২০১৭ সালে দাভোস সম্মেলনে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির সমর্থন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপের পক্ষে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ধারালো বক্তব্য দাগ কেটেছিল বিশ্বনেতাদের মনে। সেসময় নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছুটা বিরোধিতা করলেও জিনপিংকে সমর্থন জানিয়ছিলেন বেশিরভাগ নেতা।
তবে ২০২০ সালে এসে অনেকটাই বদলে গেছে সেই চিত্র। একসময় চীনা প্রেসিডেন্টের প্রতি সহানুভূতিশীল অনেক দেশই এখন চীনবিরোধী আওয়াজ তুলতে শুরু করেছে। এসব দেশের বেশিরভাগই কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র।
চীনের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা, ভুল তথ্য প্রচার, সমালোচকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার অভিযোগগুলো নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন অনেকে। যদিও বেইজিং এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে, তবে মন গলেনি মার্কিন মিত্রদের। দিন দিন এসব দেশে চীনবিরোধী পদক্ষেপ আরও জোরালো হচ্ছে।
চীনের প্রতি অন্যান্য দেশের সম্প্রতি কঠোর হওয়ার সবচেয়ে সুস্পষ্ট কারণ অবশ্যই বিতর্কিত হংকং নিরাপত্তা আইন পাস। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে হওয়া চুক্তি মোতাবেক ২০৪৭ সাল পর্যন্ত হংকং স্বায়ত্তশাসিত থাকার কথা। তবে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইনে শহরটির সার্বভৌমত্ব ও নাগরিক অধিকার খর্ব হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বেইজিংয়ের পাস করা এ আইনের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া ছিল অনেকটাই একই ধরনের। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে গোয়েন্দাভিত্তিক অংশীদারিত্ব রয়েছে। নিউজিল্যান্ড বাদে এ জোটের বাকি চারটি দেশই হংকং নিরাপত্তা আইনের নিন্দা জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্য হংকংয়ের সব নাগরিককেই নাগরিকত্ব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। শহরটির নাগরিকদের জন্য ইতোমধ্যেই ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়া, তাদের নাগরিকত্ব দেয়ারও পরিকল্পনা করছে দেশটি। হংকংয়ের সঙ্গে অভিবাসন প্রক্রিয়া আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে কানাডা।
আইন পাসের পরপরই হংকংয়ের সঙ্গে প্রত্যপর্ণ চুক্তি বাতিল করেছে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ডও তাদের চুক্তি পুনর্বিবেচনা করছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, জাপান, চেক রিপাবলিকসহ ১৬টি দেশের আইনজীবীরা মিলে চীন বিষয়ক আন্তঃসংসদীয় জোট (আইপিএসি) গঠন করেছেন। এ জোটের সদস্যরা নিজ নিজ দেশে চীনবিরোধী পদক্ষেপের পক্ষে প্রচারণা চালাবেন। এ জোটের প্রচারণাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- হংকংয়ের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তি বাতিল এবং শহরটির নাগরিকদের ‘সেফ হ্যাভেন’ সুবিধা দেয়া।
শুধু নিন্দা-প্রতিবাদই নয়, চীনা পণ্য বয়কট বা নিষিদ্ধের পথেও হাঁটছে অনেক দেশ। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ইতোমধ্যেই চীনা টেকজায়ান্ট হুয়াওয়ের পণ্য নিষিদ্ধ বা ব্যবহার কমিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ২০২৭ সালের মধ্যে হুয়াওয়ের সব ৫জি সেবা পরিহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য।
গত মাসে সীমান্ত সংঘর্ষে ২০ সেনা প্রাণ হারানোর পর টিকটকসহ অর্ধশতাধিক চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে ভারত। টিকটক নিষিদ্ধের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্রও।
ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিষয়ক সহকারী অধ্যাপক ইউকা কোবায়াশি বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন দেশ এখন সংসদ সদস্যদের নিয়ে জাতিসংঘের বাইরে চীনবিরোধী জোট গঠন করছে। আমি এমন কিছু আগে কখনও দেখিনি।’
তিনি বলেন, ‘আগে অনেক দেশ চীনের কাছাকাছি থাকার ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু এখন আর তেমনটা হচ্ছে না।’
এ বিশেষজ্ঞের মতে, অন্যান্য দেশের এ ধরনের সমন্বিত পদক্ষেপ চীনকে বেশ বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।
সূত্র: সিএনএন
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com