উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায় হচ্ছে পৃথিবীর সর্বাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশ চীনের সর্ববৃহৎ নৃতাত্ত্বিকগোষ্ঠী। চীনের পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ প্রদেশ ও ফসল উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র জিংজিয়াংয়ে এদের বাস।
সারা বিশ্বে মুসলিম নির্যাতনের সংবাদ মিডিয়ায় যতটা আসে, জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর চীনাদের অত্যাচার-নির্যাতনের সংবাদ খুব একটা বাইরে আসে না। সেখানকার তথ্যের ব্যাপারে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে চীন সরকার।
তবুও মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন তথ্য মিডিয়ায় প্রকাশ হয়ে যায়। তাতেই শিউরে ওঠার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়। পৃথিবীতে যে কয়টি জাতি কিংবা সম্প্রদায় সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার তাদের মধ্যে অন্যতম চীনের উইঘুর মুসলিমরা।
উইঘুর মুসলিমদের কোনো ধর্মীয় স্বাধীনতা নেই। মুসলিম পোশাক প্রকাশ্যে পরিধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহু আগে জারি করা হয়েছে। নারীদের হিজাব পরা তো দূরের কথা। দাড়ি-টুপি এক কথায় নিষিদ্ধ। ২০০৫ সাল থেকে জিনজিয়াংয়ে কোরআন ছাপানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ হানরা প্রায়ই হামলে পড়ে উইঘুর মুসলিমদের ওপর। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং রাখাইনরা অত্যাচার নির্যাতন করার পর রোহিঙ্গারা পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে; কিন্তু উইঘুর মুসলিমদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
সর্বশেষ জিনজিয়াং প্রদেশের প্রশাসন উইঘুর মুসলিমদের নির্দেশ দিয়েছে তারা যেন তাদের কাছে থাকা পবিত্র কোরআন শরীফের সব কপি, জায়নামাজ, তসবিহসহ- ইসলামিক সব উপাদান পুলিশের কাছে জমা দেয়। অন্যথায় কঠোর শাস্তি পেতে হবে উইঘুর মুসলিমদেরকে। শুধু আদেশ জারি করাই নয়, জিনজিয়াং প্রদেশের পুলিশ ও কর্মকর্তারা গ্রামে-গঞ্জ এবং শহরে- সব জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে। পুরো সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পবিত্র কোরআন শরীফ ও জায়নামাজ বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন খবরে জানা যাচ্ছে।
চীনা কর্তৃপক্ষের এই নির্দেশনার প্রত্তুত্যরে চেলসির সাবেক এবং সেনেগালের জাতীয় দলের তারকা ফুটবলার ডেম্বা বা টুইটারে দারুণ এক জবাব দিয়েছেন। যে জবাব রিটুইট হয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার। লাইক করেছেন ৩০ হাজারের বেশি। অধিকাংশই সাহসী মন্তব্যের জন্য ডেম্বা বাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সেনেগালের এই ফুটবলার এখন আবার খেলছেন- চীনের ফুটবল লিগের ক্লাব সাংহাই সেনহুয়ায়। যদিও এখন লোনে খেলছেন তুর্কি ক্লাব বেসিকতাসে।
কী জবাব দিয়েছেন ডেম্বা বা? টুইটারেই তিনি লিখেছেন, ‘যদি তারা জানত যে, মুসলিমরা মেঝেতেই নামায পড়তে পারে এবং মিলিয়ন মুসলিম কোরআন না খুলেই মুখস্ত পড়তে পারে; তখন সম্ভবত তারা (চাইনিজরা) তাদেরকে (মুসলিম) হৃৎপিন্ড খুলে তাদের কাছে হস্তান্তর করার আদেশ দিতো। ’
রোহিঙ্গা মুসলিমদের সহায়তায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মুসলমানদের অ্যাকশন নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছিলেন সেনেগালিজ এই ফুটবলার। পবিত্র হজ্ পালন শেষে আনাদোলু নিউস এজেন্সির সঙ্গে কথার বলার সময় ডেম্বা বলেন, শুধু মুসলমানই নয়, সারা বিশ্বেরই এখন দায়িত্ব মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়ার। কারণ, মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ করে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, উইঘুর এলাকাটি বিপুল তেল ও খনিজসম্পদে পূর্ণ। ১৬ লাখ ৪৬ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার (বাংলাদেশের প্রায় ১২ গুণ) আয়তনের জিংজিয়াংয়ে বসবাসরত ২.২ কোটি মানুষের ১.২ কোটিই মুসলমান। বাহ্যিকভাবে এরা স্বাধীন হলেও সত্যিকার অর্থে তারা পরাধীন। অর্ধশত বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা চীনা সরকারের নির্যাতনের জাঁতাকলে পিষ্ট। আরাকানের মতো সেখানেও মুসলমানরা নিজ দেশে, বাপ-দাদার ভিটায় পরদেশিতে পরিণত হয়েছে।