চিড়িয়াখানায় নতুন ৮ অতিথি

:
: ৬ years ago

রাজধানীর মানুষের ঈদ বিনোদনে মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় নতুন আট অতিথি আনা হয়েছে। পাশাপাশি ঈদ উৎসব বাড়াতে চিড়িয়াখানাকে করা হয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। থাকছে স্বল্পমূল্যে খাবারের ব্যবস্থা। এছাড়া জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।

জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য ঈদের চাইতে এবার অনেক ভালো প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে নতুন করে কয়েকটি প্রাণি আনা হয়েছে। তার মধ্যে চারটি আফ্রিকান সিংহ ও দুইটি কালো ভাল্লুক রয়েছে। আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছে ছোট দুইটি উট। এছাড়াও অষ্ট্রেলিয়ার থেকে কালো ক্যাঙ্গারু আনা হবে; যা দেখে ছোট-বড় সকল বয়সী দর্শনার্থীরা বিভিন্ন বিনোদন উপভোগ করবেন।’

মঙ্গলবার (২১ আগস্ট) চিড়িয়াখানায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো চিড়িয়াখানা জুড়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজে ব্যস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থী চোখে পড়ার মতো না থাকলেও দুর্গন্ধহীন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেখা গেছে। প্রকৃতি যেন চায় ঈদ বিনোদনে দর্শনার্থীদের জন্য চিড়িয়াখানাকে পরিচ্ছন্ন স্থানে রূপান্তর করতে। সোমবার (২০ আগস্ট) দিবাগত রাতের বৃষ্টি সকল প্রাণি শেড ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে দিয়েছে।’

মঙ্গলবার রাতে পরিবার নিয়ে বাড়ি যাবেন মিরপুরে ১১ নম্বরে বসবাসকারী ব্যাংকার মো. মোশাররফ হোসেন। রাজধানী ছেড়ে যাওয়ার আগে ঈদ বিনোদনে দুই সন্তান ও ভাতিজাকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘টিকিট কাটা আছে, আজ রাতে বাড়ি যাব। ঢাকা ছাড়ার আগে বাচ্চাদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি ১৯৯৫ সালে প্রথম চিড়িয়াখানায় এসেছিলাম। তবে এখন সে সময়ের চাইতে বেশি প্রাণি বাড়ানো হয়নি। তবে আগের চাইতে দুর্গন্ধমুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি নতুন কিছু প্রাণিও যোগ হয়েছে।’

চিড়িয়াখানায় এসে নতুন প্রাণি দেখতে পেয়ে তার সন্তানদের মধ্যেও ছিল এক ধরনের উদ্দীপনা।

তবে বেড়াতে আসা কিছু দর্শনার্থী চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের নানা ধরনের দায়িত্বহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরেন। কয়েকজন দর্শনার্থী বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চিড়িয়াখানায় নতুন প্রাণি বাড়ানো হচ্ছে। অথচ যেগুলো আছে তাদের মধ্যে অনেক প্রাণিকে দেখে রোগা ও ক্ষুধার্ত মনে হয়। বাইরে থেকে কেউ কিছু দিলে দৌঁড়ে এসে খেয়ে নেয়। আরও খাবার পাওয়ার জন্য তাকিয়ে থাকে।

তাদের অভিযোগ, খাঁচার বাইরে বানর ঘুরতে দেখে অনেকের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও সহায়তা কেন্দ্রে ফোন করলেও কেউ ধরেনি। দায়িত্বরত কর্মচারীদের ডাকলেও তাদের কেউ গুরুত্ব দেয়নি। পরে দর্শনার্থীর ভিড় দেখে পরে বানরটি গাছের মধ্যে পালিয়ে যায়।

রাজধানীতে বসবাসকারী মানুষের ঈদ বিনোদনের প্রধান কেন্দ্রস্থল মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা। বিশেষ করে ছোটদের জন্য এই বিনোদন কেন্দ্রটি অন্যতম হলেও ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে এখানে সকল বয়সী মানুষ আসেন ঘুরে বেড়াতে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবার ঈদে সকলের জন্য প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে সিসিটিভিসহ চার স্তারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আলাদা পার্কিং সুবিধা তৈরি করেছে কর্তৃপক্ষ। ঈদে উপচেপড়া মানুষের ভিড়ে প্রাণিদের ওপর বাড়তি চাপ থাকে। এসব প্রাণিদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে চারজন পশু ডাক্তার নিয়োজিত রয়েছেন।

চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা জানান, ঈদে উপচেপড়া দর্শনার্থীদের সকল সুবিধা নিশ্চিত করতে চিড়িয়াখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমন্বয়ে ১১টি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তারা আগত দর্শনাথীদের সুবিধা দিতে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।

তথ্য মতে, দেশের সবচাইতে বড় ১৮৬ একর জায়গা নিয়ে গঠিত মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা। ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে আসেন হাজারও দর্শনার্থী। চিড়িয়াখানায় রয়েছে মাংসাশী আট প্রজাতির ৩৮টি প্রাণি, ১৯ প্রজাতির বড় প্রাণি (তৃণভোজী) ২৭১টি ও ১৮ প্রজাতির ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী ১৯৮টি।

এছাড়াও রয়েছে ১০ প্রজাতির সরীসৃপ ৭২টি, ৫৬ প্রজাতির ১১৬২টি পাখি, এ্যাকুরিয়ামে রক্ষিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও ১৩৬ প্রজাতির ২৬২৭টি প্রাণি। সবমিলিয়ে রয়েছে ১৩৭টি পশু-পাখির খাঁচা।

চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. নজরুল ইসলাম জানান, এবার ঈদের ছুটিতে চিড়িয়াখানায় প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক দর্শনাথীর আগমন হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। সে লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তাই স্বল্পমূল্যে পর্যটনসহ বিভিন্ন ধরনের খাবারের রেস্টুরেন্ট বসানো হয়েছে।

‘বাইরে থাকা বানরটি শেডের ভেতরের নয়। এটি বাইরে ঘোরাফেরা করে’- এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেটিকে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঈদে বাড়তি সুবিধা দিতে বিভিন্ন প্রাণির খাঁচা সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া কন্ট্রোল রুম ও তথ্য কেন্দ্রের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। চিড়িয়াখায় এসে দর্শনার্থীরা যাতে কাঙ্ক্ষিত বিনোদন পায় সেটি মাথায় নিয়ে প্রতিনিয়ত চিড়িয়াখানা সংস্কার করা হচ্ছে।

সম্প্রতি চিড়িয়াখানায় অনেক প্রাণির প্রজনন হয়েছে উল্লেখ করে কিউরেটর বলেন, ‘এদের মধ্যে কয়েকটি প্রাণির বাচ্চাগুলো বড় হয়ে যাওয়ায় নতুন শেড তৈরি করে তাদের আলাদা করে রাখা হয়েছে।’

বন্যপ্রাণিদের নতুনভাবে জানতে ও ঈদ বিনোদন উপভোগ করতে সকল বয়সী মানুষদের চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসার আহ্বান জানান কিউরেটর।