চীনের ঋণে বিটিসিএলের আধুনিকায়ন

:
: ৭ years ago

নমনীয় শর্তে প্রাপ্ত ঋণে আধুনিকায়ন হচ্ছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। এ জন্য নেয়া হচ্ছে দুই হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার প্রকল্প। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর এ প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে।

ঋণের শর্ত হিসেবে প্রকল্প সংশি¬ষ্ট যন্ত্রপাতি চীন সরকারের নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান থেকেই সংগ্রহ, সংশি¬ষ্ট সেবা, কার্য ও ভৌতসেবা কিনতে হবে। প্রচলিত প্রক্রিয়ায় দরপত্র না ডেকে এসব পণ্য ও সেবা চীন থেকে সরাসরি কেনার প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

২০১৪ সালে এ প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা ছিল কিন্তু চীনের পক্ষ থেকে অর্থ না পাওয়ায় এতদিন প্রকল্পটির ভাগ্য ঝুলে ছিল। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আগামী মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত এক প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে বিটিসিএলের সক্ষমতা বাড়াতে বিদ্যমান পুরনো এক্সচেঞ্জগুলোর যন্ত্রপাতি আধুনিকায়ন করা হবে। এছাড়া কপার ট্রান্সমিশন লাইনের পরিবর্তে দুই হাজার ৩৬৭ কিলোমিটার জুড়ে বসান হবে ফাইবার অপটিক ক্যাবল।

‘ডিজিটাল সংযোগের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন সরকার এক হাজার ৮১৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা ঋণ দেবে।

জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিটিসিএল অতিরিক্ত ১৬ লাখ ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) ফোনের সংযোগ দিতে পারবে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, জনসাধারণকে কম মূল্যে প্রযুক্তিসেবার পরিধির মধ্যে আনতে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করতে চায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এর মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য আধুনিট টেলিকমিউনিকেশন সুবিধা গড়ে তোলার পাশাপাশি টেলিফোন ব্যবহারের হার বাড়ান সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশব্যাপী পুরনো টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের আধুনিকায়ন করবে বিটিসিএল। এতে ভয়েস কলের পাশাপাশি ইন্টারনেট ও ভিডিও আদান-প্রদানের সুযোগ বাড়বে। ফলে জনসাধারণ কম দামে তথ্যপ্রযুক্তির সেবা পাবে। এছাড়া এরই মাধ্যমে ই-গভর্নেন্স, ই-কমার্স, ই-এডুকেশন, ই-হেলথ, ই-কৃষি ও অন্যান্য সুযোগ বাড়বে। গুরুত্ব বিবেচনায় প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।

একনেকের অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিটিসিএল। ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হচ্ছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পুরনো প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিটিসিএল বর্তমানে ল্যান্ড টেলিফোন সেবা দিয়ে আসছে। এসব লাইনে ভয়েস কল (কথোপকথন) ছাড়া অন্য কোনো সেবা দেয়া যাচ্ছে না। সময়ের ব্যবধানে ইন্টারনেট, ডাটা ও ভিডিও আদান-প্রদানের চাহিদা বাড়ছে। এ চাহিদা মেটাতে বিটিসিএল দেশব্যাপী নেটওয়ার্কের আধুনিকায়ন করতে হবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য এনজিএন নেটওয়ার্ক (এনটিএন) শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। এক হাজার ৮৬১ কোটি ১৫ লাখ টাকার প্রকল্পটিতে চীন সরকার এক হাজার ৪৫৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য ছিল। নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেলেও চীন সরকার ঋণ চুক্তি না করায় প্রকল্পটি বাতিল করা হয়। পরবর্তী সময় দেশটির সরকার অর্থায়নে রাজি হওয়ায় নতুন নামে বাড়তি ব্যয়ে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে।

সময়মতো কাজ শুরু না হওয়ায় প্রকল্পটির ব্যয় ৭১২ কোটি ২৫ লাখ টাকা বেড়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশনের পর্যালোচনায় উঠে এসেছে। বাড়তি ব্যয়ের ৩৪৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা দেয়া হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। অবশিষ্ট ৩৬৪ কোটি সাত লাখ টাকা বাড়তি সহায়তা হিসেবে দেবে চীন। এ বিষয়ে চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, আমদানি কর ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ১৩৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা। পূর্ত নির্মাণ কাজে ব্যয় বাড়বে ৭৭ কোটি ৬ লাখ টাকা। এছাড়া মূল প্রকল্পে সাত লাখ নতুন সংযোগের সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা থাকলেও এবারের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সক্ষমতা ১৬ লাখে উন্নীত হবে। এক হাজার ৪৫২ কিলোমিটারের পরিবর্তে ফাইবার অপটিক লাইন বসবে দুই হাজার ৩৬৭ কিলোমিটারজুড়ে।

ইআরডি সূত্রে আরও জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নমনীয় শর্তে চীন থেকে ঋণ পাওয়া যাবে। ঋণের শর্ত হিসেবে প্রকল্প সংশি¬ষ্ট যন্ত্রপাতি চীন থেকে আমদানি করতে হবে। চীন সরকারের নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান থেকেই পণ্য, সংশি¬ষ্ট সেবা, কার্য ও ভৌতসেবা কিনতে হবে। প্রচলিত প্রক্রিয়ায় দরপত্র না ডেকে এসব পণ্য ও সেবা চীন থেকে সরাসরি কেনার প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।