস্যা হয়, চোখের উপরে বা নিচে ফুলে যায় কিংবা আলোর প্রতি সংবেদনশীল হয় তাহলে চিকিৎসককে দেখাতে হবে।’

 

চোখের উপরে এবং নিচে চোখকে ঢেকে রাখার জন্য যে চামড়ার ভাঁজ থাকে, তাকে বলে চোখের পাতা। বিশেষ করে চোখের উপরের পাতা মাঝে মাঝে কাঁপে। এ প্রতিবেদনে চোখের পাতা কেঁপে ওঠার পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হলো-

পুষ্টির ঘাটতি: পুষ্টির অভাবে অথবা গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির মাত্রা যথেষ্ট না হলে চোখের লাফাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ফেইনবার্গ স্কুল অব মেডিসিনের অফথালমোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক লিজা এম কোহেন উদাহরণস্বরূপ ম্যাগনেসিয়াম ঘাটতিকে মায়োকিমিয়ার কারণ বলেছেন। চোখের পাতা কাঁপার সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য ঘাটতি হলো- ক্যালসিয়ামের অভাব (তবে অত্যধিক ক্যালসিয়ামেও মায়োকিমিয়া হতে পারে), ভিটামিন বি১২ ঘাটতি, ভিটামিন ডি ঘাটতি এবং ফসফেটের অভাব।

এই সমস্যা এড়াতে খাদ্যতালিকায় ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য, চর্বিহীন মাংস ও ডাল জাতীয় খাবারের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে- এমনটা জানান ডা. কোহেন।

 

ক্লান্তি: শারীরিক ক্লান্তি থেকেও চোখের পাতা লাফানো শুরু হতে পারে। এ কারণে জীবনযাপনের কোন কোন দিক আমাদেরকে ক্লান্ত করে তোলে তা খুঁজে বের করতে হবে, যেমন- ঘুমের ঘাটতি, শারীরিক সক্রিয়তার অভাব, অ্যালকোহল বা ড্রাগসের অপব্যবহার এবং অ্যান্টিহিস্টামিন ও কাশির ওষুধ।

ডা. কোহেন বলেন, ‘পর্যাপ্ত ঘুমালে সহজে ক্লান্ত হবেন না, যার ফলে চোখের পাতা লাফাবে না।’ কিন্তু এটা সবার জন্য সহজ নয়। বিশেষজ্ঞরা দুর্বলতা এড়াতে তিনটি পরামর্শ দিয়েছেন- পর্যাপ্ত ঘুমাবেন, অ্যালকোহল বা ড্রাগস এড়িয়ে যাবেন এবং সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট শরীরচর্চা করবেন।

কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোম: কম্পিউটার, ট্যাবলেট ও স্মার্টফোনের মতো ডিজিটাল স্ক্রিনের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকানোর পর চোখে যে অস্বস্তি বা দৃষ্টি সমস্যা হয় তাকে কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোম বলে। ডা. কোহেন বলেন, ‘দীর্ঘসময় কম্পিউটার ব্যবহারে চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এটাকে আই স্ট্রেইন বলে। এর ফলেও চোখের পাতা লাফাতে পারে।’

 

যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রিনের সামনে সময় কাটান তারা চোখকে বিশ্রাম দিতে ২০-২০-২০ নিয়ম অনুসরণ করতে পারেন।প্রতি ২০ মিনিট পর পর, ২০ ফুট দূরত্বের কোনো জিনিসের দিকে ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকুন।

মানসিক চাপ: কোনো কঠিন মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে গেল শরীর বিভিন্ন উপায়ে তার প্রতিক্রিয়া দেখায়। চোখের পাতা লাফানো মানসিক চাপের লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে। ডা. কোহেন বলেন, ‘মানসিক চাপ কমানো গেলে চোখের পাতা লাফানোর প্রবণতা কমে আসবে। বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হতে পারে, যেমন- শরীরচর্চা, ধ্যান ও বর্তমান মুহূর্তে মনোনিবেশ।’ ডা. টারবিনের মতে, ‘অত্যধিক কফি ও অ্যালকোহল সেবনেও চোখের পাতা ঘনঘন লাফাতে পারে।’

 

চোখের শুষ্কতা: ড্রাই আই বা শুষ্ক চোখের সমস্যায় চোখের পাতা কাঁপতে পারে। চোখের গ্রন্থি থেকে কোনো কারণে পানি নিঃসরণ কম হলে চোখ শুষ্ক হয়ে পড়ে। বেশ কিছু কারণে চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। চোখের পাতা লাফানো ছাড়াও শুষ্ক চোখের অন্যান্য উপসর্গ হলো- চোখ লাল হওয়া, ঝাপসা দৃষ্টি, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা ও চোখে জ্বালাপোড়া/খচখচ করা। তীব্র শুষ্কতার চিকিৎসা না করলে চোখে প্রদাহ ও কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

যখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন

 

ডা. কোহেন ও ডা. টারবিনের মতে, চোখের পাতা লাফানোর ক্ষেত্রে নিচে উল্লেখিত ঘটনাগুলোর সম্পৃক্ততা থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত-

* উভয় চোখের পাতা কাঁপলে।

* মুখমণ্ডলের অন্যান্য পেশিও সংকুচিত হলে।

* কয়েক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে।

* সময় পরিক্রমায় অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকলে।

* গালের কোনো অংশে অসাড়তা, দুর্বলতা বা ব্যথা হলে।

* গালের একপাশ বেঁকে গেলে।

* মাথাব্যথা করলে বা দৃষ্টিশক্তি কমে গেলে।