রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেবা প্রদানকারী চিকিৎসকরাও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীকে মশা কামড়ালে সেই মশার মাধ্যমে চিকিৎসকদেরও ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ডেঙ্গু রোগীদের সাধারণত মেডিসিন ও শিশু বিভাগের চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন। স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও মানবিক বিবেচনায় ডেঙ্গু রোগীর শয্যাপাশে থেকে নিবিড় চিকিৎসা প্রদান করছেন এসব চিকিৎসক।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ শনিবার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, সরকারি-বেসরকারি উভয় হাসপাতালে প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডেঙ্গু রোগীদের শয্যাপাশে থেকে দীর্ঘসময় নিবিড়ভাবে চিকিৎসা প্রদান করতে হয় বলে তাদেরও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
এছাড়া প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোগীকে সেবা প্রদান করতে গিয়ে মেডিসিন ও শিশু বিভাগের চিকিৎসকরা অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। এ কারণে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় শুধু মেডিসিন বা শিশু বিভাগের চিকিৎসক নন, অন্য বিভাগের চিকিৎসকদেরও পালাক্রমে দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হাসপাতাল প্রধানদের নির্দেশনা দেবেন বলে জানান তিনি।
ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকরা যেন নিজেরাই অসুস্থ হয়ে না পড়েন সে জন্য শুধু মেডিসিন বা শিশু বিভাগের চিকিৎসক নন, অন্যান্য বিভাগের সিনিয়র-জুনিয়র চিকিৎসকদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি হাসপাতালে উপচেপড়া ডেঙ্গু রোগী। হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে সজ্জা ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো হাসপাতাল রোগী ভর্তি না করে ফিরিয়ে দিচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মশারির নিচে থাকার জন্য চিকিৎসকরা নির্দেশনা দিলেও গরম লাগার অজুহাতে রোগীদের অনেকেই মশারি টানিয়ে থাকছেন না। এর ফলে চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকরা যেন ডেঙ্গু আক্রান্ত না হন সে জন্য সাবধানতাস্বরূপ চিকিৎসকদের ফুলহাতা শার্ট পরিধান করার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
চলতি মৌসুমে (১ জানুয়ারি থেকে ২৭ জুলাই) দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৫২৮ জন নারী, পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসকদের আন্তরিক সেবার ফলে ইতোমধ্যেই হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করে সাত হাজার ৮৪৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।